সিমা পুরকাইত,দক্ষিন ২৪ পরগনাঃ
একবিংশ শতাব্দিতে গ্রামবাংলার যাত্রার কদর আর নেই বল্লেই চলে । হারিয়ে যাওয়া যাত্রা পালার লেখক শিল্পিরা এখন অন্ধকারে। একটা সময় চিৎপুর যাত্রা শিল্পিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলত দক্ষিন সুন্দরবনের যাত্রা লেখক শিল্পী ভগিরথ বাগের লেখা সঙ্গে গান। সুন্দরবন ও সুন্দরবন লাগোয়া বহু যাত্রা শিল্পিরা তারই লেখায় অভিনয় করেছেন । নাচে গানে মেতে থাকতেন প্রবীন নবীনেরা ।সম্মানও পেতেন লেখক শিল্পি ভগিরথ। সময়ের সাথে সাথে বদলেছে শিল্পির কদর । আইলায় হারিয়েছে যাত্রাপালার লেখক শিল্পির লেখা পান্ডুলিপিগুলি। যেটুকু বেঁচেছে কর্দমক্ত ছেড়া ছিটে কাগজের টুকরো। তবু আজও লেখা থেকে থামাতে পারেনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় কোন ঝড়। নামখানা ব্লকের ফটিকপুর গ্রামে অতিকষ্টে দিন যাপন করছেন ভগিরথ বাবু। পঞ্চান্ন বছরের শিল্পির পেটে খিদে থাকলেও শিল্পি সত্তা সদা জাগ্রত। দিনমজুর বাবা জগদ্বিশচন্দ্র ও মা পারুল দেবির ছয় সন্তানের মধ্যো বড় ভগিরথ । ছোট থেকেই ছিলেন সংগীত প্রেমী। ছোট থেকে লিখতে লিখতে বড় হওয়া এই শিল্পির। কখনো প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন নিজের কন্ঠে বা তাঁর লেখার মাধ্যমে।
আশির দশকে একাদশ শ্রেণীতে পড়াকালীনই তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ড্রিগ্রি অর্জন করার পর আর পিছনে তাকাননি এই প্রতিবাদী শিল্পী। ফটিকপুর গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে নাম ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিন সুন্দরবনের সর্বত্র । তারই লেখা যাত্রা পালা ‘জননী জন্মভুমিষ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী’ মহিলাদের নিয়ে লেখা ‘স্বাধীনতা তুমি কোথায়’, ‘মৃত্যুর মিছিলে আমি একা নই’,’সবুজ বাংলা গড়তে সবে হও সাথি’,’জাগো কন্যা বধূ মাতা’।এছাড়া সমাজ সচেতনতার উপর লেখা ‘মাটি মা মানুষ’।যে লেখার কদর করেছিলেন রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। যার কদর বিস্তৃত হয়েছিল সুন্দরবনের ঘরের কোনে কোনে । নন্দিগ্রাম আন্দোলনে ভগিরথের লেখা হয়েছিল সমাদৃত। আজও এই লেখক কন্ঠ শিল্পির গান হাটে বাজারে শোনা যায় ঠিকই । কিন্তু কদোর? ২০০৯ সালে আইলায় শিল্পীর গচ্ছিত সম্পদ পান্ডু লিপিগুলি নষ্ট হওয়ার পর মুর্ছিত হন ভগিরথ । তার উপরে রয়েছে শিল্পির উপর অবহেলার ছায়া। বাড়ির পূবে সুশুনিয়া নদীর জল আর আইলা ঝড়ে শেষ হয়ে যায় পান্ডুলিপি খানি । তবু আজ মুখ ভরা একগাল দাড়ি । জীর্ণ শরীরে আধ পেটা খাওয়া ভগিরথ বাবু কম্পিত হাতে লিখে চলেছেন ঘরের এক কোনে। তারই কন্ঠে গান শুনতে হাজির হন গ্রামের প্রবীণ নবীনেরা। তারই লেখায় চলে গ্রামের বৈশাখি ,পৈশালি,অভাগিদের অভিনয়। কদর না থাকলেও আজও গ্রামের মানুষ সম্মান করেন শিল্পি ভগিরথকে। ক্ষমতায় আসার পর শিল্পিদের নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । চিন্তা করেনি শিল্পী ভগিরথকে নিয়ে ।অভাব অর অনটনের মধ্যে কোনো রকম বেঁচে আছেন দক্ষিন সুন্দরবনের যাত্রা লেখক ও কন্ঠ লিল্পি ভগিরথবাবু । দুই ছেলেকে নিয়ে স্বস্ত্রীক ভগিরথ বাবু কোনক্রমে দিন জাপন করছেন। সরকারী সাহায্য নেই, তবুও প্রতিবাদ নেই। সমাজ সচেতনার প্রতিবাদে আজও আধপেটা খেয়ে লিখতে চাইছেন তিনি।
আরও পড়ুন: পানীয় জল মহার্ঘ জামুড়িয়ায়
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584