খালিদ মুজতবা, মুর্শিদাবাদঃ
একদান মোবাইল গেম খেলতে ফোন ভাড়া ৩০ টাকা। শুনতে অবাক লাগলেও এই রকম ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর স্কুল মাঠে। ৩০ মিনিটের একটি কাস্টম গেম খেলতে অনেকে খরচ করছে শয়ে শয়ে টাকা।
শীত নামতেই রানীনগর স্কুল মাঠের সন্ধ্যার পর ভিড় জমাচ্ছে ১২ থেকে ২২ বছরের কিশোররা। দেশজুড়ে লকডাউনের সময় থেকেই কিশোর ও যুবকদের সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যমে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল গেম। তার মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুরের ‘গারিনা’ নামের একটি মোবাইল গেম প্রস্তুতকারী সংস্থার বর্তমানে বিশ্বখ্যাত মোবাইল গেম ‘ফ্রি ফায়ার’।
আরও পড়ুনঃ ফের করোনায় মৃত্যু কলকাতা পুলিশের অফিসারের
আর এই ‘ফ্রি ফায়ার’ গেম খেলতেই রাণীনগর থানা এলাকার বিভিন্ন প্রান্তের গ্রাম থেকে রানীনগর স্কুল মাঠে সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় জমাচ্ছে অল্প বয়সের কিশোররা। যাঁদের অধিকাংশেরই বয়স ১২ থেকে ২২ বছর। যে সব কিশোর দুটো থেকে তিনটে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তারাই সেই সমস্ত কিশোরদের গেম প্রতি ৩০ টাকা করে ফোন ভাড়া দিচ্ছে, যাদের কাছে মোবাইল ফোন নেই।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূল বিধায়ক হিতেন বর্মনের ছবিতে পানের পিক, চাঞ্চল্য এলাকায়
আর এই মোবাইল গেমের নেশায় বুঁদ হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা খোলা আকাশের নিচে বসে মোবাইল স্ক্রীনে চোখ রেখে নাগাড়ে গেম খেলে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। আর মাঝেমধ্যে গেম খেলতে খেলতে একে অপরের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি।
আরও পড়ুনঃ বইমেলায় কোচবিহারের রাজাকে অসম্মানের অভিযোগ
প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে কোভিড পরিস্থিতির জন্য স্কুল কলেজের পঠন পাঠন আপাতত শিকেয়। আর যার ফলে পিছিয়ে গিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এমত অবস্থায় ‘ফ্রী ফায়ার’ এর মতো মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্কুলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বছর বাইশের স্কুলছুট এক কিশোর জানায়, “আমার তিনখানা মোবাইল। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কেরালে কাজ করি। কিন্তু লকডাউনের জন্য বাড়ি চলে আসি। হাতে কাজকর্ম না থাকায় আমার দুখানা মোবাইল ‘ফ্রি ফায়ার’ গেম খেলার জন্য অল্প বয়সের কিশোরদের ঘণ্টা প্রতি ৬০ টাকা হিসেবে ভাড়া দিই। এই ফোন ভাড়া দিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কামাই করি”।
আরও পড়ুনঃ ‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে উল্টো সুর বিজেপি শরিকের
সামিউল নামের এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জানায়, “অনেকদিন থেকেই স্কুল বন্ধ। মাধ্যমিক পরীক্ষা হতে এখনো ছয় মাস বাকি। বাড়ি থেকে আব্বা – মা ফোন কিনে দেয়নি, কিন্তু ফ্রি ফায়ার গেম খেলতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যায় রাণীনগরে স্কুল মাঠে এসে ফোন ভাড়া নিয়ে ‘ফ্রী ফায়ার’ গেম খেলি”। প্রতিদিন গেম খেলতে কত টাকা খরচ হয় জানতে চাওয়ায় উত্তর ধেয়ে আসে, “এইসব জেনে আপনার কি ? আমার টাকায় আমি খেলি”।
এভাবেই ৩০ টাকার গেমে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কিশোর জীবন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584