পিয়া গুপ্তা, উত্তর দিনাজপুরঃ
পুজোর ক’টা দিন মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, পুজোর সব কাজ করেন বাড়ির পুরুষেরা। এটিই উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বনেদি পুজো সেন বাড়ির দূর্গাপুজোর বিধান।
মন্দিরের বাইরে চাতালে দাঁড়িয়ে মায়ের দর্শন করতে হয় সেন বাড়ির মা- বোনেদের, এবং সেই নিয়মই চলে আসছে তিনশো বছর ধরে। বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের মহিলাদের মনে আক্ষেপ থাকলেও এই নিয়মটাকে মেনে নিতেই হয়েছে যাতে কোনও অঘটন না ঘটে।
উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রাচীন বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুরের সেন বাড়ির দুর্গাপুজো অন্যতম। ওপার বাংলার যশোরের বরুনার জমিদার তারিনী মোহন সেনের পূর্বপুরুষেরা দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এরপর তাদের বংশধর সুরেন্দ্রনাথ সেনও পূজো করেন বাংলাদেশেই।
১৯৫২ সালে শৈলেন সেন ওপার বাংলা থেকে সেখানকার দুর্গাস্থানের মাটি নিয়ে এসে এপারে রায়গঞ্জে সুদর্শনপুরে দুর্গামন্দির স্থাপন করে পুজো শুরু করেন।
কথিত আছে ওপার বাংলাতেই পুজোর সময় অশুচি অবস্থায় বাড়ির কোনও মহিলা মন্দিরে প্রবেশ করায় বড় ধরনের অঘটন ঘটে সেন পরিবারে। সেই থেকে মন্দিরেই প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় মহিলাদের। সেই থেকে দূর্গাপুজোর মন্দিরের যাবতীয় কাজ বাড়ির পুরুষেরাই করে আসছেন।
আরও পড়ুনঃ শতবর্ষ প্রাচীন দেব পরিবারের দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা
তবে এনিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বাড়ির মহিলারা সেই ক্ষোভকে নিজের অন্তরেই রেখে দেন পরিবারের মঙ্গলের কথা ভেবেই।
এছাড়াও সেন বাড়ির দূর্গাপুজোয় সপ্তমী থেকে নবমী প্রতিদিন নিয়ম করে পাঠাবলি দেওয়া হয়। জাগ্রত বলে খ্যাত সেন বাড়ির দূর্গামায়ের কাছে বহু মানুষ মানত করতে আসেন, আবার মনসকামনা পূরন হলে তা দিতেও আসেন সেন বাড়িতে।
একান্নবর্তী পরিবারের অনেকেই ভিনরাজ্যে এমনকি বিদেশেও থাকেন, কিন্তু পূজো শুরু হতেই পরিবারের সকলে এসে জড়ো হন রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরের বাড়ির দূর্গোৎসবে।
পূজোর চার-পাঁচটা দিন হৈ হুল্লোড়ে কাটানো একে অপরের সাথে মিলন সবই হয়, কিন্তু বাড়ির বৌ মেয়েদের কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা থেকেই যায় পুজোয় মায়ের মন্দিরে প্রবেশ যে তারা করতে পারেন না।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584