নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
“যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে” এই প্রবাদ বাক্যটির বাস্তব রূপ দেখা গেল, পশ্চিম মেদিনীপুরে বেলদার এক গৃহবধূ প্রতিভা জানার ক্ষেত্রে। শুধু নামেই ‘প্রতিভা’ রয়েছে তা কিন্তু নয় । বাস্তবেও তার প্রতিভা ছড়িয়েছে এলাকায় ।

বহু সংগ্রাম করে বর্তমানে নিজে স্বনির্ভর হয়েছেন প্রতিভা দেবী। তবে শুধু নিজে স্বনির্ভর হয়ে থেমে থাকেন নি তিনি। নিজের সাথে সমান তালে এলাকার মেয়েদেরকেও যে স্বনির্ভর করে তুলতে হবে তার লক্ষেও এগিয়েছেন তিনি।

তাঁর এই চিন্তা ভাবনা নিয়ে নিজে স্বনির্ভর হয়ে বাঁচার সঙ্গে এলাকার মেয়েদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য স্বনির্ভর হয়ে বাঁচতে শিখিয়েছেন প্রতিভা দেবী ।

এই স্বনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমদিকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করতে হবে এই ভেবে প্রথমে এলাকার আট থেকে দশ জন গৃহবধূ ও মেয়েদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন ।
আরও পড়ুনঃ ধুমচি বিটে অনুষ্ঠিত হলো “বন সুরক্ষা কমিটির” বার্ষিক সভা
রাস্তায় ফেলে দেওয়া জিনিসের সাথে পাট ,লাইলন দড়ি , প্লাস্টিকের বোতল মতো যাবতীয় জিনিস দিয়ে দৈনন্দিন বহু ব্যবহার্য দ্রব্য তৈরি করেন তাঁরা । পরে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করতে থাকেন ।

তারপর বিভিন্ন জায়গায় নিজ খরচে টেলারিং, বিউটিশিয়ান , সফ্ট টয়েজ তৈরি সহ বিভিন্ন কোর্স করেন তাঁরা । এরপরে শুরু হয় আসল রোজগারের রাস্তা । তাঁদের এই কাজ দেখে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসেন এলাকার অন্যান্য গৃহবধূ ও মেয়েরা ।
আরও পড়ুনঃ করোনা ভাইরাস নিয়ে সেমিনার ভগবানগোলায়
পরে নিজেরা ওই কোর্সগুলি শেখার পর এলাকার মেয়েদেরকে শেখান। বাদাম, ছোলা ,গম, চিনি ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিয়ে বিশেষ ধরনের একটি লাড্ডু তৈরি করেন। যার নাম দেওয়া হয় ‘পৌষ্টিক লাড্ডু’।
এই লাড্ডুর পুষ্টিগুণ বেশ ভালো আর এগুলি বাচ্চারা খেতে ভালবাসে এবং ওদের দেওয়াও যাবে । তাই সরকারিভাবে যাতে এগুলি বিভিন্ন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে দেওয়া যায় সেজন্য তাঁরা যোগাযোগ করেন সরকারি দফতরে ।
বর্তমানে বিভিন্ন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের ছোট বাচ্চাদের এই পৌষ্টিক লাড্ডু দেওয়া হয়ে থাকে। এরপরে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেতে শুরু করেন তাঁরা । আট থেকে দশ জন মেয়েকে দিয়ে শুরু করা একটি দল থেকে বর্তমানে প্রায় দুশোটি দল তৈরি হয়েছে এলাকায় ।
প্রত্যেকটি দলে দশ থেকে বারো জন করে রয়েছে ।বর্তমানে এই দলগুলি থেকে কুড়িজন করে সরকারিভাবে বিনা খরচে মাশরুম চাষ ,বিউটিশিয়ান, টেলারিং,সফ্ট টয়েজ তৈরি ,পশুপালনের পাশাপাশি আমাদের অব্যবহার্য দ্রব্যাদি থেকে সৃজনাত্মক ও উৎপাদনাত্মক দ্রব্যাদি তৈরির ইত্যাদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, ও অনেকে এখনও নিচ্ছে ।
এগুলির সঙ্গে এবার নতুন করে আবার সংযোজিত হতে যাচ্ছে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ । এর জন্য ইতিমধ্যে যারা এই চাষ করতে ও প্রশিক্ষণ নিতে চান তাদের দল গঠন করা চলছে । নিজে ঘর সামলানোর পাশাপাশি নিজেকে স্বনির্ভর করে তুলেছেন প্রতিভা দেবী। এছাড়াও এলাকার অন্যান্য গৃহবধূ ও মেয়েরা স্বনির্ভর হতে শিখেছে ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রতিভা জানা জানিয়েছেন -“বর্তমান মেয়েরা আর কোনো অংশে পিছিয়ে নেই । তবে মেয়েদেরকে যতটা স্বাধীন বলে আমরা বলি ততটা স্বাধীন নয় । তাই তার স্বাধীনতা এবং সম্মান পেতে অর্থ রোজগারের প্রয়োজন ।কারন অর্থ ছাড়া আজকের দিনে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারে না । তাই প্রত্যেকটি মেয়ে যাতে স্বাবলম্বী হয় এবং নিজেদের অধিকার নিজেদের রোজগার নিজেরা বুঝে নিতে পারে সেটাই আমার লক্ষ্য ।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584