মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
যার ছোঁয়ার লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর পূণ্য অর্জন হয়, সেই রাসচক্র কার হাতে তৈরি হয় জানেন? বংশ পরম্পরায় সেই রাসচক্র নির্মাণ করে আসছে এক মুসলমান পরিবার৷ রাস যাত্রার আগেই মদন মোহন মন্দিরে পৌঁছে দিতে হবে সেই রাসচক্র৷
তাই স্বপরিবারে কাজ করে চলেছেন আলতাফ মিয়ার পরিবার৷ ছেলে, ছেলের বউ, নাতি নাতনী সকলেই।
গত তিন পুরুষ থেকে রাস উৎসবের জন্য রাস চক্র নির্মাণ করছে আলতাফ মিয়া। তার ঠাকুরদা পান মহম্মদ মিয়া এই রাশ চক্র তৈরির কাজ প্রথম শুরু করেন৷ পান মহম্মদকে ডেকে কোচবিহারের মহারাজা রাস চক্র নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেন৷ গত ৪০ বছর ধরে এই চক্র নির্মাণের কাজ করে চলেছেন আলতাফ৷
শুধু চক্র নির্মাণই নয়, রীতিমত নিষ্ঠা ভরে লক্ষী পুজোর দিন থেকে উপোস করে নির্মাণের কাজ শুরু হয়৷ এই কদিন বাড়ির সবাই নিয়ম করে নিরামিষ ভোজন করেন। রাজ নির্দেশ, রাজ ঐতিহ্য সবটাই থাকে এই রাসচক্রে। ছয় কোনা এই চক্র, লম্বায় ১৮ ফুটের কিছু বেশি। ধবধবে সাদা কাগজে নকসা কাটা। এই নকসাও হাতেই কাটা হয়। তারপরে আঠা দিয়ে বাঁশের কাঠামোর ওপরে লাগানো হয়।
মাঝে থাকে বিভিন্ন দেব দেবীর ছবি। অতীতে এই ছবি গুলিও হাতেই আঁকা হত, কিন্তু কালক্রমে তা কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন আলতাফ।আলতাফের আশা তার ভবিষ্যত প্রজন্মও রাসচক্র বানাবে নিষ্ঠা ভরে৷ তার ছেলে আমিনুর এখন তার সঙ্গেই কাজ করেন৷ এছাড়াও তার নাতি ৫ বছরের রাজু হোসেনও ঠাকুরদা ও বাবার সঙ্গে চক্র নির্মাণের কাজে হাত লাগিয়েছে৷ আছে বউমা।
আরও পড়ুনঃ আলিপুরদুয়ারে বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তী উদযাপন
এই রাসমেলা এক করে দেয় হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়কে৷ রাস চক্রে সম্প্রীতির ছাপ স্পষ্ট। এটিতে যে নকসা করা হয়, তা অনেকটাই তাজিয়ার মত দেখতে বলে মনে করেন সবাই৷ রাস উৎসবের মূল আকর্ষণ রাসচক্র৷ সেই চক্র এখন তৈরি হচ্ছে কোচবিহারের হরিনচওড়ার তোর্ষা নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকার একচিলতে ঘরে৷
এবছর রাস চক্র নির্মানের বাজেট ৩০ হাজার টাকার মত। কাঁচা মালের জোগান দিয়ে খুব বেশি লাভ থাকে না৷ তবে লাভের অঙ্ক নয়, তিনি কাজ করে যান মনের টানে৷
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584