নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ
ডিবিএ শিক্ষার্থীদের প্রযোজনা ও নির্দেশনার কাজ শেখানোর জন্য প্রোডাকশন হাউজ ‘দ্য ফিউচার ইস্ট’, তিন মাসের একটি ফিল্ম ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করছে।
এতে শিক্ষার্থীদের জন্য ৮০০০ টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোর্স পূরণের পর শিক্ষার্থীদের উক্ত সংস্থায় পূর্ণকালীন পদে কাজ করার সুযোগও রয়েছে। এই কোর্সে আবেদন করার একমাত্র শর্ত হল স্নাতক হওয়া এবং সিনেমাকে ভালোবাসা।
প্রোডাকশন থেকে শুরু করে নির্দেশনা; এমনকি অভিনেতা থেকে স্ক্রিপ্ট এ চরিত্রের নাম—সব ক্ষেত্রেই উঁচু বর্ণের মানুষরাই প্রাধান্য পেয়ে এসেছে কালের নিয়মে।
যখন ‘মাসান’(২০১৫) ছবির পরিচালক নীরজ ঘাওয়ান তার প্রযোজনায় কাজ করার জন্য দলিত বহুজন ও আদিবাসী ব্যাকগ্রাউন্ডের আবেদনকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি টুইট প্রকাশ করেছিলেন, তখন টুইটার ঘাওয়ানকে বর্ণবাদ চর্চার জন্য অভিযুক্ত করেছিল।
অন্যদিকে, ‘আর্টিকেল ১৫’(২০১৯) প্রকাশিত হওয়ার পর সমালোচক, দর্শক এবং সিনেমা জগতের অধিকাংশ মানুষই হতবাক হয়েছিল ২০১৯ এ দাঁড়িয়ে দলিতদের এই যাপন দেখে।
তবে ছবিটি পছন্দ হয়নি দলিত কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের একটি বিশাল অংশের। “আমি আর্টিকেল ১৫ এর আগে ‘কালা’(২০১৮) কে বেছে নেব”– রাহুল সোনপিম্পল নামে জেএনইউ এর এক ছাত্র কর্মী একটি টিভি শো’তে পরিচালককে বলেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ ফুটবল টুর্নামেন্ট ঘিরে উৎসাহ এলাকার মানুষের
উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, মুখ্য চরিত্রের ব্রাহ্মণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ছবিটির কাহিনী এগিয়ে চলার কারণে ছবিটি তীব্র ভাবে সমালোচিত হয়েছিল।
যাদের গল্প বলা হচ্ছে, তাদের যখন এই শিল্পের এবং সিনেমাজগতের অংশ হওয়ার জন্য আমন্ত্রিত করা হয়নি, তখন কীভাবে আমরা বলতে পারি যে আমরা সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে পারছি মানুষের কাছে? আর এক্ষেত্রে নিজেকে শিক্ষিত করার আগ্রহ এতটা ন্যূনতম হলে আদৌ কি আমাদের বর্ণ নিয়ে গল্প বলার অধিকার রয়েছে? যেখানে শিক্ষাক্ষেত্র এবং অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রগুলিতে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য অন্তত কিছুটা দ্বার উন্মুক্ত করা গিয়েছে। সেখানে সিনেমাও দাবী করে থাকে যে বর্ণবিশেষে মানুষের কোনও পার্থক্য নেই, যে কারণে ডাইভারসিটি ফিল্ম ট্রেনিংয়ের মতো প্রোগ্রামের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একটি জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীহারিকা সিং এই ধারণাটি প্রথম কোথা থেকে এল জানাতে বলেছেন, “ছায়াছবির মাধ্যমে মূলত সংস্কৃতির গঠন এবং চর্চা হয়।
সংস্কৃতির জন্ম ততক্ষণ হবে না, যতক্ষণ না সমস্ত মাধ্যম এবং প্রতিটা প্রান্ত থেকে সেই স্বর সঠিক ভাবে সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্টস এবং ডিএ (ডিরেক্টর অ্যাসিস্ট্যান্টস) এর একটি শাখা রয়েছে, যেটি সব শিক্ষার্থীকেই সমান সুযোগ দিয়ে থাকে।”
নীহারিকা আরও বলেছেন, “দেশজুড়ে চলচ্চিত্র শিল্পগুলি ঐতিহাসিকভাবে প্রভাবশালী বর্ণ গোষ্ঠী বা বুর্জোয়া স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বিরশা মুন্ডা জন্ম জয়ন্তী পালন
যেহেতু শিল্পের সীমানা থাকতে পারে না, তাই চলচ্চিত্র শিল্প অন্যান্য শিল্পের তুলনায় তুলনামূলকভাবে আরও বৈচিত্র্যময় হতে পেরেছিল।
