শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
করোনার সময় বিভিন্ন টেস্টের নিরিখে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ যথেষ্টই বেশি, এমন অভিযোগ উঠছে বারবারই।সম্প্রতি বেসরকারি হাসপাতালের লাগামছাড়া বিল নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক দফা নির্দেশিকাও জারি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। তারপরেও রোগীর পরিবারের ওপর জোর করে বেশি বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে কারণ খুঁজতে নামল স্বাস্থ্য কমিশন।
এই কাজে একটি ৮ সদস্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটি তৈরি করে খরচ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা (প্যাথলজিক্যাল গাইডলাইন) তৈরির জন্য চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চিকিৎসাধীন কোভিড আক্রান্তের দু’হাজার টাকার উপরে কোনও পরীক্ষা করাতে হলে পরিজনেদের কাছে তার কারণ দর্শাতে হবে। একই পরীক্ষা বার বার হলে ব্যাখ্যা দিতে হবে। ঠিক এই কারণেই বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ সেপ্টেম্বরের আগে দিল্লি, মুম্বই-সহ ৬ শহরের উড়ান নামবে না কলকাতায়
তিনি বলেন, ‘‘অ্যাডভাইজ়রিতে পরীক্ষার খরচ দু’হাজার টাকার উপরে হলে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোক তো ডাক্তারি জানেন না। চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা সাধারণের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। সেজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ প্রয়োজন।’’
কমিশনের সদস্যদের দাবি, কোভিড পরিস্থিতিতে অনেক সময়েই চিকিৎসকেরা না চাইলেও যে কিছু পরীক্ষা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশের কারণে করাতে বাধ্য হচ্ছেন, তা তাঁরা মানছেন। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকলেও দোষী হচ্ছেন চিকিৎসকরাই। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি কেন হচ্ছে, সেটা বুঝতে দরকার এই নির্দেশিকা। তা তৈরির কাজে সদ্য গঠিত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ আমপান ত্রাণের জন্য নতুন করে প্রায় ৬ লক্ষের আবেদন
অন্য সদস্যেরা হলেন এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান শুভঙ্কর চৌধুরী, সেখানকারই মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান রাজা রায়, ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক শর্বরী সোয়াইকা, স্বাস্থ্য কমিশনের সদস্য-চিকিৎসক মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান বিভূতি সাহা, একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমবাবু বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে থাকা রোগীদের যে সব পরীক্ষার ফলে চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে, তার প্রয়োজনীয়তা দেখে চিকিৎসা খরচের ভার কমানোর দিক নির্দেশ দেবে আমাদের এই কমিটি। যা এই সময় খুব প্রয়োজনীয়। কোন পরীক্ষা দরকার আর কোনটা দরকার না সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনওদিন বোঝা সম্ভব নয়। সেটা বুঝব কেবল আমরাই।’
অন্য রাজ্যগুলির বেসরকারি হাসপাতালের খরচ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় প্রতিদিনের খরচ বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি তার মধ্যে কী কী পরীক্ষার খরচ ধরা রয়েছে, সেই উল্লেখ আছে। এ রাজ্যে নির্দিষ্ট ভাবে প্রতিদিনের খরচ বেঁধে না দিয়ে কোথাও প্যাকেজ আবার কোথাও অগ্রিম ১০ থেকে ১২ টাকা লক্ষ চাওয়া হচ্ছে। তারমধ্যে টেস্ট এর জন্যই ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকার হিসেব দেখানো হচ্ছে। তবে সবক্ষেত্রে সমস্ত অভিযোগ স্বাস্থ্য কমিশনের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘অ্যাডভাইজ়রি অমান্য করা হলে সেটা কমিশনকে জানানো রোগীর পরিজনের কর্তব্য। অভিযোগ না-পেলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।’’ তবে কেস টু কেস হাসপাতাল খরচের বিল খতিয়ে দেখা হলে এই ধরনের লাগামছাড়া বিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584