নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণাঃ
গত ১৭ ডিসেম্বর, সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিল বেরলো দক্ষিণ ২৪ পরগনার মেটিয়াবুরুজ এলাকা থেকে। মোদী সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নামে গোটা দেশে যে ত্রাস সৃষ্টি করেছে, শান্তিপুর্ণ ভাবে তার বিরোধিতা করাই ছিল এই মিছিলের মূল লক্ষ্য।
মিছিলে উপস্থিত ছিলেন প্রায় এক হাজার এলাকাবাসী, যার মধ্যে যুব সম্প্রদায় থেকে প্রৌঢ়ের স্বতঃস্ফূর্ত ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
মেটিয়াবুরুজ অঞ্চল শুরু হয় দুটি জায়গা, আক্রা ফটক ও রাজাবাগান থেকে। তার পরের বিস্তৃত অঞ্চল বদরতলা নামে পরিচিত। মেটিয়াবুরুজ থানা থেকে বেরনো দুটি রাস্তার একটি আক্রা ফটক অবধি গেছে, অন্যটি বদরতলা এলাকা পর্যন্ত। এ দিনের মিছিল আক্রা ফটক থেকে শুরু হয়ে মেটিয়াবুরুজ থানা অবধি যায়।
আরও পড়ুনঃ সংশোধিত নাগরিক আইনের সমর্থনে বিজেপির মিছিল ঘিরে উত্তেজনা হাওড়ায়
মেটিয়াবুরুজ থানার পরবর্তী অঞ্চল একটি উর্দুভাষী অঞ্চল। সেটি বাদ দিয়ে, আক্রা ফটক থেকে মেটিয়াবুরুজ থানা অবধি অঞ্চলে বাঙালি মুসলমানদের বাস।
এই বাঙালি মুসলিমরাই মেটিয়াবুরুজের মূল বাসিন্দা, যারা আজকের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে সবার সাথে পা মিলিয়েছেন।
সূত্রের খবর, এলাকার বাসিন্দা এবং ‘শব্দনগর’ পত্রিকার সম্পাদক সৌদ আলি মোল্লার তরফে জানা যায়, এই মিছিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এই মিছিল খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলে আগত বাসিন্দাদের মধ্যে যুবকদের সংখ্যা বেশি থাকলেও কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, সৃষ্টি হয়নি ঝামেলার।
পাশাপাশি এই মিছিলে কোনও দলীয় পতাকা বা স্লোগান ছিল না। প্রায় একশো’র বেশি লোক জাতীয় পতাকা নিয়ে পথে নেমেছিলেন। কিছু মানুষের হাতে ছিল সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্ল্যাকার্ড। মাঝে জনতা এক জায়গায় জমা হয়ে কুশপুতুল জ্বালায়, কিন্তু তাও অত্যন্ত নীরবেই সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ এনআরসি-সিএএ’র প্রতিবাদে কেশপুরে তৃণমূলের মিছিল
সৌদ বাবু আরও বলেন যে আজকের শান্তিপূর্ণ জমায়েত প্রমাণ করে, সম্প্রতি আক্রাতে ঘটিত দাঙ্গা আসলে কিছু মানুষের প্ররোচনাতেই হয়েছিল। একটা বিশাল অংশ, যারা এখানকার বাসিন্দা, তারা সিএএ জারির ফলে অত্যন্ত আঘাত পেয়েছেন। তাঁরা হয় গভীর মনস্তাপে ভুগছেন, না হয় দুশ্চিন্তায় নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সারা দেশের নাগরিক যে বিপন্ন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তার সমাধানের কথা মাথায় রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এলাকার হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে একটি পিটিশন জমা করা হবে। তবে এই পিটিশনের আর্জি হবে দেশের একজন নাগরিক হিসাবে, কোনও ধর্মের রঙ এখানে প্রাধান্য পাবে না।
সৌদ বাবুর মতে, শুধু মুসলিম সমাজই আজ বিপন্ন অবস্থায় নেই, সিএএ-এনআরসি দেশে জারি হলে নাগরিক হিসাবে প্রায় প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কারণ ভারতবর্ষের মতো রাষ্ট্রে যে কোনও সামাজিক-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আপামর নাগরিকের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে।
তাই আজ, ১৮ ডিসেম্বর থেকে এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বাসিন্দাদের এই পিটিশনে সই-সাবুতের জন্য অনুরোধ করা হবে।
তবে এখনই এই পিটিশন-এ সই করার ইতিবাচক সম্মতি অনেকের থেকেই পাওয়া গিয়েছে। ওই এলাকার অনেক বাসিন্দাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এসেছেন এই পিটিশনে সই করার জন্য, জানান সৌদ আলি মোল্লা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584