আতাহার খানের বুড়িমা দুর্গাপুজোর ইতিহাস

0
347

শ্যামল রায়,পূর্বস্থলীঃ

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকেই পূর্বস্থলী এক নম্বর ব্লকের সমুদ্রগড়ের রাজা আতাহার খানের বাড়িতে বুড়িমা দুর্গাপুজোর রীতি প্রচলিত রয়েছে আজও।

the history of durga puja | newsfront.co
ছবিঃপ্রতীকী

রাজপরিবারের বর্তমান প্রজন্ম সাহাদুল খান জানালেন ঠাকুরদাদা ফজলে করিম খানের সময় পর্যন্ত দুর্গাপুজোর সব আয়োজন হতো রাজবাড়ী থেকেই।

৪৫ বছরের বেশি সময় বুড়িমার পুজোর আয়োজন বিবিরহাটে বারোয়ারী সংস্থার হাতে চলে গিয়েছে।তবে আতাহার পরিবারের নামে আসা পুজোয় প্রথম দেওয়া হয় দেবী দুর্গার নামে।
সমুদ্রগড় এর বিবির হাটের বুড়িমা পূজোর পিছনে রয়েছে এক করুন ইতিহাস।

কথিত সমুদ্রগড় এর রাজা ছিলেন রঞ্জিত ভট্ট ঠাকুর।তার প্রাণের বন্ধু ছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়।একবার কৃষ্ণনগরের রাজার খাজনা লুট হয়ে গেলে তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নবাবের খাজনা দিতে পারেননি।

তাই ক্ষুব্ধ হয়ে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ তখন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে গ্রেফতারের আদেশ দেন।বন্ধুকে বাঁচাতে সমুদ্রগড়ের রাজা রঞ্জিত ভট্ট ঠাকুর ছুটে আসেন নবাবের কাছে।নবাব তখন শর্ত দেন যদি রঞ্জিত ভট্ট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তবেই কৃষ্ণনগরের রাজাকে মুক্তি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুনঃ রায়গঞ্জের সেন বাড়ির দুর্গাপুজোয় ব্রাত্য মহিলারা

বন্ধুকে বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন রাজা রঞ্জিত ভট্ট।নবাবের আদেশে রঞ্জিত ভট্টকে কয়েকদিন হাজতবাস করতে হয়। সমুদ্রগড় এর রক্ষণশীল ব্রাহ্মণরা তার এই মুসলিম নবাবের হাজতে অন্য জনকে ভালো চোখে মেনে নেয়নি।তারা রাজাকে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করতে বলেন।রাজা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে নতুন নাম নেন আতাহার খান।

কিন্তু রাজার মন থেকে দেবী দুর্গার প্রতি ভালোবাসা দূর হয় না।গৃহদেবতা বুড়িমার পুজোর যাতে কোনো অমর্যাদা না হয় তার জন্য কনৌজ থেকে ব্রাহ্মণ আনিয়ে পুজো করাতেন  তিনি।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও তার পরিবারের সকলের দুটি করে নাম থাকত।একটা হিন্দু নাম আরেকটি মুসলিম নাম।আজও বিবির হাট এর এই পুজোয় হিন্দু-মুসলিম বিভেদ ভুলে গিয়ে সবাই মেতে ওঠেন আনন্দে বুড়িমার এই পুজোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক সম্প্রীতির মেলবন্ধন।

তবে এই পুজো প্রতিবছর বৈষ্ণব রীতি অনুযায়ী হয়।ঘোড়ার আদলে সিংহের মুখ হয়। দেবীর ভোগে পান্তা-ইলিশ সবই আগের দিনের মতোই বজায় আছে।রাজা আনুকূল্য বন্ধ হওয়ায় রাজবাড়ির পুজোয় বারোয়ারী হয়ে টিকে রয়েছে আজও।শুধু খান পরিবারের মানুষেরা ধীরে ধীরে দূরে চলে গিয়েছেন কিন্তু বারোয়ারি পুজো পুরনো ইতিহাস মনে রেখেই প্রতিবছর পুজো হচ্ছে সমুদ্রগড় খান পরিবারের বসবাস স্থল বিবিরহাটে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here