মহিলা, এলজিবিটিকিউ, মুসলিম, পার্সিরা এখানে দুর্দান্ত সাফল্য লাভ করেছিল। মারাঠি ও তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে দলিত সাফল্যের গল্পও দেখা গেছে। উপরোক্ত সমস্ত দিক রক্ষা করা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্রের রাজনীতি এবং বেশির ভাগ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে চালিত হয় তা এখনও যথেষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদী, উচ্চবিত্তিয় এবং সার্বজনীন নয়।”
ওই গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নীহারিকা জানিয়েছেন, “ভারত বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প প্রযোজক দেশ হওয়া সত্ত্বেও এখানে যথেষ্ট, যথাযথ শিক্ষা এবং তার চর্চার অভাব লক্ষনীয়। আর শিক্ষা না থাকলে যে কোনও শিল্পেই অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং বৈচিত্র্য আনা কেবলমাত্র সুদূরের স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়।
কিছু বছর আগে, পরিচালক নীরাজ ঘাওয়ান ডিবিএ ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের তাঁর সাথে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেছিলেন। এই নিয়ে বেশ কিছু ট্রোল-সমালোচনা হয়।”
সংস্থার কর্ণধার আরও বলেছেন, “আমরা সত্যিই চাই না এটি কোনও রকম সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধ বা ট্যাবলয়েডগুলির খোরাকের সামগ্রী হয়ে উঠুক।
ভাগ্যক্রমে, আমরা সারা দেশে আবেদনকারীদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং প্রচুর সহানুভূতিশীল ইমেল পাচ্ছি। তবে দুর্ভাগ্যবশত আমরা একসাথে কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকজনকেই উত্তর পাঠাতে পারি।”
প্রোগ্রামটির অন্তর্ভুক্ত কোর্সের ব্যাপারে নীহারিকা জানান, যারা নির্দেশনা এবং প্রযোজনার বিষয়ে আগ্রহী তাদের জন্য তিন মাসের ইন্টার্নশিপ এর ব্যবস্থা আছে।
তারা এই কোর্সে বিশিষ্ট এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সহায়তা এবং পরামর্শ পাবেন। ইন্টার্নশিপ এর সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে ফিউচার ইস্ট এ ইন্টার্নদের সম্ভাব্য পূর্ণকালীন কাজের সুযোগও থাকবে।
তিনি আরও জানান, এখন ফিউচার ইস্টএ বিজ্ঞাপন এবং সিনেমায় কাজ করা পরিচালকগোষ্ঠীর একটি প্যানেল আছে। ইন্টার্নরা সেখানে ছবি বানানোর সম্পূর্ণ শৈলী এবং পদ্ধতি আয়ত্ত করা সহ গবেষণা ও প্রযোজনায় অংশ নিতে পারবে। মিডিয়ার কিছু ক্ষেত্রে গঠনপ্রণালীর পরিবর্তনে আমাদের অভিজ্ঞতা এবং কার্যক্রম অনুযায়ী তাদের ভবিষ্যত তৈরীর সঠিক পথেরও সন্ধান পাবে।
আরও পড়ুনঃ মাঠ বাঁচাতে বৈঠকে বসছেন স্কুলের প্রাক্তনী-সচেতন নাগরিক মঞ্চ
ফিউচার ইস্ট ভারতে ফিল্মের নতুন ফর্মগুলি বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরা শৈল্পিকভাবে পরিচালিত, বিশ্বব্যাপী প্রযোজনা সংস্থা যা পুরষ্কারযুক্ত ছায়াছবি এবং ব্র্যান্ডযুক্ত সামগ্রী তৈরি করার লক্ষ্যে রয়েছে।
ভবিষ্যতে শিল্পীদের মধ্যে একটি দ্বিধা যা আরও বৃদ্ধি পাবে, তা হল শিল্প এবং মুনাফা এই দুইয়ের মধ্যে একটির পথে যাওয়া। বলাই বাহুল্য, সিনেমা একটি খরচা সাপেক্ষ শিল্প মাধ্যম। কিন্তু তার মধ্যেও উৎকৃষ্ট মানের শিল্প সৃষ্টিই এই সংস্থার লক্ষ্য।
ফিউচার ইস্ট এর ফিল্মগুলি কান, ভেনিস, টরন্টো, বার্লিন, এসএক্সএসডাব্লু ইত্যাদি চলচ্চিত্র উৎসবে সমাদৃত হয়েছে। টেট মডার্ন (লন্ডন), সেন্টার জর্জেস পম্পিডু (প্যারিস), দ্য মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট (নিউ ইয়র্ক), ফ্রিজে আর্ট ফেয়ার (লন্ডন) এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে এদের কাজ প্রদর্শিত হয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584