নিজস্ব সংবাদাতা,উত্তর ২৪ পরগনাঃ
যৌনপল্লি থেকে ঘরে ফিরছে বিক্রি হওয়া মেয়ে। গত ২৫ মে প্রেমিকের হাত ধরে গভীর রাতে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল মধ্যমগ্রামের ১৪ বছরের একটি মেয়ে।
বাড়ির লোকেরা তার ভালোবাসার কথা না মানায় পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনে।
সবকিছু ঠিক করে প্রেমিকের হাত ধরে ওইদিন বাড়ি ছাড়ে মেয়েটি।কিন্তু মেয়েটির বিয়ের স্বপ্ন সফল হওয়ার আগেই পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে বিক্রি হয়ে যায় পতিতালয়ের অন্ধকার কুটুরিতে।মেয়েকে না পেয়ে তার বাবা ২৭ মে থানায় এফআইআর করেন।
তারপরই তদন্তে নামে পুলিশ।মেয়েটির কললিস্ট চেক করে জানতে পারে সে রাজস্থানের ঝিনঝুন এলাকায় আছে।এরই মধ্যে প্রেমিককে গ্রেফতার করে পুলিশ।কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়,তাকে জেরা করে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইতিমধ্যে মেয়ে পাচারের খবর আসে শিশু সরক্ষা সংস্থা ‘মধ্যমগ্রাম সৃষ্টির পথে’-র কাছে।তারাও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে একযোগে তাকে উদ্ধারের কাজে এগিয়ে আসে।এরপর রাজস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তাকে এলাহাবাদে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ গাড়ি-সহ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ চালক
সেখান থেকে দিল্লি।তদন্তকারী দল দিল্লিতে গিয়ে জানতে পারে তাকে অসমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে পুলিশ এই চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জ্ঞিজ্ঞাসাবাদ করার পরই অসমের ঠিকানা পায়।
তাদের কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে শিলচরের কুখ্যাত যৌনপল্লি ১৪ নম্বর গলিতে রয়েছে সে।স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় তদন্তকারী দল সেখানে পৌঁছায়।
মধ্যমগ্রাম থানার এসআই পীযুষকান্তি মণ্ডলের নেতৃত্বে চারজন পুলিশকর্মী উদ্ধারকারী দলে ছিলেন।তারাই যৌনপল্লি থেকে ২৬ জুলাই মেয়েটিকে উদ্ধার করেন।
পাশাপাশি এই চক্রের ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।এবং মেয়েটির প্রেমিকের সঙ্গে এই চক্রের কোনওরকম যোগাযোগ আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
এই প্রসঙ্গে মধ্যমগ্রাম থানার এসআই পীযুষকান্তি মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, শিলচর থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করার পর তাকে একটি হোমে রাখা হয়েছিল। আজ রাতে তাকে মধ্যমগ্রাম থানায় নিয়ে আসা হচ্ছে।আজ মেয়েটিকে মহিলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে।এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মেয়েটিকে কিছুদিন হোমে রাখা হবে না সরাসরি তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে পাচার হওয়া মেয়েটিকে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে যে শিশু সুরক্ষা সংস্থা পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে সেই ‘মধ্যমগ্রাম সৃষ্টির পথে’-র সম্পাদিকা নুপূর ঘোষ জানান, “মেয়েটির পাচারের খবর আসার পর আমরা মধ্যমগ্রাম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি।
পূর্বের খবর : বাড়ির সামনে থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ বালক
প্রশাসন মেয়েটিকে উদ্ধার করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। পাশাপাশি দিল্লির চাইল্ড লাইন এবং শক্তিবাহিনীও সহযোগিতা করেছে।
এরজন্য এই কেসের তদন্তকারী অফিসরা পীযূষকান্তি মণ্ডল এবং ওই দুই সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাব।” পাশাপাশি তিনি জানান, শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখছি ইদানীং ১৩-১৬ বছর বয়সি মেয়েদরকে পাচার করার জন্য টার্গেট করা হচ্ছে।
এখন সোশ্যাল সাইটের এতো রমরমা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সেখান থেকে আলাপ, যোগাযোগ, ঘনিষ্ঠতা, আর এরপরই তাদের পাচারের টার্গেট করা হচ্ছে।
এই ব্যাপারে প্রশাসনিক মহলে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।তবে মানবপাচার বিরোধী দিবসের দিন পাচার হওয়া মেয়ে ঘরে ফেরা নেহাতই কাকতালীয়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584