শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
নিজেদের চিকিৎসাজীবনে এরকম বিরল অভিজ্ঞতা হয়নি অনেক চিকিৎসকেরই। বিগত কয়েক বছরে এরকম ঘটনা কেউই মনে করতে পারছেন না। একেবারে সিনেমার ‘দো জিসম এক জান’-এর মত দুটি ভিন্ন শরীর কিন্তু অভিন্ন হৃদয় নিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে মঙ্গলবার এনআরএস হাসপাতালে জন্ম নিয়েছিল দুই যমজ কন্যাসন্তান। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও ২৪ ঘন্টার বেশি তাদের এই পৃথিবীতে রাখতে পারলেন না চিকিৎসকরা। গঠনগত ক্রটির কারণেই ২৯ জুলাই বুধবার থেমে গেল দুই শিশুর এক হৃদয়ের স্পন্দন।
এই ধরনের বিশেষ শিশুদেরকে বলা হয় থোরাকোফেগাস। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি আরও বিরলতম হওয়ায় একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘থোরাকো ওমো হ্যালোপেগাস’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এনআরএস হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত বুধবার ২২ জুলাই একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে ২১ বছরের অনিমা ঘোষ আসেন এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরকম যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে, আল্ট্রাসেনোগ্রাফিতে তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। সেই মতো করোনা আবহের মধ্যে সবরকম নিরাপত্তা আর প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার বাগুইআটির বাসিন্দা ২১ বছরের অনিমা ঘোষের যমজ দুই সদ্যোজাতের জন্ম দেওয়ার পরেই তাদের এসএনসিইউতে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখেন।
উত্তর ২৪ পরগনার মিলনবাজার কৃষ্ণপুর এলাকায় বাড়ি শিশুটির অভিভাবকদের। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ডা. অসীমকুমার মল্লিক জানিয়েছেন, লোয়ার ইউটেরাইন সেগমেন্ট সিজারিয়ান সেকশনে ভর্তি করা হয়েছিল প্রসূতিকে। অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন ডা. বিলকিস, ডা. দেবাশিস, ডা. সোমাশ্রী।
আরও পড়ুনঃ করোনা রোগীর নিরাপত্তার খাতিরে ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে ‘নেগেটিভ’ লেখার নির্দেশ নবান্নর
সিজারিয়ান সার্জারিতে জোড়া সন্তানের মা হন ওই প্রসূতি। দুই শিশুর জীবন বাঁচানোর জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলাদা মেডিক্যাল বোর্ডও গড়ে ফেলেছিলেন চিকিৎসকরা। কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায় এই যমজ সদ্যোজাতদের, তারই অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের চেষ্টা ব্যর্থ করেই বিদায় নিল দু’জনে।
আরও পড়ুনঃ এবার নিমতলায় হবে করোনায় মৃতদের দাহ, বিশেষ নির্দেশিকা জারি পুলিশ-প্রশাসনের
কিন্তু কেন বাঁচানো গেল এদের দু’জনকে? চিকিৎসকরা বলছেন, থোরাকোফেগাস কথার অর্থ থ্রোক্স বা বুকের সঙ্গে বুক লাগানো। সাধারণত দুটো শরীরে একটা হৃদয় হওয়ায় তার গঠনগত অনেক ত্রুটি থাকে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কৌশিক সাহার কথায়, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এদের হৃদয়ের অলিন্দ এবং নিলয়ের মাঝে পর্দাটি নেই। এই দুটি বাচ্চারও হৃদপিণ্ডের গঠন অস্বাভাবিক ছিল। ফুসফুস থেকে হার্টে পরিশুদ্ধ রক্ত আসে। দুটি শরীরে একটিমাত্র হৃদপিণ্ড হওয়ার দরুন দুটি শরীরে বেশি পরিমাণ রক্ত একই হৃদয়ে আসায় পরিশুদ্ধ রক্তে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।
এসব ক্ষেত্রে একটি বাচ্চা মারা গেলে এক মিনিটের মধ্যে অন্য বাচ্চাটিও মারা যায়। দুটি অঙ্গ জোড়া থাকলে তাঁদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা যায়। কিন্তু একই হৃদয় নিয়ে দুটো শিশু জন্মালে বাঁচার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। অপরিশুদ্ধ রক্ত বা সংক্রমণেই তাঁদের মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তবে শিশুদের মৃত্যুতে বাবা-মাও বলছেন, ‘এভাবে একটা হৃদয় নিয়ে কষ্ট পেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ওরা মুক্তি পেয়েছে।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584