পিয়া গুপ্তা,উত্তর দিনাজপুরঃ
আর মাত্র কটা দিন।তারপরই বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব দুর্গাপূজা।কিন্তু মন ভালো নেই কালিয়াগঞ্জের দাসিয়ার বৈশ্য পাড়ার ঢাকি সম্প্রদায়ের মানুষদের।আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ।আনমনে সাদা কাশফুল মাথা দোলাচ্ছে।
ভোরের বেলা শিশির ভেজা শিউলী জানান দিচ্ছে শরৎ এসেছে।মায়ের আগমণী সুর দিকে দিকে।পুজো পুজো গন্ধে ম ম করছে বাংলার আকাশ বাতাস।ঠিক প্রাক্ পুজো মুহূর্তে সেই উৎসবের অন্যতম অংশীদার ঢাকিদের মন ভালো নেই।
উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের দাসিয়ার বৈশ্য পাড়ায়। ঢাকিদের গ্রাম নামেই পরিচিত।দূরদূরান্ত থেকে পুজোর সময়ে ঢাক বাজানোর বরাত নিয়ে অনেকেই পৌঁছে যান এই দাসিয়ার বৈশ্য পাড়ায়। গ্রামের প্রায় ২৫ টি পরিবারের প্রায় সকলেই ঢাক বাজানোর কাজ করেন পূর্বপুরুষের আমল থেকে।তাই আর মাত্র কটা দিন ঢাকিদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।
বেশ অনেকটা দূর থেকে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ড্যাঙ কুড়কুড় ঢাকের বাদ্যির আওয়াজ।যারা পূজোতে ঢাক বাজানোর বরাত পেয়েছেন, তাদের প্রস্তুতি তুঙ্গে।কিন্তু এই প্রস্তুতির মহড়া পূজোর আনন্দে গা ভাসানোর জন্য নয়।
রুজি রোজগারের তাগিধে ভিন রাজ্যের মুম্বাই,দিল্লী,রাচিঁ,টাটা কিম বা কলকাতা, দুর্গাপুরের মতো বিভিন্ন শহরে পাড়ি দিতে হবে যে।এই গ্রামের ২৫ টি পরিবারের বিভিন্ন পূজোতে ঢাক বাজিয়েই সংসার চালান।নেই জমিজমা তাই বাপ ঠাকুরদার আমল থেকে রুজি-রোজগারের মুল উৎস ঢাক।উৎসবের মরশুমে ঢাক নিয়ে পাড়ি দেওয়া পুজো মন্ডপে।
যে ঢাকে বাদ্যি মনকে খুশিতে ভরিয়ে তোলে। মন দোলা দেয়,এই বুঝি পুজো চলে এলো।ঢাকের আওয়াজে যখন পূজোর আনন্দে মেতে ওঠে আপামর বাঙালির আট থেকে আশি সকলেই,তখন দাসিয়ার বৈশ্য পাড়ার পরিবারের ছেলে মেয়ে স্ত্রী এবং মায়েরা পথ চেয়ে বসে থাকেন ঘরের উর্পাজন করা মানুষটির বাড়ি ফেরার আপেক্ষায়।
আরও পড়ুনঃ রোজগারের আশায় বায়নার খোঁজে সত্যাডিহির ঢাকিরা
ঢাক শিল্পীরা বাজানো বিভিন্ন রকমের তালের সাথে নাচতে দেখেন অন্যদের তখন মন কেঁদে ওঠে বাড়ির কচিকাঁচা থেকে স্ত্রী এবং মায়ের জন্য। কারন সেই রোজগারের টাকাতেই আগামী কয়েকটা দিন কাটবে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যে।সারাবছর তেমন রোজগার হয় না।
পূজো মানেই বাড়তি রোজগার।কিছুটা পূর্ব পুরুষের পেশাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ এবং বাড়তি রোজগারের আসায় পরিবার ছেড়ে যেতে হয় ভিন রাজ্যে।পুজোয় চারটি দিন যখন সবাই নতুন জামা কাপড় পরে আনন্দ করে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে,তখন পরিবারের পরিজন ছেড়ে পেটের টানে পড়ে থাকতে হয় দুরদুরান্তে। মন কাঁদলেও উপায় নেই, বাড়তি রোজগার, আর সেই রোজগারের টাকার পুজোর পরে হয় ঢাকি পরিবারের নতুন জামাকাপড়। আনন্দে হেসে ওঠে কঁচিকাঁচারা।
দাসিয়ার বৈশ্য পাড়ায় প্রায় সব পুরুষেরা পুজোতে ঢাক বাজাতে যায় ভিন রাজ্যে।ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে পথ চেয়ে বসে থাকে এই গ্রামের সব কল্পনারাই।মা দূর্গা আগমন মানেই প্রিয়জনের বিদায়।তবে এমনটা না হতেও পারতো বলছেন গ্রামের ঢাকিরাই।যদি সরকারি সাহায্য পাওয়া যেত।
যদি ঢাক শিল্পীরা লোকশিল্পী ভাতা পেত।কিন্তু তা হবার নয়।গ্রামের ২৫ টি পরিবারের প্রায় ৭০ জন ঢাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তার মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন শিল্পী ভাতা পান। সকলেই যদি ভাতা পান সংসারের অভাব অনটন অনেকটাই ঘুচতে পারতো।তাই পূজা আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের সুর বাজতে শুরু করে দিয়েছে দাসিয়ার বৈশ্য পাড়ায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584