প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে হেমতাবাদের ‘রোল মডেল’ দৃষ্টিহীন মুকলেশা

0
43

পিয়া গুপ্তা, উত্তর দিনাজপুরঃ

মুকলেশা জন্মের পর থেকে আলো দেখেনি কোনোদিনই। তবু সেই প্রতিবন্ধকতা পড়াশোনার প্রতি তার ভালোবাসা আটকাতে পারেনি। একে কন্যাসন্তান তাও আবার দৃষ্টিহীন। সেই অপরাধে মুকলেশার মাকে চরম গালাগালি করত তাঁর স্বামী। তাই মেয়ের ২ বছর বয়সে তাকে নিয়ে মায়ের কাছে চলে আসেন মুকলেশার মা মোসলেমা খাতুন। অভাব-অনটন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

মুকলেশা। নিজস্ব চিত্র

মুকলেশার মা কৃষিশ্রমিকের কাজ করে কোনোমতে বড়ো করছেন মেয়েকে। তবুও দারিদ্র কিংবা দৃষ্টিহীনতা কোনোটাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি মুকলেশার জীবনে। আর পাঁচজন সাধারণ পড়ুয়ার সঙ্গেই পড়াশোনা করে বড়ো হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে মুকলেশা বেগম।বর্তমানে সে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তার জীবনের লক্ষ্যই শিক্ষিকা হওয়া। তবে এই গোটা লড়াইয়ে মুকলেশা পাশে পেয়েছে তার প্রতিবেশী, আত্মীয়, স্কুলের বন্ধু ও শিক্ষকদের অনেককেই। তারা সকলেই একবাক্যে জানায়, মুকলেশা একজন রোল মডেল। হেমতাবাদ ব্লকের সমশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সমশপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় তার বাড়ি। মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে পাস করে সে। একজন দৃষ্টিহীনের পক্ষে সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করে এই নম্বর পেয়ে পাস করাটা যে আনুপাতিক হারে যথেষ্ট ভালো তা বলাই বাহুল্য।

মুকলেশা জানিয়েছে, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে সে একটি রেকর্ডার পায়। যা তার পড়াশোনার কাজে তাকে অত্যন্ত সাহায্য করে। তার স্কুলের বন্ধুরা জানায়, মুকলেশা বেশ আন্তরিক। কারোর কাছ থেকেই সে সাহায্যর প্রত্যাশা করে না। তবু তার বন্ধুরা স্বেচ্ছায় তার পাশে এসে দাঁড়ায়। বন্ধুরা স্কুলের ক্লাসে নোট লেখার সময় কার্বন দিয়ে অন্য কাগজে মুকলেশার জন্য নোট লিখে দেয়। আর সেই সব নোট পড়ে শুনিয়ে তাকে মুখস্থ করিয়ে দেয় মরিয়ম খাতুন। তিনি বলেন, ও প্রতিবন্ধী বলে অনেকেই ওকে ঘৃণা কিংবা করুণার চোখে দেখে। কিন্তু আমরা চাই যে নিজের যোগ্যতায় মাথা উঁচু করে বাঁচুক। চাকরি পেয়ে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করুক ও। স্কুলের বান্ধবীরা বা বউদি সকলেই চায় সে তার জীবনের লড়াইয়ে এগিয়ে যাক। সমশপুর হাইস্কুলের শিক্ষকরাও মুকলেশাকে নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। তাঁরা মনে করেন, মুকলেশাকে রোল মডেল করে এগিয়ে যাক সমস্ত দিব্যাঙ্গরা। মুকলেশার মায়েরও একটিই ইচ্ছা, মুকলেশা নিজের পায়ে দাঁড়াক। আর তাই মুকলেশা শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এগিয়ে চলেছে লড়াইয়ে ময়দানে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here