মহিলা ফুটবলার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেতে চায় রেজিনা

0
73

তপন চক্রবর্তী,উত্তর দিনাজপুরঃ

Razina wants to be a women footballer
নিজস্ব চিত্র

আসলে কথায় আছে পরিশ্রমের কোন বিকল্প হয়না।এই কথাকে ধ্যান জ্ঞান মনে করে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ ব্লকের হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তথা হাতিয়া বিদ্যালয়ের ফুটবল টিম ক্যাপ্টেন রেজিনা পারভিন দিনরাত এক করে ফুটবল অনুশীলনে ব্যস্ত থাকছে।হাতিয়া বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন মাঠ না থাকলে কি আছে?রেজিনা তার কোচ অনুপ কেরকেটটাকে নিয়ে হাতিয়া বিদ্যালয় থেকে চার কিমি দূরে অবস্থিত টেনহরি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে অনুশীলন করে থাকে।

Razina wants to be a women footballer
মাঠে অনুশীলন করছে রেজিনা ।নিজস্ব চিত্র

অসুবিধাকে অসুবিধা মনে না করে সপ্তাহে তিনদিন সকালে এবং সপ্তাহে চারদিন বিকালে মাঠে গিয়ে অনুশীলন করে যাচ্ছে।মঙ্গলবার বিকালে টেনহরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুশীলনের মাঝেই রেজিনাকে প্রশ্ন করা হয় বাড়ি থেকে চার কিমি দূরে রোজ রোজ অনুশীলনে কষ্ট হয়না?তার উত্তরে রেজিনা বলেন কষ্ট না করলে কি কিছু পাওয়া যায়?কষ্ট মনে করলেই কষ্ট।

না মনে করলে কিছুই নয়।কষ্ট আমাদের পরিবারের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবেই যুক্ত।কষ্টকে সহ্য করবার ক্ষমতা আমাকে দিয়েছেন।এসবকে অতিক্রম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মজাই আলাদা।আর আমি জানি আমাকে এই কষ্টের মধ্য দিয়েই সামনে এগোতে হবে।

আরও পড়ুনঃ পূর্বস্থলীতে সমাপ্ত হলো দুই দিনের ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবির

সামনে তোমার লক্ষ কি এই প্রশ্নের উত্তরে রেজিনা জানায়,প্রথমত আমাকে জাতীয় স্তরে র খেলায় সুযোগ পেতেই হবে।দ্বিতীয়ত সামনেই সুব্রত কাপের খেলা।সুব্রত কাপের খেলায় এবার উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালযের ফুটবল খেলোয়াড়রা যাতে সুব্রত কাপটি লড়াইয়ের ময়দান থেকে ছিনিয়ে আনতে পারি সেই চেষ্টা আমার ও আমাদের হাতিয়া মহিলা ফুটবল দলের থাকবে বলে রেজিনা পারভিন জানায়।

রেজিনা জানায় তাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ সিনহা একজন ফুটবল পাগল মানুষ।তিনি আমাকে ফুটবল খেলার ব্যাপারে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকেন।শুধু আমাকেই নয় হাতিয়া বিদ্যালয়ের মহিলা ফুটবলারদের নানাভাবে প্রথম থেকেই সাহায্য করে আসছেন তিনি।

হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক তথা রেজিনা পারভীনের প্রশিক্ষক অনুপ কেরকেটটা রেজিনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন রেজিনা অত্যন্ত অভাবী ঘরের মেয়ে।রেজিনার বাবা মহিদুর শেখের কোন আয় নেই।রেজিনার দাদার সামান্য আয়ের উপর চলে রেজিনাদের সংসার।অনুপ বাবু জানান রেজিনা এবার খুব ভালোভাবেই মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে।ক্রীড়া শিক্ষক অনুপ বাবু জানান রেজিনা আর সব মেয়েদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা চরিত্রের।ও পরিশ্রমে ভয় পায়না।

শেখার আগ্রহ ওর অফুরন্ত।হাতিয়া বিদ্যালয়ের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন হয়ে রেজিনা ইতিমধ্যেই সুব্রত কাপ খেলেছে।২০১৮ সালে রেজিনা সুব্রত কাপে হাতিয়ার হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে তিনটি গোল দিয়ে সবার নজর কারতে সক্ষম হয়।বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক অনুপ বাবু বলেন আগামী আগস্ট মাসে সুব্রত কাপের খেলা শুরু হবে।তাই রেজিনা মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীনও চুটিয়ে ফুটবল অনুশীলন করে চলেছে।সুব্রত কাপের খেলায় রেজিনা ও তার হাতিয়ার অনুর্ধ ১৭ ফুটবল টিম রাজ্যের মধ্যে একটি জায়গা করে নেবে বলে তার ও বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষকদের দৃঢ় বিশ্বাস।

রেজিনা ন্যাশনাল স্কুল গেমসে একবার খেলার সুযোগ পেয়েছে।উত্তর দিনাজপুর জেলার কর্নজোড়ায় ক্ষেত নদী উৎসবে অংশগ্রহণ করে রেজিনা দক্ষতার পরিচয়ও দিয়েছে।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ সিনহা বলেন রেজিনা যে ভবিষ্যতে একজন সারা দেশের মধ্যে জাতীয় স্তরের মহিলা ফুটবলার হয়ে নিজে ও উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সুনাম সারা দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেবে এই আশায় বুক বেঁধে আছি।

হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ সিনহা বলেন, তার বিদ্যালয়ের ছাত্রী রেজিনা পারভীন প্রথম থেকেই খেলাধুলার প্ৰতি প্রচন্ড উৎসাহ দেখা যায়।ওর মধ্যে বড় হবার একটা প্রবল ইচ্ছা ভীষণভাবে কাজ করে যা আমরা লক্ষ করেছি।ফুটবলে রেজিনা অসাধারন দক্ষতা ইতিমধ্যেই দেখিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন মাঠে।

রেজিনা আগামীতে সুব্রত কাপের খেলায় দুর্দান্ত ফল করবে এই আত্ম বিশ্বাস আমার তথা আমাদের বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষকদেরই আছে।আমরা ওর খেলাধুলার ব্যাপারে সমস্ত রকম সহায়তা দিয়ে থাকি এবং ভবিষ্যতেই দিয়ে থাকবো।অর্থের কোন চিন্তার কারন নেই।আমরা চাই আমাদের সোনার মেয়ে রেজিনার স্বপ্ন সফল হয়ে তা আমাদের সবাইকে গর্বিত করুক।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here