নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
মৎস্য উৎপাদনে এক সময় শীর্ষ স্থানের অধিকারী ছিল পশ্চিমবঙ্গ। তাকে পিছনে ফেলে এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে গিয়েছে অন্ধপ্রদেশ।
২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যেখানে অন্ধ্রপ্রদেশে মাছের উৎপাদন ৫.৯০ লক্ষ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.৫০ লক্ষ টনে পৌঁছে গিয়েছে, সেখানে এই কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে মৎস্য উৎপাদন ১০.৬০ লক্ষ টন থেকে বেড়ে মাত্র ১৭.৪০ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। এমনকি এই মুহূর্তে বিহার, উড়িষ্যা এবং ঝাড়খন্ডের মতো রাজ্যগুলিও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির হারে পশ্চিমবঙ্গকে প্রায় টক্কর দিতে চলেছে।
সঙ্কটের প্রধান কারণ হিসাবে উঠে আসছে রাজ্য মৎস্য দফতরের দুর্বল পরিকাঠামো। বিষয়টি উপলব্ধি করেই ২০১৩ -র এপ্রিল মাসে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ৬ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং তৎকালীন মুখ্যসচিবকে নিয়ে গঠিত হয় মৎস্য দফতর সম্পর্কিত ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স অন ফিশারিজ ‘।
চলতি বছরের জুলাই মাসে সেই কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী মৎস্য দফতরের পুনর্গঠন এবং মৎস্য দফতরকে, কৃষি দফতর ও প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের সমতুল্য গঠন পরিকাঠামো প্রদান, উপযুক্ত পদে যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগের মতো প্রস্তাবগুলো উঠে আসে।
কিন্তু সেসব প্রস্তাবে নজর না দেওয়ার অভিযোগ এনে আন্দোলনে সোচ্চার হল বিএফএসসি-র পড়ুয়ারা। তাদের অভিযোগ, টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্রছাত্রী তথা ৪ বছরের পেশাদার বিএফএসসি (ব্যাচেলর অফ ফিশারি সায়েন্স) স্নাতকদের ফিশারি এক্সটেনশন অফিসার (এফইও) হিসাবে মৎস্য দফতরে প্রবেশের সুযোগ ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে মৎস্য দফতর নিজেই।
আরও পড়ুনঃ নতুন বছরের শুরুতেই ভেজা শুভেচ্ছা আবহাওয়া দফতরের
তাদের দাবি স্নাতকরাই একমাত্র পারে মৎস্য বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তিকে প্রান্তিক মৎস্য চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে। কিন্তু ফিশারি এক্সটেনশন অফিসারদের সেই ৪০ শতাংশ পদ, পদোন্নতি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার নতুন নিয়ম তৈরি করা হয় ২০১৫ সালে, যা ক্ষতিকর। এই নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি হচ্ছে বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) শিক্ষায় শিক্ষিত নিম্নপদস্থ ফিশারিজ ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্টদের (এফএফএ)। তার প্রতিবাদেই সোচ্চার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। কিন্তু দীর্ঘ আন্দোলন করেও আশ্বাস ছাড়া তাদের আর কিছু মেলেনি।
শেষমেষ ২০১৭ সালে সেই একই পদ্ধতিতে পদোন্নতি হয় মৎস্য দফতরের ছাড়পত্র পাওয়ার পর। ৪০ জন বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত নিম্নপদস্থ ফিশারিজ ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্টরা সেই সুযোগ পান। আবার আপত্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় এখান থেকেই।
আন্দোলনকারীদের মতে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স অন ফিশারিজ’ সুপারিশ এভাবেই মাঠে মারা যায়। আবারও পথে নামতে হয় মৎস্য বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের। দীর্ঘ ২২ দিনের অনশনের পর মৎস্যমন্ত্রীর লিখিত আশ্বাসে পড়ুয়ারা সেই আন্দোলন প্রত্যাহার করে। শুরু হয় মৎস্য দফতরের পুনর্গঠনের কাজ। কিন্তু তা এখনও সম্পন্ন হয়নি।
আরও পড়ুনঃ স্মার্টফোন ব্যবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি ভারতীয় নৌসেনার
দফতরের অগণিত শূন্যপদ এবং পরিকাঠামোগত দুর্বলতা সঙ্কটে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য উৎপাদন এবং প্রফেশনাল বিএফএসসি স্নাতকদের ভবিষ্যৎকে। তাই আন্দোলনকারীরা আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছে অনুষদের পঠনপাঠন, গবেষণা এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম। মৎস্য দফতরের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলে তবেই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে বলে তাদের দাবি।
মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের সাধারণ সম্পাদক জানান, “আমাদের ছাত্র আন্দোলন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। দীর্ঘ ১৪ দিন ধরে আমরা আন্দোলনরত।
আমরা পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের চার বছরের প্রফেশনাল ব্যাচেলর অফ ফিশারিজ সায়েন্স-এর ছাত্র, যেটি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক বছর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ন্যূনতম শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ নম্বর প্রাপ্ত ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়।
আরও পড়ুনঃ টেক্সাসের গির্জায় দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত দুই
তাদের ভবিষ্যত আজ দাঁড়িয়ে আছে ওই পুনর্বিন্যাসের উপর। আজ ৫ বছর ব্যাপী আমরা বহুবার মৎস্য দফতর ঘুরেছি এবং অনেক আন্দোলন করেছি।
কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। রাজ্যের প্রান্তিক চাষীদের কাছে আমরা প্রযুক্তিগত শিক্ষা পৌঁছে দিতে প্রস্তুত। যেখানে পৃথিবীতে নাম আছে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’, সেখানে অবহেলিত হচ্ছে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মৎস্য দফতরের পুনর্গঠন নিয়ে গঠিত স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-এর রিপোর্ট।
শুধু তাই নয় সেখানে সঙ্কটে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত। তবে আমরা আমাদের ভাতৃ অনুষদ ভেটেরিনারি এবং ডেয়ারির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থন পেয়েছি। আশা করি আমাদের আন্দোলন সফলতা পাবে।”
দফতর সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, পুনর্গঠনের রিপোর্ট নবান্নের অর্থ দফতরে দীর্ঘ ৮ মাস ধরে পড়ে আছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584