নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
বাংলার রাজনীতিতে দলবদলের ঘোলা জল এবার প্রভাব ফেলতে চলছে দাম্পত্য সম্পর্কে। সোমবার তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সৌগত রায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে দলবদল করেন বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সৌমিত্র খাঁর স্ত্রী সুজাতা মন্ডল খাঁ, এদিনের কর্মসূচিতে ছিলেন কুণাল ঘোষও। দলবদলের পরে সুজাতা বললেন, ‘‘একটা চ্যালেঞ্জ নিলাম। কারণ, বিজেপি-র হয়ে প্রচুর লড়াই করেছি। কোনও নিরাপত্তা ছাড়া নিজের প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করেছি। কিন্তু বিজেপি তার জন্য কোনও সম্মান দেয়নি।’’
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সৌমিত্রকে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র থেকে জেতানোর পিছনে বড় ভূমিকা ছিল সুজাতার। আদালতের নির্দেশে সৌমিত্র সে সময় ভোটপ্রচারে যেতে পারেননি। গোটা কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচার সামলে ছিলেন সুজাতা। কিন্তু এরপর কেন তিনি তড়িঘড়ি তৃণমূলে যোগ দিলেন?
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলে বিজেপি সংসদ সৌমিত্র জায়া সুজাতা
বিজেপি সূত্রে খবর, এর আগেরবার যখন অমিত শাহ সাংগঠনিক বৈঠকে কলকাতা আসেন, তখন সুজাতা সেই বৈঠকের ‘ফেসবুক লাইভ’ করেন। এতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর উপর চটে যান। প্রকাশ্যেই তাঁকে ভর্ৎসনা করা হয় বলেও খবর। এরপর থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে সুজাতার।
দলবদলের পর স্বামী সৌমিত্রের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেও প্রশ্ন সূচক বাক্যে বলেন সুজাতা, ‘‘কে বলতে পারে আগামী দিনে সৌমিত্র তৃণমূলে যোগ দেবে না?’’এরপরই তিনি আর ও বলেন, ‘‘এত দিন পর প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি।’’ তবে সুজাতার বক্তব্যের অব্যবহিত পরেই সৌমিত্র তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ জুতোর মালা-কুশপুত্তলিকা দাহ মেদিনীপুর জুড়ে ক্ষোভ শুভেন্দুকে ঘিরে
স্ত্রীর দলবদলের পর সাংবাদিক সম্মেলনে করেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। সোমবার এই সাংবাদিক বৈঠকের শুরু থেকেই সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-এর গলায় ছিল কান্নার সুর। কথা বলতে বলতে কখনও ধরে আসে গলা। বিজেপি সাংসদ বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছিলাম মানুষের স্বার্থে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতাও করেছিলাম, করছি। দু’ বছর আগে থেকেই সোচ্চার হয়েছিলাম। সেদিনে দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল দা পাশে ছিলেন। সেদিন সুজাতাও আমার সাথ দিয়েছিল। এটা আমি অস্বীকার করিনি, আজও করছি না।”
এরপরই সৌমিত্রর বক্তব্য, “আমার দুঃখ লাগছে একটাই যে সুজাতা মন্ডল খাঁ, সে আমার সহধর্মিনী, আমার স্ত্রী। আমার আর ওর মধ্যে তিন মাস ঝগড়া চলছিল। দুই পরিবার ছিল তখন পাশে। তুমি ছাড়া কোনও মহিলার সঙ্গে একদিনও কাটাইনি।” কান্না গলায় নিয়েই বিজেপি সাংসদ বলে চলেন, “যেদিন সুজাতার চাকরি চলে গেল তখন বলেছিলাম আমার বেতনের অর্ধেক তোমায় দেব। তোমার অ্যাকাউন্টে ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিতাম। মমতা, অভিষেকের জন্য তোমার চাকরি হয়নি।”
আরও পড়ুনঃ শুভেন্দুর গড়ে শক্তি বৃদ্ধি জোড়াফুলের, তৃণমূলে যোগ সিপিএম নেতার
সৌমিত্র খাঁ-র দাবি, “আমি এখনও দোতলা বাড়ি করতে পারিনি। সুজাতা আমি তোমাকে বাড়িতে রেখে ছিলাম। কিন্তু বিজেপি না থাকলে সৌমিত্র খাঁ জিততে পারত না। মোদী-অমিত শাহজি আমাকে সহযোগিতা করেছিল। আজ একটা সভা ছিল, ভেবেছিলাম যাব। কিন্তু…” সাংবাদিক সম্মেলনের শেষে সাংসদ বলেন, “শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথ দিলে।” এরপর কিছুটা হুঁশিয়ারির সুরে তৃণমূলের উদ্দেশ্যে বলেন, “পরিবার ভাঙছেন তো ভাঙুন।ক্ষতি নেই। আমি সুজাতাকে খাঁ পদবি থেকে মুক্তি দিলাম। মমতার বিরুদ্ধেই কথা বলব। ভুল করলে সুজাতা। অনুরোধ করব পদবীতে খাঁ নয় মন্ডল লিখো।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584