প্রীতম সরকার, উত্তর দিনাজপুরঃ
করোনার আতঙ্কের জেরে মাস্ক ও স্যানিটাইজার নিয়ে রীতিমত কালোবাজারি শুরু হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমায়। আর এর জেরে মাস্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ তিরিশ টাকার মাস্ক বিক্রি হচ্ছে দুশো টাকায়। আবার এন নাইনটি ফাইভ ব্র্যাণ্ডের মাস্ক বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো টাকায়।
এর জেরে চরম সমস্যায় এলাকার বাসিন্দারা। বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে এই অবস্থা। মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে, তবে তা অনেক মূল্য দিয়ে নিতে হচ্ছে। আবার অন্যদিকে স্যানিটাইজার শহরের কোথাও না থাকায় তা ব্যবহার করতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুনঃ থানায় প্রবেশের আগে হাত ধুয়ে ঢুকতে হবে, নির্দেশ পুলিশের
যেসব দোকানে যতটুকু স্যানিটাইজার ছিল তা বেশ কয়েকদিন আগেই শেষ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। দোকানে তা কিনবার সুযোগ না হওয়ায়, অবশেষে মানুষ অনলাইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু চাহিদা উর্ধ্বমুখী হওয়ায় অনলাইনেও সে রাস্তা বন্ধ। অর্থাৎ অনলাইনে সমস্ত স্যানিটাইজার সোল্ড আউট হয়ে গেছে বলে দেখানো হচ্ছে।
স্যানিটাইজার না পেয়ে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি বেড়েছে হ্যাণ্ডওয়াশ এবং সোপ পেপারের। বাজারে এসব হু হু করে বিক্রি হচ্ছে। তবে পরিবারের সকলের জন্য এন নাইনটি ফাইভ মাস্ক কিনতে এসে কালোবাজারির মুখে পড়তে হচ্ছে একাধিক মানুষকে। এর জন্য অনেকের পক্ষেই বাড়ির সকলের জন্য ওই মাস্ক কেনা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
নোভেল কেমিস্ট এণ্ড ড্রাগিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্মকর্তা শংকর মজুমদার জানান, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম যদি কোন ব্যবসায়ী বেশি নেয়, কিংবা কালোবাজারি করে তা প্রমাণিত হলে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি তার লাইসেন্স বাতিল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে”। যদিও সমস্ত ব্যবসায়ীরা যারা তাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত তাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যাণ্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দ্বারিকা প্রসাদ আগারওয়াল জানান,”যারা ক্ষুদ্র বিক্রেতা তাদেরকেই চড়া দামে মাস্ক কিনতে হচ্ছে। তাই লাভের পরিমাণ সামান্য রাখলেও তার দাম বেশি হওয়ায় সেটি অনেকেরই চোখে লেগে যাচ্ছে”।
তবে তাদের সংগঠনের ব্যবসায়ীরা কোনো ভাবেই কালোবাজারি করছেন না বলেই তিনি জানান। অন্যদিকে ইসলামপুরের ওষুধ ব্যবসায়ী তাপস পাল জানান, “শিলিগুড়ি থেকে তাকে পাইকারি দরে এন নাইনটি ফাইফ ব্র্যাণ্ডের মাস্ক দুশো আশি টাকা করে কিনতে হয়েছে। এই চড়া দাম দিয়ে কিনতে হওয়ায়, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে গ্রাহককে। যদিও তিনি অন্যান্য বেশ কয়েকটি জায়গার মতন সে দাম রাখছেন না। ন্যূনতম লাভেই তা ছেড়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি তার কাছে থাকা স্যানিটাইজার নিঃশেষ।
এমনকি ইসলামপুরের আর কোথাও স্যানিটাইজার নেই বলেও জানান তিনি। এদিকে স্যানিটাইজার নিয়ে চমক দিয়েছে রায়গঞ্জের কয়েকজন পড়ুয়া এবং তাঁদের শিক্ষকরা। আচমকা চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে স্যানিটাইজার৷ কোনও কোনও দোকানে মিললেও তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
দেশ জুড়েই সৃষ্টি হয়েছে এই পরিস্থিতি। কালোবাজারি রুখতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক জেলায় পুলিশ ও ইডি যৌথ অভিযান শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্দ্যেশ্য নিয়ে রায়গঞ্জের গুটি কয়েক পড়ুয়া ও তাঁদের শিক্ষকরা মিলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্যানিটাইজার বানানোর কাজ শুরু করেছেন।
শহরের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ছাত্র ও শিক্ষক মিলে এই কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন। স্যানিটাইজার তৈরির উপকরণ বাজার থেকে সংগ্রহ করে নিজেদের প্রয়োজন মতন প্রায় দুই লিটার স্যানিটাইজার বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, “আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, অ্যালোভেরা জেল আর এসেনসিয়াল ওয়েল দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই স্যানিটাইজার তাঁরা প্রস্তুত করেছেন। ২/৩ কাপ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের সঙ্গে ১/৩ কাপ অ্যালোভেরা জেল ও ২ চা চামচ এসেনসিয়াল অয়েল মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে এই স্যানিটাইজার”।
প্রতি ১০০ এম.এল স্যানিটাইজার প্রস্তুত করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫-৪০ টাকা। এই কাজে যুক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে ফারহান, অর্ণব, সৌমিক, সুদীপ্তরা বলেন,” গত সপ্তাহ জুড়ে স্যানিটাইজার বাজার থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম স্যানিটাইজার তৈরির ঘরোয়া পদ্ধতি সংবাদপত্রে প্রকাশ করেছে৷ সেখান থেকেই জেনেছি৷ এছাড়াও শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি”।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার তথা শিক্ষক শান্তনু মিশ্র বলেন, “করোনা সংক্রান্ত উদ্বেগ ক্রমশ জটিল হচ্ছে৷ ফলে মান্য কিছু স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অভ্যস্ত হওয়ার গুরুত্ব টের পাচ্ছি আমরা সবাই। টের পাচ্ছি বলেই হয়তো বাজারে হ্যাণ্ড স্যানিটাইজারের ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে। একই সাথে সাথ দিয়েছে চোরাবাজারিও। অ্যাভেলেবিলিটি এবং দাম এই দুইয়েরই করুণ পরিস্থিতিতে আমরা ছাত্র-শিক্ষক মিলেমিশে নিজেদের নিরাপত্তার তাগিদে তৈরি করেছি হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584