আশিক চক্রবর্তী
১১৬০ থেকে ১১৭৯ দীর্ঘ ১৮ বছর বল্লাল সেন রাজত্ব করেন। তাঁর রাজত্ব কাল যেমন যুদ্ধ জয়ের জন্য বিখ্যাত, তেমনি বিখ্যাত তার দান সাগর আর অদ্ভুত সাগরের জন্য। দুর্দন্ড প্রতাপশালী বল্লাল সেনের শাসন ইতিহাস, সুবে বাংলায় তার প্রভাব যেন বড় ইতিহাসে রূপরেখা নির্ধারণ করে।
গৌড়ের সিংহাসনে পাল রাজা গোবিন্দ পালকে চূড়ান্ত ভাবে পরাস্ত করেন, আর বাংলায় বৌদ্ধ আর পাল রাজ বংশ ধ্বংস করে, প্রতিষ্ঠা করেন সনাতন ধর্ম। বাংলায় বহু বৌদ্ধ মঠকে তিনি মন্দিরে রূপান্তর করেন।
রাজা মহাশয় ছিলেন বড় সৌন্দর্যের পূজারী। বাংলায় এক বর্ধিষ্ণু অঞ্চল যা বর্তমানে কান্দি মহকুমার অন্তর্গত, গ্রামের নাম গোকর্ণ।
সেই অঞ্চলের বিখ্যাত মিত্র ভূমি, কথিত আছে সেখান থেকেই নাকি আজ বাংলায় সকল মিত্র পদবির উৎপত্তি, তৎকালীন বাচস্পতি মিত্রর পরিবারের এক কন্যার রূপে মোহিত হয়ে পরেন, অরিরাজ নিঃশঙ্ক শংকর রাজা বল্লাল সেন। বাচস্পতি মিত্র ছিলেন একজন সৎ ব্যক্তিত্ব, তিনি যেমন ছিলেন নিষ্ঠাবান, তেমনি ধার্মিক।
আরও পড়ুনঃ দুর্গাষ্টমী তিথি ও কুমারী পুজো
রাজার এহেন মন বাসনা তিনি মেনে নিতে পারেনি, তাই এই আশু বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি দেবী দুর্গার ধ্যানে মনস্থ হন। দেবী তাকে তার দ্বিবাহু রূপে দর্শন দেন এবং আজও সেই রূপেই পূজিত হয়ে আসছেন।
দেবী এখানে সপরিবারে আসলেও কথিত আছে, দেবী এখানে কুমারী রূপে পূজিত হন। দেবীর নিজস্ব বেদী আছে, সেখানেই প্রতিবার মা তার চালা ঘর বাঁধেন সন্তানদের নিয়ে। মহালয়ার চণ্ডীপাঠ থেকে দশমীর বিসর্জন সবই দেবীর নিজস্ব নিয়ম নীতি মেনে।
দেবী দ্বি হস্ত, সিংহ এখানে ঘোড়া, লক্ষী গণেশ, কার্তিক সরস্বতী। যদিও কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় দেবীর মূর্তিতে ঘোড়ার প্রচলন করেন বলে শোনা যায়, বৈষ্ণব মতে পূজিতা হন দেবী, কিন্তু সেতো ১৭৫৭’র পর, মানে পলাশীর যুদ্বের পরবর্তী। কিন্তু এখানে এই রূপ ব্যবহার হয়ত সময়ের মতান্তর।
এখানে বলির প্রচলন আছে। সপ্তমী অষ্টমীতে মিত্র পরিবারের একটি করে পাঁঠা বলি হয়। নবমীতে মানতকারীরা বলির জন্য ছাগ প্রদান করেন।
এ এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। বৈষ্ণব শাক্ত, ১১৬০ সাল, মা যেখানে বাড়ির মেয়ে, দু হাতে বধ করছেন মহিষাসুর রূপী বল্লাল সেনকে, বলি প্রথা, প্রাচীন মন্দির, ৮০০ বছরের পুজো। সব মিলে বড় অদ্ভুত বৈচিত্র এখানে। আর দূরত্ব খুব বেশি নয়।
কলকাতা থেকে বহরমপুর ট্রেনে ৪ ঘন্টা আনুমানিক, সেখান থেকে গোকর্ণ মাত্র ১৮ কিলোমিটার। গ্রামে এসে যাকেই জানতে চাইবেন ডালানিমাতলা যাব, সেই বলে দেবে। শহরের ক্লান্তি ছেড়ে ঘুড়ে আসুন ভালো লাগবে। আর হ্যাঁ থাকতে কিন্তু বহরপুরেই হবে, এখানে কোন হোটেল নেই।
এছাড়াও নরসিংগদেবের মন্দির, সিংহ বাহিনীর দুর্গা পুজো, শ্যামরায়তলা
গোকর্ণ গ্রামে অবস্থিত। পায়ে পায়ে চলে আসুন একবার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584