শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
একসময়ে নিজস্ব ক্ষমতাবলে ভারতীয় উপমহাদেশে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য তৈরি হয়েছিল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ। কিন্তু সংগঠনের কার্যকলাপ এবং গতিধারা নিয়ে ক্ষোভ জমতে থাকে খোদ সংগঠনের অন্দরেই। আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে যায় সালাউদ্দিন সালেহিন পন্থী আদি জেএমবি এবং মহম্মদ কওসর ওরফে বোমা মিজান ঘনিষ্ঠ নব্য জেএমবি সংগঠন।
এদের মধ্যে সালাউদ্দিন সালেহীন পন্থীরা আল-কায়েদার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এবার বড় নাশকতার ছক কষেছিল। এনআইএ গোয়েন্দাদের হাতে একটি অডিও টেপে অন্তত সেই ঘটনারই তথ্য প্রমাণ মিলেছে।
এনআইএ গোয়েন্দাদের দাবি, আল-কায়দার এই উপমহাদেশে কোন মডিউল ছিল না। পাকিস্তানে বসেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারা সদস্য সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছে। আর এই রাজ্যের যুবক-যুবতীরা সেই ধর্মমত আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরাই তৈরি করছে মডিউল। গোয়েন্দাদের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘লোন উলফ’ মডিউল।
আরও পড়ুনঃ মুর্শিদাবাদ, এর্নাকুলামে এনআইএ-র বিশেষ অভিযান, ধৃত ৯ জঙ্গি
মুশির্দাবাদ এবং কেরালা থেকে যে ৯ জনের দলটি ধরা পড়েছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী দিল্লি সহ দেশের আরো বিভিন্ন জায়গায় পরপর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের সংগঠনের ক্ষমতা জাহির করা। কিন্তু এদেশে মূল সংগঠন না থাকায় সেই কাজ তারা করতে পারছিল না।
এদিকে সংগঠনের রেষারেষির জেরে কওসর ঘনিষ্ঠ নব্য জেএমবি-কে পর্যদুস্ত করে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টায় ছিল আদি জেএমবি সংগঠন বা সালাউদ্দিন সালেহীন ঘনিষ্ঠ সংগঠন। সেই কারণে ভারতে নিজের সংগঠন বিস্তার করতে চাওয়ায় আল-কায়েদার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ায় সেই আদি জেএমবি সংগঠন।
আরও পড়ুনঃ ১৪টি সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন সমাপ্ত
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর ২০১৫ সালে জাওয়াহিরি ঘোষণা করেন আল কায়দার উপমহাদেশ শাখার নতুন সংগঠনের নাম কায়দাতুল জিহাদ। মনে করা হচ্ছে এর পেছনে পুরোপুরি মূল সমর্থন ছিল সালাউদ্দিন সালেহীন গোষ্ঠী আদি জেএমবি সংগঠনের।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণে প্রচুর ধরপাকর হলেও সালাউদ্দিন, বোমারু মিজানদের টিকিটিও ছুঁতে পারেননি গোয়েন্দারা । এর মাঝে ওই জঙ্গি সংগঠনের হয়ে যায় আড়াআড়ি বিভাজন। রাগচটা স্বভাবের কওসর এবং হাতকাটা নাসিরুল্লাহ অন্তর্দ্বন্দ্ব এক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছিল ।
আরও পড়ুনঃ এই রাজ্যে পুলিশ প্রশাসনের দক্ষতাকে ক্ষয় করছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ- অধীর
পরে মতাদর্শের পার্থক্য দেখা যায়। হাত কাটা নাসিরুল্লাহ বিশ্বাস করত ধীরেসুস্থে নয়, জিহাদ করতে হবে দুরন্ত গতিতে। সালাউদ্দিনের বিশ্বাস আবার ছিল অন্য। নাসিরুল্লাহ সঙ্গে বাংলাদেশের আরও কিছু জঙ্গি নেতার মিলে যায়। সে দেশে তৈরি হয়ে যায় নব্য জামাত বা নব্য জেএমবি। তারা আইসিস-র মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে পড়ে।
শোনা যায়, আল-কায়দার হয়ে আফগান যুদ্ধ লড়ে আসা সালাউদ্দিন আঁকড়ে ধরেছিল লাদেনের পথ। আর সেই পথেই আল-কায়দার উপমহাদেশের সংগঠন কায়দাতুল জিহাদের ছত্রছায়ায় নিয়ে আসে জামাতুল মুজাহিদিনকে। এদিন মুশির্দাবাদে যে জঙ্গিরা ধরা পড়েছে, তারা সালাউদ্দিনের হাত ধরেই কায়দাতুল জিহাদের খাতায় নাম লিখিয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, জিহাদ সংক্রান্ত বইপত্র ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে অডিয়ো টেপ। সংগঠনে নিয়ে আসার জন্য টার্গেট থাকা মুসলিম যুবকদের দাওয়াত দেওয়ার পর, এই অডিয়ো টেপ শুনিয়ে তাদের মগজ ধোলাই করা হত বলে জানা যাচ্ছে ।
সেখানে বাংলা উচ্চারণে বলা হচ্ছে, “আমি সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়কে সাধারণভাবে জামাত কায়দাতুল জিহাদের একটি নতুন শাখা জামাত কায়দাতুল জিহাদ উপমহাদেশ প্রতিষ্ঠার মোবারকবাদ জানাচ্ছি। এবং পাকিস্তান, ইন্ডিয়া সহ পুরো উপমহাদেশের মুসলমানদের বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রাণপ্রিয় আমির শাইখ আইমান আল-জাওয়াহিরি হাফিজুল্লাহের দেওয়া নির্দেশনাকে জামাতের সমস্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার প্রত্যয় মাওলানা আসেম উমর হাফিজুল্লাহের নেতৃত্বে একত্রিত হওয়ার মোবারক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর উদ্দেশ্য আমেরিকা এবং তার সহযোগীদের দাসত্বে আবদ্ধ সমগ্র পৃথিবীর সমস্ত কুফরি শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। এই শাসনতন্ত্রকে শিকড় সহ চিরতরে উৎখাত করার চেষ্টা করা। আর এই কুফরি শাসনব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে কালিমায়ে তাওহীদের সমুন্নত করা। কেন না এটাই সেই অভিশপ্ত শাসন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে খিলাফতে উসমানিয়াকে ভেঙে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে।”
ফলে আজিজ এমপি সংগঠনকে ধরে রাজ্যে আর কোথায় কোথায় আল-কায়দা নিজের ভারতীয় শাখা সংগঠন বিস্তার করেছে আপাতত তারই খোঁজ চালাচ্ছেন এনআইএ গোয়েন্দারা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584