করোনার থাবা বস্ত্র বয়ন শিল্পে, সরকারি সাহায্যের আর্জি শিল্পীদের

0
153

শিবশঙ্কর চ্যাটার্জ্জী, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ

একদা যে তাঁতের মাকুর “খটা -খট” শব্দে এক সময় সকালের ঘুম ভাঙতো, দক্ষিন দিনাজপুর জেলার গংগারামপুর এলাকার এই তাঁত পল্লির বাসিন্দাদের। আর টানা লকডাউনের ঠেলায় বর্তমানে গংগারামপুরের অধিকাংশ তাঁত শিল্পীর বাড়ির বুনন যন্ত্রে ঝুল জমেছে। এমনকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে একাধিক সমবায় সমিতি।

Saree business | newsfront.co
লকডাউনে বন্ধ তাঁত। নিজস্ব চিত্র

আর এই লকডাউনের জেরে তাঁত শিল্প মহল্লায় মাছি তাড়াচ্ছেন শিল্পী-সহ কর্মীরা। যার ফলে মাথায় হাত শিল্পীদের। জানা যায়, বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প অর্থনীতির এক অন্যতম চাবিকাঠি। ১৯৭১ এর আগে থেকে জেলায় তাঁতের এই শাড়ি দিয়ে শিল্পের সূচনা হলেও, ৭১ সালের পর থেকে ক্রমেই জেলায় এই বয়ন শিল্পের ঝোঁক বাড়তে থাকে। তবে দেশ ভাগের সময় মূলত পাবনা থেকে ছিন্নমূল হয়ে এসে গঙ্গারামপুরে যাঁরা বসত গড়েছিলেন, তাঁরাই ওই পেশাকে আঁকড়ে ধরে নতুন ভাবে জীবিকার সন্ধান খুঁজে নিয়েছেন।

Tant saree | newsfront.co
হাতে বোনা তাঁত। নিজস্ব চিত্র

তবে গঙ্গারামপুরে হস্তচালিত তাঁতকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে শাড়ি তৈরি হতে থাকে। অনুসারি হিসেবে চরকায় সুতো থেকে রং এবং নকশা তৈরির মতো কাজেও বহু মানুষ যুক্ত হয়ে পড়েন। একদা গঙ্গারামপুরের বোড়ডাংগি, বসাকপাড়া, দত্তপাড়া, ভোদংপাড়া ও স্কুলপাড়া হয়ে ইন্দ্র নারায়ণপুর কলোনির রাস্তায় হাঁটলে শোনা যেত মাকুর শব্দ। আর কাছে গেলে দেখা যেত প্রায় প্রতিটি ঘরেই তাঁত চলছে।

আরও পড়ুনঃ লকডাউনে বন্ধ দোকান, প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়ে স্মারকলিপি মাথাভাঙ্গা ক্ষৌরকার সমিতির

Tant | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

প্রতিদিনই প্রায় নতুন শাড়ি তৈরির ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। আর করোনার জেরে লকডাউনের ফলে এখন ওই পাড়াগুলো কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। স্তব্ধ জীবনের সাথে থমকে গিয়েছে মাকুরও। অথচ এই তল্লাটের প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ এই তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। এর পাশাপাশি এই ব্লকের ঠেংগাপাড়া, ডিটল হাট, নয়া বাজার সহ অনান্য জায়গার বাসিন্দারাও এই শিল্পের সাথে অতপ্রত ভাবে যুক্ত।

কিন্তু লকডাউনের জেরে সর্বত্রই চিত্রটা এক। এমনিতেই মিলের সস্তা শাড়ির পাশাপাশি নদিয়ার শান্তিপুর, ফুলিয়ার তৈরি তাঁত বস্ত্রের মুন্সিয়ানার সঙ্গে টক্কর দিয়ে, এই এলাকার শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাটাই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই তাঁত শিল্পকে আঁকড়ে ধরে সারা বছরের সঞ্চয় ঢেলে আগামীর নববর্ষ, মহরম, ইদ, বাংগালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর রমরমা মার্কেট ধরার স্বপ্ন দেখে, কাপড় বুনে ছিলেন তাঁতিরা। আর আজ এই করোনাই অভিশাপ হয়ে নেমে এল শিল্পী পরিবারে। তাই এই প্রান্তিক তাঁতিদের দাবি, সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণদান প্রদান করা হলে এ খাতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। আর না হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যাবে বলে আর্জি শিল্পীদের।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here