পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ
বিশ্বভারতীর নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন– এমন দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতরে চিঠি পাঠালেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
বুধবার এই চিঠির সারমর্ম প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্বভারতী জুড়ে হইচই পড়ে যায়। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অধ্যাপকবৃন্দ সকলেই এক বাক্যে দাবি করেন কেন্দ্রীয় বাহিনী বিশ্বভারতীতে পা রাখলে গুরুদেবের গরিমা যেটুকু বেঁচে আছে সেটাও ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, চিঠিতে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী লিখেছেন বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র ভবন-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার প্রয়োজন।
পাশাপাশি তিনি চিঠিতে অভিযোগ করেছেন যে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বভারতীর কর্মী সংগঠনগুলো আন্দোলন বিক্ষোভের নামে তাকে হেনস্থা করেছে, তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তাই অতি সত্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সিআইএসএফ বাহিনী যাতে মোতায়েন করা হয় সেই বিষয়েই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানান বিশ্বভারতীর উপাচার্য।
আরও পড়ুনঃ হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে মিছিলে বাধা পুলিশের
বিশ্বভারতীর বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য। তিনি জানান, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর কর্মী, অধ্যাপকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে উপাচার্যকে ঘেরাও করলে নিরাপত্তাকর্মীরাও সেই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন।
বিশ্বভারতীর উপাচার্যের এই চিঠি নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিশ্বভারতীর প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন এ ধরনের নিরাপত্তা দিয়ে কতটা নিরাপত্তা বলয় বিশ্বভারতীতে তৈরি করা যাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ছাত্রছাত্রী এবং অধ্যাপক কর্মীদের কাছে উপাচার্য নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন এটা অত্যন্ত হাস্যকর একটি বিষয়।
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য ডক্টর স্বপন দত্ত বলেন, তাঁর কার্যকালে একাধিকবার ছাত্র বিক্ষোভ এবং কর্মী বিক্ষোভ হয়েছিল কিন্তু কখনওই ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের কাছে তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেননি উল্টে সর্বদা তিনি সহযোগিতাই পেয়েছেন।
বিশ্বভারতী কর্মীসভার বলেন, বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী একজন অত্যন্ত নিম্নরুচি, নিম্ন মানসিকতার মানুষ। উনি বিশ্বভারতীতে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চাইছেন। গুরুদেবের আশ্রমে এসে যিনি ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের কাছে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন বলে দাবি করেছেন, তাঁকে উপাচার্য থাকা মানায় না।
বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত চিঠি নিয়ে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি এবং মেসেজ করা হলে তারও কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। বিশ্বভারতীতে উপাচার্য পদে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আসীন হওয়ার পর থেকেই ওঁর বিরুদ্ধে নানান ধরনের খামখেয়ালির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
বিশ্বভারতী জুড়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছে চন্দন গাছ চুরি। খোদ উপাচার্যের বাড়ির পাশেই দুষ্কৃতীরা চন্দন গাছ কেটে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় কোনও কারণে কাটা চন্দন গাছটি ফেলে পালিয়ে যায়।
কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই চোর ধরা পড়েনি। চলতি মাসে চন্দন গাছের চুরি আটকাতে নিরাপত্তাকর্মীদের শূন্যে গুলি চালাতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়ভার কিন্তু উপাচার্যের কাঁধেই আসে। কিন্তু তিনি সে দায়ভার নিতে কোনও ভাবেই রাজি নন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584