বিনা পরিশ্রমে টাকা নেবেন না! গরিব জ্বরে নয়, মরে খিদের জ্বালায় জানালেন সন্তোষ

0
60

মোহনা বিশ্বাস, ওয়েবডেস্কঃ

গোটা পৃথিবী জুড়ে এখন একটাই অসুখ বিরাজ করছে, করোনা। একটা মারণ ভাইরাস, যাকে চোখে দেখা যায় না। কোনোভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। যতদিন যাচ্ছে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। করোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে টানা দু’মাস ধরে চলছে লকডাউন। বন্ধ দোকানপাট, স্কুল, কলেজ, অফিস-কাছারি সহ শহরের অন্যান্য কর্মসংস্থানগুলিও। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এখন প্রায় সকলেই গৃহবন্দি। গণপরিবহন পরিষেবাও বন্ধ।

poverty | newsfront.co
প্রতীকী চিত্র

এমতাবস্থায় যখন ধুঁকছে বাংলা ঠিক তখন গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় আমপান। শহর সহ বিভিন্ন জেলাকে তছনছ করে দিয়ে গেছে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এহেন পরিস্থিতিতে চরম সঙ্কটে সম্মুখীন হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের সন্তোষ সাউ। পেশায় রিকশাচালক। কলকাতার অলিগলিতে রিকশা নিয়ে পৌঁছে যাওয়া সন্তোষের জীবনটা এই মুহূর্তে কঠিন হয়ে গেছে লকডাউন ও ঘূর্ণিঝড় আমপানের জোড়া ধাক্কায়।

আরও পড়ুনঃ করোনা-আমপান হানায় বিপন্ন বইপাড়া, সাহায্যের আবেদন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের

দিনে একসময় ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার করা কোনও ব্যাপার ছিল না তাঁর কাছে। এমনকী কোনও কোনও দিন ৫০০ টাকাও রোজগার করতেন সন্তোষ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে দৈনিক ৫০ টাকাও রোজগার করতে পারেন না তিনি। স্ত্রী ও বারো বছরের ছেলেকে নিয়ে এক ঝুপড়িতে থাকেন সন্তোষ। আমপানের দাপটে উড়ে গিয়েছিল ঘরের চাল। চারদিন পরে প্লাস্টিক শিট ও বাঁশের সাহায্যে কোনও মতে ছাদ তৈরি করা গিয়েছে।

গত চার দিন ধরে হারানো ছাদের পরিবর্তে প্লাস্টিক শিট ও ছাদের সাহায্যে আবার ছাদ ফিরে পেয়েছেন সন্তোষের পরিবার। কিন্তু আবার কোনোদিন যদি এমন তুফান আসে, তাহলে তখন কি করবেন? কোথায় যাবেন? তা জানেন না সন্তোষ। চিন্তার ভাঁজটা তাই এখনো রয়ে গেছে রিকশা চালক সন্তোষের কপালে। তিন মাস আগেও কামারহাটি-আগরপাড়া-বেলঘরিয়া এলাকায় দ্রুত বেগে রিকশা ছোটাতেন তিনি। কিন্তু প্রথমে লকডাউন ও পরে আমপান। সব কিছুর জেরে তছনছ হয়ে যেতে বসেছে এই রিকশা চালকের জীবনটা।

আরও পড়ুনঃ সুরক্ষার দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভে কেপিসি মেডিকেল কলেজের নার্স- স্বাস্থ্যকর্মীরা

সন্তোষ জানাচ্ছেন, ‘‘লকডাউনের পরে আমার জীবনের চিত্রটা বদলে গেছে। একবার আমাকে লাঠি দিয়ে মেরেও ছিলেন এক পুলিশকর্মী। আমার জ্বর হয় না। গরিবরা জ্বরে মরে না। তারা মরে খিদের জ্বালায়।” সরকারের প্রতিশ্রুতিমতো ৫ কেজি চাল ও ডালের বিন্দুমাত্রও পাননি এই রিকশা চালক। বেলঘরিয়া-রথতলার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সৌজন্যে ১০ কেজি চাল, আলু ও সাবান পেয়েছিলেন। কিন্তু এতে কতদিন আর চলবে? কিছুদিন যাওয়ার পর ঘরে মজুত করা ওই খাদ্যসমগ্রীও শেষ হয়ে গেছে। কপাল ভালো থকলে কোনও কোনও দিন ২০০ টাকা রোজগার হয়ে যায়। কেবল সেদিনই মুদিখানায় গিয়ে সামান্য কেনাকাটা করতে পারেন সন্তোষ।

তিনি ভিখারি নন তাই বিনা পারিশ্রমিকে কারোর কাছ থেকে টাকা নিতে পারবেন না। সংবাদমাধ্যমকে সাফ জানিয়ে দেন সন্তোষ। পকেটে পড়ে রয়েছে তিনটি দশ টাকার কয়েন। খুচরো পয়সার অসহায়তা তাঁকে কাঁদায়। কিন্তু ওই যে বিনা পারিশ্রমিকে কারোর কাছে হাত পেতে টাকা নেবেন না। রিকশা চালক সন্তোষের সেই এক কথা।

তিনি স্পষ্ট জানান, “আমি ভিখারি নই। আপনি বলুন কোথায় নিয়ে যেতে হবে? শ্যামবাজার, বারাকপুর, সোদপুর। তারপর পয়সা দিন।” সন্তোষের একমাত্র ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। তিনি জানেন না, লকডাউন পরবর্তী সময়ে ছেলেকে আর স্কুলে পাঠাতে পারবেন কিনা। সন্তোষ এও জানেন না যে তিনি লকডাউনের পর কলকাতায় থাকবেন কিনা। এত অনিশ্চয়তার মধ্যে অভাব অনটনে দিন কাটানোর পরও সন্তোষ সুদিন আসার অপেক্ষা বাঁচে প্রতিদিন। শুধু সন্তোষ নয়, বর্তমানে কলকাতার অলিগলিতে এরকম আরও সহস্র রিকশা চালকের জীবনের গল্পটা অনেকটা এরকমই।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here