নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
ইন্দ্রাণী চক্রবর্তীর পরিচালনায় তৈরি হচ্ছে নতুন বাংলা ছবি ‘ছাদ’। পরিচালকের এটিই প্রথম বড় পর্দার ছবি। এই ছবিতে ছাদ একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে জানালেন ছবির চরিত্রাভিনেতা রণজয় বিষ্ণু। তাঁকে এখানে দেখা যাবে একটি পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকায়। তাঁর চরিত্রের নাম অলোক।
রণজয় ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ। একই সঙ্গে মডেলিং-এও তাঁর ভালই নামডাক। নানা ধরনের চরিত্রে অভ্যস্ত রণজয়। কিন্তু কেন একজন নবীনতমা পরিচালকের গড়া চরিত্র অলোকের প্রতি আকৃষ্ট হলেন তিনি? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ফোন ঘোরাই তাঁকে। শুরুতেই জিজ্ঞেস করি, কেমন আছো?
সদাহাস্যময় চরিত্র বজায় রেখেই রণজয় জানান- “খুব ভাল আছি। কাজ করছি, রোজগার করছি, খাচ্ছি, নিজের একটা গাড়িও আছে। তাই ‘এই চলছে’, ‘আছি কোনওরকম’ এই ধরনের শব্দগুলো আমি বলতে পারি না। তা হলে নিজেকে ঠকানো হবে। নিজের কাজকে অসম্মান করা হবে। কত মানু্ষের হাতে কাজ নেই, কাল কী হবে তারা জানে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি তো ভালই আছি। তাই মিথ্যে বলব কেন। সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি ভীষণরকম, যেদিন আমার মতো সবাই এক গাল হেসে বলবে- ভাল আছি।”রণজয় সুবক্তা।
ফলে, ওঁর কাছ থেকে গোছানো উত্তর পাব সেই বিশ্বাস থেকে জানতে চাই- অলোক চরিত্রটা কোন জায়গায় তোমাকে নাড়া দেয় যে এমন একজন খুঁতখুঁতে মানুষ হয়েও চরিত্রটা গ্রহণ করলে? রণজয় জানান- ” একদম সত্যি কথা বলি, প্রথমে আমার স্ক্রিপ্টটা এক ঝলক পড়ে পছন্দ হয়নি। অলোক চরিত্রটার মধ্যে বিশেষ কিছু পাইনি। বড্ড ফ্ল্যাট একটা ক্যারেক্টার। আমার বড় কিছু করার নেই চরিত্রটাতে। তাই স্ক্রিপ্টটা পুরো না পড়েই বলি, আমি কাজটা করব না।
আরও পড়ুনঃ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হল ‘ছাদ’-এর
এরপর প্রোডাকশন থেকে আমায় ডেকে পাঠানো হয়। আমি যাই। ইন্দ্রাণী দি আমায় পুরো চরিত্রটা বোঝান। ওনার কাছে খুব পরিষ্কার যে উনি ঠিক কী চান অলোক চরিত্রটার মধ্যে। গোটা গল্পটাই ওনার কাছে খুব ক্লিয়ার। যেভাবে আমাকে সেদিন বোঝালেন, তাতে আমি আর না বলতে পারিনি। আমি সেদিনই বুঝেছিলাম এই চরিত্রটা করতে গিয়ে আমি অনেককিছু শিখতে পারব। স্ক্রিপ্টটা ভাল করে পড়ার সময় পাওয়ার পাইনি। তার আগেই ফ্লোরে চলে গেছি। ইন্দ্রাণী দি যেভাবে গাইড করছেন সেভাবেই করছি। একটা শট যতক্ষণ না নিজের পছন্দ হচ্ছে ততক্ষণ নিয়ে চলেছেন। ঠিক যেমনভাবে নিজে চরিত্রটাকে ভাবছেন সেটাই চাইছেন।
অভিনেতার কোনও মুভমেন্ট মেনে নিচ্ছেন না তা কিন্তু নয়। কিন্তু কেন সেই মুভমেন্ট তার যথার্থ যুক্তি চাইছেন তিনি। কোথায় শ্বাস নেব আর কোথায় ছাড়ব সেটাও বলে দিচ্ছেন দিদি৷ এদিক ওদিক হলেই প্রশ্ন করছেন। এতটাই পারফেকশনিস্ট এই ছবির পরিচালক৷ প্রত্যেকটা পোশাকের রং, জুতো কেমন হবে সবই গল্পের চরিত্র মেনে ঠিক করেছেন তিনি। এমনকী জুতোর সঙ্গে কী রঙের মোজা পরা হবে সেটাও ঠিক করে দিচ্ছন দিদি। আমাকে এই চরিত্রের জন্য নিজের হাঁটার ঢং পাল্টাতে হয়েছে। অনেককিছু শিখছি এই অলোকের দৌলতে ইন্দ্রাণী দি’র কাছ থেকে।”।
আরও পড়ুনঃ স্কুলজীবনের নস্ট্যালজিয়া ফিরবে ‘আবার বছর কুড়ি পরে’
