উদ্বেগজনক ট্রেন্ড! একদিনে কলকাতায় আত্মঘাতী ৭

0
108

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

লকডাউন যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই যেন মানুষের মনে বাড়ছে মানসিক অবসাদ। আর তাই ২০২০ সালের ১৭ জুন ২৪ ঘন্টায় এক বিরল ইতিহাসের সাক্ষী হল কলকাতা পুলিশ। ২৪ ঘন্টায় শহরে আত্মহত্যা করলেন ৭ জন। রিজেন্ট পার্কে এক টলিউড স্ক্রিপরাইটারের জীবন শেষ মুহূর্তে বাঁচানো সম্ভব হলেও বাকি ৭ জনের দেহ উদ্ধার এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে পুলিশকে। শহরবাসীর এই ট্রেন্ড যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মানছেন লালবাজারের শীর্ষকর্তারাই। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলছেন অনেক মনোবিদরাও।

suicide | newsfront.co
গ্রাফিক্স চিত্র

প্রসঙ্গত, ১৪ জুন দুপুরে সারা দেশবাসীর সামনে আসে জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার ঘটনা। আর্থিক সম্বল থাক অথবা না-ই থাকুক, লকডাউনে যে মানুষের মনে বিভিন্ন ভাবে মানসিক অবসাদের পরিমাণ বাড়ছে, তা যেন সেদিনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। আর বুধবার শহরে ৭ টি আত্মহত্যার ঘটনায় যেমন ৭০ বছরের প্রৌঢ় রয়েছেন, তেমনি রয়েছে বছর দশেকের পড়ুয়াও! উল্লেখ্য এই ৭ জনের প্রত্যেকেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে আত্মহত্যা করে এক কিশোর। কাপড় শুকোতে দেওয়ার নাম করে ছাদে উঠেছিল সানি মণ্ডল নামে ১০ বছরের এক কিশোর। কিছুক্ষণ পরই গলায় রবারের পাইপ দিয়ে ঝুলতে দেখা যায় তাকে।

আরও পড়ুনঃ ভর্তির নাম শুনে এনআরএস থেকে ‘উধাও’ করোনা রোগী

পুলিশ জানিয়েছে, ১০ বছরের ওই বালক লেক এলাকার এটি চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা। মা লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন, বাবার কোনও স্থায়ী রোজগার নেই। বাড়ির কাছেরই একটি স্কুলে পড়ত। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। মা বাড়ি বাড়ি কাজ করায় সারাদিন ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডের একটি বাড়িতে থাকত। সেখানেই এক ব্যক্তির কাছে পড়াশোনা করত। এদিন দুপুরে তিনতলার বাড়ির ছাদে কাপড় শুকোতে দিতে যায় সে। ছাদে গিয়ে দেখা যায়, একটি মোটা পাইপের সঙ্গে গলায় রবারের পাইপের ফাঁস দিয়ে ঝুলছে পঞ্চম শ্রেণির ওই পড়ুয়া। কেন সে আচমকা আত্মহত্যা করল, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ।

অন্যদিকে রিজেন্ট পার্কের বড়ুয়াপাড়ায় এক টলিউড স্ক্রিপ্ট রাইটারের জীবন বাঁচানো গেলেও ওই এলাকারই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সরণিতে একটি পাঁচ তলা বাড়ির তিন তলায় আত্মঘাতী হন রোহিত গুপ্তা (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্র। জানা গিয়েছে, তার মা-বাবা এখানে থাকতেন না।পড়াশোনা করতেন না বলে অভিভাবকরা তাঁকে বকাবকি করতেন। সিলিং থেকে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ মালদহে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড শহরবাসীর

বুধবার ভোর সকালে পাটুলির বৈষ্ণবঘাটা টাউনশিপে একটি বাড়ির দোতলার ঘরে গলায় নাইলনের ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন নরেশ সাহা (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। আবার বুধবার সকালে বেহালার ক্যানাল রোডের বাসিন্দা নকুল মন্ডল(৭০)ও সিলিংয়ের সঙ্গে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। বেলেঘাটার কালীতলা বোস লেনে বাসিন্দা ইন্দ্রনীল কর্মকার (৩০) নামে এক যুবকও বুধবার সকালে সাড়ে ন’টা নাগাদ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এদিন সকালে টালিগঞ্জ থানা এলাকার হাজরা রোডে গলায় বেডশিটের ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন মোহন পাঞ্চোপাধ্যায় (৪০)। এদিন মুচিপাড়ার পিসি বড়াল স্ট্রিটে তরুণ টোটন দাস (১৯) নামে এক তরুণও এই একই দিনে গলায় শাড়ির ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। শহরের মানুষের মধ্যে যে মানসিক অবসাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বুধবারে একের পর এক এই সাতটি আত্মহত্যার ঘটনা!

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here