পুজোর থিম যখন মাতৃস্নেহের প্রতিদান

0
63

পিয়া গুপ্তা,উত্তর দিনাজপুরঃ

মাতৃঋণ যা হয়তো কেউ কখনো শোধ করতে পারেনা।কারণ একটা মা সারাজীবন তার সন্তানের জন্য নীরবে কষ্ট করে যান।দশ মাস দশ দিন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে ভোগ করেন সীমাহীন যন্ত্রণা।সন্তান কে বড়ো করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে একজন মা সন্তানের কাছে অবজ্ঞা তাচ্ছিল্য এর পাত্র হয়ে ওঠে।

নিজস্ব চিত্র

খবরের কাগজে কিংবা টিভির পর্দায় প্রায় রোজই শোনা যায় সন্তান দের কাছে অবহেলিত মায়েদের গল্প।তাই এবারের পুজোয় সেইসব গুণধর সন্তানদের প্রতি বার্তা মাকে ভালবাসুন, সুস্থ রাখুন।

উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের রশিদপুর হরিহরপুর সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির পুজোর থিম মাতৃস্নেহের প্রতিদান।অর্থাৎ কোন সন্তানেরা আর যাতে তাদের মাকে অবহেলার চোখে না দেখে।সেই বার্তাই এবার ফুটিয়ে তুলছে তাদের পুজো মণ্ডপে।একটা সময় যে মা এর হাত ধরে যে ছেলেটা পুজোর সময় পাড়ার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে মণ্ডপে পূজো দেখতে যেত।

নিজস্ব চিত্র

ছোট থেকে স্নেহ ভরা ভালোবাসা দিয়ে যে ছেলেটিকে তার মা আস্তে আস্তে বড় করে তুলেছে।আজ সেই ছেলেটি বড় হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার মাকে ভুলে যাচ্ছে।নামিদামি চাকরি করে বহু টাকা পয়সার অধিকারী হয়ে সে অট্টালিকায় থাকলেও তার মাকে রাখছে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে আবার কোনো কোনো সময় সে মায়ের সেখানেও স্থান হচ্ছে না।

তখন বাধ্য হয়ে সেই মাকে যেতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে।পরিবর্তিত সমাজের পরিবর্তন এটাই কি হওয়া বাঞ্ছিত ছিল? নসীরহাট হরিহরপুর সার্বজনীন দূর্গা পূজা কমিটির এবারে সেই বার্তা দিয়ে সমাজ সচেতন নাগরিকদের সচেতন করতে এবার এগিয়ে এসেছে। উত্তর দিনাজপুর জেলার এই দুর্গা পুজো কমিটি এবার তাদের ৫০ বছর পূর্তি পালন করছে।

আরও পড়ুনঃ পুজো মন্ডপের থিমে চন্দ্রযান ২ সহ আস্ত মহাকাশ

নিজস্ব চিত্র

বরাবরই এই পুজো কমিটি উত্তরবঙ্গের মধ্যে বিশেষ একটা স্থান দখল করে এসেছে। মণ্ডপের ভিতরে নিখুঁত কারুকার্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মায়ের শাড়ীর আঁচলে সন্তানকে আগলে রাখার চিত্র।তেমনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সমাজে সেই সব সন্তানদের চিত্র। যা এবারের হাজার হাজার দর্শনার্থীদের মনকে যে নাড়া দিবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

নসীরহাট হরিহরপুর সার্বজনীন দুর্গা উৎসব কমিটির সম্পাদক স্বপন সরকার বলেন, এবারে তাদের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে প্রতিবছরের মতো নতুন কিছু থিমকে সামনে রেখে এবারে সাধারণ মানুষের কাছে কিছু উপহার দিতে চায়।যা সমাজকে অনেকটাই সচেতন করবে বলে তার বিশ্বাস তিনি বলেন এবারে তাদের পুজোয় বিশেষ আকর্ষণ মাতৃ স্নেহের প্রতিদান নিয়ে একটি থিম।

