নিজস্ব সংবাদদাতা,কলকাতাঃ
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ এবং পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলনকে আরো জোরদার করার ডাক দিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি আজ মিছিলের আয়োজন করে। লেনিন মূর্তির পাদদেশ থেকে একাডেমি অফ ফাইন আর্টস অবধি মিছিলে পা মেলাল তরুণ তরুণী এবং অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত মানুষেরা। মিছিলে স্লোগান ওঠে “যশোর রোডের গাছ কাটা চলবে না”, “ভাঙর পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের নেতা অলীক চক্রবর্তীকে মুক্তি দিতে হবে”, “জল-জঙ্গল-জমিকে বহুজাতিকের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত ব্যর্থ করুন”, এছাড়াও ধিক্কার জানান হয়েছে ভোপাল, তুটিকরিন ও গরচিরলির গণহত্যাকে।
মিছিল শেষে একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে পথসভায় বক্তব্য রাখেন পরিবেশ আন্দোলনকারীরা, গণ আন্দোলনের কর্মীরা। ‘যশোর রোডের গাছ বাঁচাও কমিটি’ দাবি তোলে ঐতিহ্যশালী যশোর রোডের সমস্ত এলাকাকে বায়ো ডাইভার্সিটি হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করতে হবে।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী অধিকার আন্দোলন কর্মীদের বক্তব্য থেকে উঠে আসে “সরকারী উন্নয়নের প্রচার আসলে মানুষ মারার উন্নয়ন, দেশের জল-জঙ্গল-জমি লুঠের নয়া চক্রান্ত। ১৯৫০ এর আগে ‘ডেভেলপমেন্ট’ নামে এত প্রচার ছিল না।” আন্দোলনকারীরা তাই তাদের বক্তব্যে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন আমেরিকা তথা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি আগ্রাসনকে।
পথসভার বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে কেন্দ্র সরকারের বৃহৎ কর্পোরেটগুলোর কাছে বিকিয়ে যাওয়ার কথা। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের গরচিরলিতে আদিবাসীদের জমি লুঠ করে তাদের এলাকা থেকে উচ্ছেদের জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মিলিত আক্রমণ নামিয়ে এনেছে বলে সভায় বক্তব্য রাখেন অনেকে। সরকার প্রতিবাদী জনগণকে আক্রমণ করছে যার সবচেয়ে বর্বর নমুনা গরচিরলি এবং তুটিকরিন। তুটিকরিনে পরিবেশ আন্দোলনে জড়ো হওয়া মানুষদের ওপর পুলিশি আক্রমণ হয়, যাতে প্রাণ হারান ১৩ জন আন্দোলনকারী।
এই প্রসঙ্গে অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা রাজ্য সরকারের মানুষখেকো উন্নয়নের সম্পর্কে ভাঙরের কথা তুলেছেন। “অলীক চক্রবর্তীকে অন্যায়ভাবে এরেস্ট করেছে তৃণমূল সরকার। ভাঙরের মানুষ পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে থাকলেও রাজ্য সরকার উন্নয়নের নামে সেখানে বাইক বাহিনী, লোকাল গুন্ডাদের দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু ভাঙরের মানুষ, এর বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জারি রেখেছেন।” বললেন, এপিডিআরের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সোমনাথ সাহা। ভবাদীঘি বুজিয়ে তার ওপর রেললাইন পাতার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষজন প্রতিরোধ করে তা আটকে দেয়। যশোর রোডের রাস্তা সম্প্রসারণ করার নামে ঐতিহ্যশালী গাছগুলোকে বাঁচানোর লড়াই অনেকদিন ধরেই করছে ওই এলাকার জনসাধারণ। এই প্রসঙ্গে সায়ন যিনি নিজে ওই এলাকার বাসিন্দা এবং আন্দোলনকারী বললেন, “টাকি রোডে দেগঙ্গা ব্লকে শিশুরা ডেঙ্গুতে মারা যায়। সরকার সেখানে একটিমাত্র হসপিটাল রেখেছে তার কোনো উন্নয়ন না করে রাস্তা চওড়া করছে।”
“আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে নেতা, মন্ত্রী, আমলারা পরিবেশ বাঁচানোর কথা বলছে বিভিন্ন মঞ্চে, ছাত্রদের পরিবেশ বিজ্ঞান এখন বাধ্যতামূলক পাঠ্য কিন্তু, পরিবেশকে বাঁচানোর আন্দোলনগুলোকে সরকার বিভিন্নভাবে আক্রমণ করছে।” বললেন আর এক আন্দোলনকারী।
“তবু মানুষের সংঘবদ্ধ আন্দোলন দিকে দিকে সকারের এই অপচেষ্টা প্রতিহত করছে মানুষ” বললেন সোমনাথ সাহা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584