শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
ক’দিন আগেই দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পুলিশের সঙ্গে বন্দিদের হয়েছিল মারাত্মক রকমের খণ্ডযুদ্ধ। ২১শে মার্চ ওই ঘটনায় ৪ বন্দি মারা যাওয়ার পাশাপাশি জখম হয়েছিলেন ২৪ জন বন্দি এবং ৮ পুলিশকর্মী। কিন্তু বাইরের দুনিয়ার বাস্তব রূপ জানতে পেরে আমূল পাল্টে গিয়েছেন দমদম জেলের সেই বন্দিরাই। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ সাহায্য করতে চান তাঁরা। তাঁদের এই ইচ্ছায় সম্মতি জানিয়েছে কারা দফতরও।

শুধু দমদম জেলই নয়, মেদিনীপুর জেলেও চলছে অর্থ সংগ্রহের কাজ।সংশোধনাগারে নিজেদের পরিশ্রমের উপার্জিত অর্থ তারা সংগ্রহ করে রাখছেন।দু-একদিনের মধ্যেই তা তুলে দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ ত্রাণ তহবিলে। বাইরের দুনিয়ার মানুষজনের ভালোর জন্য সেটাই হবে তাদের অবদান।
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর জেল বন্দিদের করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দেয় জেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই নিয়ে ভুল বার্তা যায় জেলবন্দিদের কাছে। ইচ্ছা করে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের প্যারোলের ছাড় দিচ্ছে না, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না, এটা মনে করে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সকলে। আর তার জেরেই ২১শে মার্চের পুলিশ-বন্দিদের খণ্ডযুদ্ধে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দমদম জেল চত্বর।
বিচারাধীন, সাজাপ্রাপ্ত বন্দীরা মিলে ভাঙচুর করে৷ পুলিশ ও কারা কর্মীদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইঁটও৷ ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যুও হয়৷ কিন্তু মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যেই যেন পালটে গেল সব কিছু৷ জেল সূত্রে খবর, বন্দিদের জেলের মধ্যেই প্রথমে খবরের কাগজ এবং পরে টেলিভিশনের পর্দায় বিশ্বজুড়ে মহামারীর বাস্তব পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে। তাদের প্রতি যে কোনও অন্যায় করা হচ্ছে না, সেটাও বোঝানো হয়েছে। তারপরেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বন্দিরা একসঙ্গে হয়ে আলোচনা করে এই খারাপ সময়ে রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জেল সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, কারা দফতরের তরফে এরকম কোনও অর্থ সাহায্যের কথা বলা হয়নি, বরং এটা বন্দিদের নিজেদের সিদ্ধান্ত। তবে বন্দিদের তরফে এই বিষয়টি জানানো হলে কারা দফতরের কর্তারা এতে সম্মতি দেন।
এই বিষয়ে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এডিজি (কারা) পীযূষ পান্ডে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ সাহায্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দমদম সংশোধনাগারের বন্দীরা ৷ সেই বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট আবেদনও জানিয়েছে। তবে কত টাকা তারা দেবে তা এখনও চূড়ান্ত জানায়নি ৷ দু-একদিনের মধ্যেই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’
শুধু দমদম নয়, একই পথে হাঁটছে মেদিনীপুর জেলের বন্দীরাও। ওই জেলের ১২ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী ৬০ হাজার টাকা ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে পাঠাচ্ছে। এভাবে আরও বেশ কয়েকটি জেলের বন্দিরাও একই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলে জানিয়েছেন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আরও কয়েকটি জেলের বন্দীরা তাঁদের নিজস্ব রোজগারের টাকা থেকে ওই অর্থ সাহায্য করছেন। এই বিষয়ে তাঁরা আবেদন জানিয়েছে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। সেগুলি সবই বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। বন্দিদের এই উদ্যোগে খুশি মুখ্যমন্ত্রীও।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584