দীপাবলিতে জ্বলুক প্রদীপ, মোমবাতি

0
421

নরসিংহ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

দীপাবলি বা দেওয়ালি কথাটির অর্থ হলো ‘প্রদীপের সমষ্টি’। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারত তথা বিশ্বের বহু দেশে এই উৎসব পালন করা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরাস অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা ও ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। হিন্দু ছাড়াও শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও এই উৎসব পালিত হয়। ভারত ছাড়াও নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মরিশাস, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সুরিনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিজি’তে ঐ দিন জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

সারা বিশ্বের কোথাও না কোথাও এই দিনটির গুরুত্ব রয়েছে।

subho dipabali

হিন্দুদের কাছে দীপাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বাংলা, আসাম, ওডিশা ও মিথিলা’তে এই দিনটি কালীপূজা হিসেবে উদযাপন করা হয়। হিন্দুরা ঐ দিন ঘরবাড়ি পরিস্কার করে, অমঙ্গল বিতাড়নের উদ্দেশ্য সারারাত ছোট ছোট প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন। দীপাবলি বা কালীপুজোতে এই প্রদীপ জ্বালানোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। কথিত আছে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজার প্রচলন করেন। উনার পৌত্র অমঙ্গল বিতাড়নের উদ্দেশ্য আতসবাজি পোড়ান।

আবার, দীপাবলির দিনেই শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছর নির্বাসনের পর অযোধ্যায় ফিরে আসেন। রাজ্যবাসীরা তাঁদের প্রাণপ্রিয় রাজাকে ফিরে পেয়ে রাজধানীকে সাজিয়ে তোলেন ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে। জৈন মতে, মহাবীর ঐদিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন। শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২জন রাজপুত্র ঐদিন মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখরা‌ও এই উৎসব পালন করেন। আর্য সমাজ ঐদিনেই স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর ম‌ত্যুদিন হিসেবে পালন করেন। ধনতেরাসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী নতুন বর্তন, বাসন, গয়না প্রভৃতি কিনে থাকেন।

অনেক নিয়ম ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয় দীপাবলি উৎসব। কিন্তু বর্তমানে এই উৎসবের ধারা পরিবর্তিত হয়েছে। মাটির প্রদীপের জায়গা করে নিয়েছে নানান রংবেরংয়ের বৈদ্যুতিক আলো। বিশেষত এল‌ইডি আলোতে মুড়ে ফেলা হয় বাড়ির চারপাশ।

আতশবাজির রোশনাই থাকলেও অধিক ব্যবহৃত হয় বাজি পটকা জাতীয় দাহ্য বস্তু। যার আওয়াজ ও আলো ক্ষণিক আনন্দদায়ক হলেও খুবই বিপজ্জনক। বিশেষত ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েদের এই ধরনের বাজি পটকার ব্যবহার খুবই সাংঘাতিক। এমন‌ ঘটনা হামেশাই ঘটতে দেখা যায় দীপাবলির রাতে।

আরও পড়ুনঃ রায়গঞ্জের কালীপুজোর উদ্বোধনে নুসরত

এমনিতে এল‌ইডি আলোর বিচ্ছুরণ চোখের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। বাজি পটকার আচমকা শব্দ শ্রবণশক্তি হ্রাস ঘটাতেও পারে বা হৃদপিন্ডের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বাজি পটকা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটায়। তবুও আমরা ঐ এক রাতে মেতে উঠি ঐ দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবহার করতে।

যে কারণে দীপাবলির প্রচলন সেই প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালিয়ে যদি আমরা ঐ দিনটি পালন করি তাহলে তা পরিবেশ ও আমাদের জন্য হিতকর। মাটির প্রদীপের ব্যবহার দেশীয় কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে, তেমনি বাজি পটকা থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে মুক্ত হবে পরিবেশ‌ও।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here