স্বপন বাবু বলেন,সমাজে মা রা সন্তানদের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করে সন্তানরা বড় হয়ে কেউ ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ার কেউ ব্যবসায়ী বিভিন্নভাবে যারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় তারা তাদের মাকে কিভাবে বঞ্চিত করে সমাজে অবহেলিত করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় ।

সভ্য সমাজে এইধরনের অমানুষিক সন্তানের প্রতিদান কে কেন্দ্র করে তারা এবার তাদের পুজোয় থিম কে তুলে ধরছে সকলের সামনে। তিনি বলেন কিছু কিছু পেপার টিভি এবং বই পড়ে তারা জানতে পেরেছেন যে মা তার সন্তানকে ছোট থেকে লালন-পালন করে কষ্ট করে লড়াই করে বড় করে তোলার পর সেই সন্তানরা তাদের মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনঃ ঝাড়গ্রাম রঘুনাথপুরে পুজো মন্ডপে এবারের থিম পরিবেশের ভবিষ্যৎ

এটা সভ্য সমাজে অমানুষিক একটি কাজ। তাই তারা চিন্তা করেছে এই ধরনের থিম কে কেন্দ্র করে যদি তারা তাদের পুজো কমিটির মাধ্যমে সমাজের একটি বার্তা দিতে পারে তাহলে হয়তো সমাজের সমস্ত সন্তানরা এর থেকে কিছু শিক্ষা ও নিবে এবং আগামী দিনে মায়ের প্রতি অবজ্ঞা এটাও কিছুটা হলেও কমবে। এজন্যই তারা এই ধরনের চিন্তাভাবনা কে সামনে রেখে তাদের পুজোয় এই ধরনের থিম কেন্দ্রিক পুজো করছে।

তিনি বলেন এবারের পুজোয় তাদের বাজেট প্রায় ২১ লাখ টাকার মতো। আর পুজোর চাঁদা বেশিরভাগটাই তাদের হয় গ্রামভিত্তিক।তিনি বলেন পুজোর দিনগুলিতে পুজোর পাশাপাশি থাকছে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি যেমন তেমনি ই গরিব-দুঃখীদের বস্ত্র দান করার পাশাপাশি বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নিয়ে এসে তাদের মন্ডপ প্রাঙ্গণে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

এছাড়া রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন আগামী ২ অক্টোবর তাদের পুজোর উদ্বোধন করবেন কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি আশীষ দোলুই। তিনি বলেন কালিয়াগঞ্জের তরফ উপরের পরিতোষ পাল এবার যেমন তাদের প্রতিমা তৈরি করছে তেমনি বটুক ভৈরব চৌধুরী।তিনি বলেন এবারে তাদের পুজোয় বিশেষ আকর্ষণ মাতৃ স্নেহের প্রতিদান নিয়ে একটি থিম।

পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা উপস্থিত থাকবেন।তিনি বলেন কালিয়াগঞ্জ এর তরঙ্গপুর এর পরিতোষ পাল প্রতিবারের মত এবার ও তাদের প্রতিমা তৈরি করছে যেমন তেমনি মালদার শিল্পীদের হাতের ছোয়ায় তৈরি হচ্ছে থার্মকল দিয়ে বিভিন্ন মডেল বানিয়ে মন্ডপ।

সুন্দর কারুকার্য করে নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় যেভাবে সুন্দর ভাবে মণ্ডপটি তৈরি হচ্ছে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা।এছাড়া এবার এই পুজোয় থাকছে চন্দননগরের চোখ ধাঁধানো আলোর কারসাজি।সবমিলিয়ে আপনাকে এবার পুজোয় একবারের জন্য হলেও আসতে হবে এই পুজোয়।না হলে অনেক কিছু থেকেই আপনি মিস করে যাবেন পুজোয়।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here