মেদিনীপুরবাসীকে হতবাক করে দিয়ে চলে গেলেন ‘স্যাটলিঙ্ক’ খ্যাত সুবীর সামন্ত

0
194

নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

বিজয়ার শোক কাটতে না কাটতেই আরেকটা শোকের মধ্যে মেদিনীপুরবাসী। পথ দুর্ঘটনায় নিহত হলেন সুবীর সামন্ত।মেদিনীপুর শহরের জন্য একটা নিজস্ব নিউজ চ্যানেলের জন্ম দিয়েছিলেন সুবীর সামন্ত। বন্ধু প্রতিম দাদা অরুন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে নয়ের দশকে কেবল লাইনের ব্যবসার পাশাপাশি মেদিনীপুর শহরের অলি গলির খবর বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিত ‘স্যাটলিঙ্ক’।

subir samanta | newsfront.co
সুবীর সামন্ত। সংবাদ চিত্র

নিজের বাড়িতে বসে নিজের টিভিতে নিজেরই শহরের খবর কিংবা নিজেরই ছেলে মেয়েদের খেলার মাঠে অথবা কোনও জলসায় অনুষ্ঠান করতে দেখে আপ্লুত হতেন মেদিনীপুরবাসী, সৌজন্যে সুবীর সামন্ত। রাজনৈতিক সভা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিদ্যালয়ের বার্ষিকী অনুষ্ঠান, শহরের চুরি, ছিনতাই সন্ধ্যে কিংবা সকালে মধ্যবিত্তের সাদা কালো টিভিতে ফুটে উঠত স্যাটলিঙ্কের চ্যানেলে। এই নতুন কিছু করার তাড়নায় বেশির ভাগ সময়ই ব্যাপক লোকসানও গুনেছেন সুবীর। শহরের টিকিট বিক্রী না হওয়া জলসাতে ক্যামেরা বসিয়ে স্ত্রীর গহনাগাটি অবধি বিক্রি করেছেন সুবীর, কিন্তু তাতে মেদিনীপুরবাসীর বিনোদনে বাধা পড়েনি।

আরও পড়ুনঃ দু’পক্ষের বোমাবাজিতে উত্তেজনা রাণীনগর-২ ব্লকে

বুধবার রাতে নিজেদের একটি সংগঠনের মিটিং করে ফিরছিলেন সুবীর সামন্ত। ৬নম্বর হাওড়া-মুম্বাই জাতীয় সড়কের উলুবেড়িয়ার কাছাকাছি সামনের থাকা একটি গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে সুবীরদের গাড়ি। হয়ত সামান্য ক্ষণের জন্য চোখ লেগে গিয়েছিল তাঁর। বুকে এবং মাথায় আঘাত লাগে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেই জ্ঞান আর ফেরানো যায়নি। মধ্য রাতেই মারা যান ৫৫বছরের সুবীর সামন্ত। আ্যনালগ থেকে ডিজিটাল ব্যবসায় চলে এসেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ শিশু মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে

শহরের এমনকি শহরের বাইরেও ছোট অনুষ্ঠান থেকে ভিভিআইপিদের অনুষ্ঠানের সম্প্রচার, জয়েন্ট স্ক্রিন সুবীর সামন্ত ছাড়া ভাবাই যেতনা। মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা আইআইটি খড়গপুরে রাষ্ট্রপতির সমাবর্তন ভাষণ, চন্দ্রকোনা রোডে প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে শাহরুখ খানের অনুষ্ঠান! সুবীর বাবু ছাড়া ভাবাই যেতনা। তার হাত ধরেই অবিভক্ত মেদিনীপুর দেখেছিল ট্রলি ক্যামেরার কারসাজি। খড়গপুর, হলদিয়া, ঝাড়গ্রাম সুবীর সামন্ত ছাড়া কেউ বড় অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ঝুঁকি নিতনা। কলকাতার টলিউড ক্যামেরা মেদিনীপুরের এঁদো মাটিতে সুবীর ছাড়া বসানোর স্পর্ধা কে দেখাবে? শুধু তাই নয়। মেদিনীপুর শহরের বহু সাংবাদিক, ক্যামেরা ম্যান, ভিডিও গ্রাফারের জন্ম হয়েছে স্যাটলিঙ্কের হাত ধরেই। যাদের কেউ কেউ আজ বিখ্যাত, আজ প্রতিষ্ঠিত তারা।

প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ব্যাপক লোকসানও গুনতে হয় ওনাকে। মেদিনীপুর শহরের কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান চলাকালীন ভেঙে পড়ে প্যান্ডেলের একাংশ। গোটা ঘটনাই চলে যায় রাজ্য পুলিশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। প্রায় ১ মাস ঘটনাস্থল থেকে নিজের সরঞ্জাম সরাতে পারেননি তদন্তের জন্য। কলকাতা থেকে ভাড়া করে আনা বহুমূল্য সরঞ্জামের ভাড়া দিনের পর দিন গুনতে হয় তাকে।খড়গপুর আইটিআইতে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে আরেক বিপর্যয়। প্রবল বজ্রপাতে পুড়ে যায় সম্প্রচারের জন্য ব্যবহৃত বহু দুর্মূল্য মেশিন। এই দুই ধাক্কা সর্বশান্ত করে দেয় তাকে।

আরও পড়ুনঃ করোনা আবহে লক্ষ্মী পুজোর প্রাক্কালে অগ্নিমূল্য সবজি বাজার

ইদানিং ডিজিটাল প্রিন্ট ব্যবসায় সরে আসছিলেন ধিরে ধিরে। কিন্তু ভাল করে সেই ব্যবসা জমিয়ে ওঠার আগেই চলে গেলেন সুবীর সামন্ত।মেদিনীপুর কলেজের গা ঘেঁষে তৈরি করা বাবার একটা ছোট্ট ছবি তোলার স্টুডিওতে কলেজের ছেলে মেয়েদের জন্য আইডেন্টি কার্ডের সাদা কালো ছবি তুলে হাত পাকিয়ে ছিলেন সুবীর। ‘উর্জ্জনা’ স্টুডিওর গলায় ঝোলানো সেই আগফা ক্যামেরা ওয়ালা বছর উনিশ কুড়ির সেই ছেলেটার মায়া ভরা হাসি এই ৫৫ বছরেও যা অমলিন ছিল। কোনও বেদনা, কোনও লোকসানই সেই হাসি কেড়ে নিতে পারেনি। সেই হাসি নিয়েই চলে গেলেন সুবীর সামন্ত।

রেখে গেলেন স্ত্রী এবং একমাত্র নাবালক ছেলে আর অগনিত ভালবাসার মানুষকে। সুবীর সামন্ত চলে গেলেন কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়া পুরোনো দিনের আধুনিক গানের মত বারবার ফিরে আসবেন তিনি, ফিরে আসবেন প্রিয় মেদিনীপুরবাসীর হৃদয়ে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here