নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ
প্রকৃতির সহজাত জৈবনিক প্রক্রিয়া অনুকরণ করে বিজ্ঞানীরা সময়ে সময়ে অনেককিছুই আবিষ্কার করেছেন। এবার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন এমন একটি কৃত্রিম পাতা, যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বাতাসে বিশুদ্ধ বায়ু প্রদান করবে।
সালোকসংশ্লেষকে কৃত্রিম ভাবে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা অশুদ্ধ বায়ুতে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলি ভেঙে বিশুদ্ধ বায়ু প্রদান করবেন এই কৃত্রিম পাতার মাধ্যমে।
একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস এ, অনিয়মিত আবহাওয়া এবং অতি রূক্ষতার কারণে জঙ্গলে দাবানল লেগেছিল। প্রাথমিক ভাবে আভ্যন্তরীণ অগ্নিসংযোগই এই দাবানলের কারণ, যদিও অনিয়মিত আবহাওয়া, বাতাবরণে আর্দ্রতার পরিমাণ কম হয়ে যাওয়া, এই অগ্নিসংযোগে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
বিদেশি গণমাধ্যম ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক উ জানিয়েছেন, “সৌরশক্তির ১০ শতাংশকে কৃত্রিম ফুয়েল হিসাবে কাজে লাগিয়ে সালোকসংশ্লেষের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে। প্রাকৃতিক সালোকসংশ্লেষে যে পরিমাণ সৌরশক্তি প্রয়োজন হয় তার থেকে ১ শতাংশ সৌরশক্তি এই কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষে বেশি প্রয়োজন হয়।”
বিজ্ঞানীদের পরবর্তী লক্ষ্য কোনও শিল্পাঞ্চলের সাথে আলোচনা করে তরল জ্বালানীকে কিভাবে কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কাজে লাগানো যায় তার ব্যবস্থা করা।
অধ্যাপক উ এর ধারণা কৃত্রিম পাতাগুলির বাস্তব রূপায়ণ হতে বেশ কিছু বছর লেগে যাবে, ততদিনে তাঁর লক্ষ্য তেল, স্টিল ও অটোমোটিভ কোম্পানীগুলির সাথে কথা বলে তাদের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমনের পরিমাণ কমানো।
আরও পড়ুনঃ সরজমিনে আমাজনের পরিস্থিতি দেখে ফিরলেন অধ্যাপক তাপস
তিনি খুব আশাবাদী বিশ্বব্যাপী এই বদল আনার ব্যাপারে। তিনি আরও বলেছেন, সারা বিশ্বে সরকারি চেষ্টায় যদি কার্বণ-ডাই-অক্সাইড কমানোর কাজ শুরু হয়, তবে আমরা একটি সুন্দর পৃথিবীতে বাস করতে পারব।
পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদনকারী ফুয়েল হিসাবে তিনি যে জ্বালানী ব্যবহার করতে চান, তা হবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
এই গবেষণার আর একজন গবেষক, এরউইন রেজনার বলছেন, “আমরা সিন গ্যাসের কথা অনেকেই জানি না, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রত্যেকেই সিন গ্যাস থাকা কোনও না কোনও প্রোডাক্ট গ্রহণ করছি। বিশ্বব্যাপী কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর চক্র বন্ধ করে রাসায়নিক জ্বালানীর মাধ্যমে সিন গ্যাস উৎপন্ন করা একটি অভিনব উদ্যোগ হবে।”
এই তত্ত্বের উপর নির্ভর করে, কেমব্রিজ এর একটি গবেষণা দল কৃত্রিম পাতাটির একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে, যা কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে সিন গ্যাস উৎপাদন করবে। এই পাতাটিতে(পড়ুন ডিভাইস) দুই ধরনের আলোকরশ্মি শোষণ করার ব্যবস্থা আছে।
এগুলোর মধ্যে একটি পেরোভস্কাইট ও আরেকটি কোবাল্ট এর অনুঘটক। এই পাতাটি জলের সংস্পর্শে এলেই এর একটা দিক অক্সিজেন উৎপাদন করে, এবং অন্য আর একটি দিক জল ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে কার্বন-মনোক্সাইড ও হাইড্রোজেন এ ভাঙে। হাইড্রোজেন এবং কার্বন-মনোক্সাইড এর সমন্বয়ে সিন গ্যাস উৎপাদন করা যায়।
মজার বিষয়, এই প্রক্রিয়াটি লো লাইট এ সম্পন্ন হতেও পারে। বৃষ্টি বা মেঘলা দিনে তাই কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কোনও অসুবিধা হবে না। পেরোভস্কাইট থাকার ফলে আলোক শোষণ করতে সুবিধা হয়, এবং তার থেকে কিছু পরিমাণ ভোল্টেজও উৎপন্ন করা যায়। অন্যদিকে অনুঘটকে কোবাল্ট ব্যবহারের কারণ, কোবাল্ট ধাতুদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম খরচের এবং অন্যান্য যে কোনও উপাদান থেকে কার্বন-মনোক্সাইড উৎপাদন করা কোবাল্ট এর ক্ষেত্রে অনেক সহজ হয়।
জানা গিয়েছে, পরবর্তীতে এই গবেষণা দলের আর একটি অভিনব প্রচেষ্টা হবে, তরল জ্বালানী থেকে সিন গ্যাস না উৎপাদন করে , জল ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে সহজেই তরল জ্বালানী উৎপাদন করা।
যেহেতু বিমানসেবা, ভারী মালবাহী গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে তরল জ্বালানীর চাহিদা খুব, তাই সেক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা অনেক বেশি সহজলভ্য হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584