এমনটা কি শুধুই রণজয়ের সঙ্গেই করা হচ্ছে নাকি পাওলির সঙ্গেও? রণজয় জানান, “ইন্দ্রাণী দি’র কাছে কে বেশিদিন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে, কার সাফল্য বেশি, কে সিনিয়র কে জুনিয়র এই সব ম্যাটার করছে না। পাওলি দি’কেও আমার মতোই ট্রিট করছেন ইন্দ্রাণী দি৷ আর অবাক হলাম পাওলি দি’র মতো অমন একজন অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী দি’র প্রত্যেকটা কথা মেনেও নিচ্ছেন। পাওলি দি ইন্দ্রাণী দি’র অনেক আগে থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে। এবং একজন সফল অভিনেত্রী। তিনিও বুঝতে পারছেন ইন্দ্রাণী দি’র প্রত্যেকটা মুভমেন্ট কতখানি সিগনিফিক্যান্ট।”
রণজয় আরও বলেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যকে শেখানোর লোক বড় কম। বরং সমালোচনা করার লোক বড্ড বেশি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইন্দ্রাণী দি’র মতো একজন শিক্ষকের বড় প্রয়োজন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রত্যেকটা শট ভেঙে ভেঙে বোঝাচ্ছেন। এমনটা আগে কখনও দেখিনি। স্ক্রিপ্ট খুব বেশি পড়ার বা বোঝার আগেই ফ্লোরে গেছি।
কিন্তু কাজটা করতে এতটুকু অসুবিধা হচ্ছে না দিদির দৌলতে৷ স্ক্রিপ্টটা যেদিন শুনতে গেছিলাম সেদিন ইন্দ্রাণী দি’র কাছ থেকে এমন কিছু শুনি যা আগে শুনিনি৷ সেই শোনা অনেকটাই শেখায়। যাকে বলে শিক্ষণীয়। এই শেখাগুলোর খুব দরকার একজন অভিনেতার।
পাওলির সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক দেখানো হবে ছবিতে? “বন্ধুত্বের৷ দুজন খুব ম্যাচিওরড মানুষের ম্যাচিওরড কথাবার্তা চলে৷ কেউ এটাকে প্রেম বলবে, কেউ বলবে একে অপরের প্রতি গুণগ্রাহিতা আবার কেউ ভাববেন প্রতিভাকে সামনে আনার প্রচেষ্টায় ঘটছে যা যা ঘটছে। সবাই তো সবকিছুকে এক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন না। এই ছবিতে ত্রিকোণ প্রেম খুঁজতে গেলে মুশকিল। সেটা নেই যতদূর জানি। পাওলি দি’কে এখানে সুলেখিকা হিসেবে পাবেন দর্শক। বাড়ির ছাদ তার একান্ত জায়গা। সেখানেই গড়ে ওঠে তার একের পর এক সৃষ্টি। এরপর একদিন অলোকের দৌলতে সে নিজের একটা শক্তপোক্ত পরিচয় গড়ে তোলে।
আসলে অলোক একটা উপলক্ষমাত্র। পাওলি দি যে চরিত্রটা করছেন আমার নাম মনে পড়ছে না, সেই চরিত্রটা আসলে নিজেই খুব গুণী। তার সত্যিই সম্মান পাওয়া উচিত। সত্যিই একদম নিজের শক্তপোক্ত একটা পরিচয় পাওয়া উচিত।”
শুটিং কি শেষ? রণজয় জানান- ” না না। বাকি আছে। প্রথম দফার শেষ। এরপর রাহুল দা’র ট্র্যাকের শুটিং হবে। রাহুল দা এখানে পাওলি দি’র স্বামীর চরিত্রে৷ চরিত্রের নাম সজল৷ রাহুল দা’র সঙ্গে আমার কোনও সিন নেই।”
সবশেষে রণজয় আরও জানান- “ইন্দ্রাণী দি’র বড় পর্দায় এটা ডেবিউ ফিচার ফিল্ম। কিন্তু সেভাবে ওঁকে ট্রিট করাটা ঠিক হবে না৷ নবীন মানেই অপটু, সেটা নয়। ছবিটা কবে এখানে রিলিজ করবে আমি জানি না। কিন্তু রিলিজ করলে দেখতে বলব আমি। হলফ করে বলতে পারি, একবারও মনে হবে না এই পরিচালক আগে কখনও বড় পর্দার জন্য ছবি বানাননি। মনে হবে কতদিনের অভিজ্ঞ যেন! প্রথমে ছবিটি নানা ফেস্টিভ্যালে ঘুরবে এটুকু জানি। এনএফডিসি প্রযোজনা করছে এই ছবির। সুতরাং সরকারি তরফেই ঠিক করা হবে কবে রিলিজ করবে এই ছবি।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584