উঠে যাওয়ার ভয়ে সন্ত্রস্ত্র সেনাবাহিনীর মূল শক্তি সরকারি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টারিগুলি

0
49

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ

পরাধীন ভারতে যখন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল তখন,১৮০১ সালে কোলকাতার কাশীপুরে একটি অস্ত্র কারখানা তৈরী হয় যার কাজ শুরু হয় ১৮০২ সালের ১৮ই মার্চ ৷

Government Ordinance Factories | newsfront.co
ফাইল চিত্র

সেইটিই ভারতে প্রতিরক্ষা শিল্প বা অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীর সূচনা৷ স্বাধীনতার সময় ভারতে ১৮টি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরী ছিল৷ ভারতের সেনাবাহিনীর প্রয়োজনে এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষে এরপর পর্যায়ক্রমে ভারতে আরো ২৩টি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠিত হয়৷ স্বাধীনতার পরবর্তী পর্যায়ে ভারত মোট ৫ টি যুদ্ধ লড়েছে, যার প্রতিটিতে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীগুলির ভূমিকা ছিলো অপরিসীম৷ সর্বশেষ কার্গিল যুদ্ধের শেষে তৎকালিন রাষ্ট্রপতিকে আর নারায়নন জাতীর উদ্দেশ্যে তার ভাষণে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীগুলির ভূয়সী প্রশংসা করেন ৷

সেই যুদ্ধে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীগুলির শ্রমিকরা অতিরিক্ত সময় কাজ করে দেশের সেনাবাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ যোগান দিয়ে তাদের দেশপ্রেমের পরিচয় দেয়৷ আর ঐ যুদ্ধের সময় প্রাইভেট বিদেশী কোম্পানিগুলিকে যা অস্ত্রের বরাত দেওয়া হয়েছিল তা যুদ্ধ শেষের ৬মাস পরে সরবারহ করা হয়৷ এতে প্রমান হয় অস্ত্রের যোগানের ক্ষেত্রে সরকারি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীগুলিই সেনাবাহিনীর মূল শক্তি৷ কিন্তু অস্ত্রশিল্প হচ্ছে এখন পৃথিবীর বৃহত্তম শিল্প৷ অতএব বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজিপতিদের এটা নজর এড়ানোর কোনও কারণ নেই৷

আরও পড়ুনঃ কাটল ধোঁয়াশা, শেষ দিনে জানা গেল ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এ প্রকৃত বরাদ্দ

প্রতিরক্ষা শিল্পে ঢালাও লাইসেন্স দেওয়া হল, গত এক বছরে আলিগর ও ত্রিচিতে দুটো বেসরকারি ডিফেন্স করিডোর খোলা হল, যা উদ্বোধন করলেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বয়ং ৷

প্রথমে বলা হল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে যে সমস্ত অস্ত্র বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়েছিল কেবলমাত্র সেগুলিই বেসরকারি কারখানাগুলো তৈরী করবে৷ সরকারি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীগুলির প্রোডাক্ট সরকারি কারখানাগুলোতেই তৈরী হবে৷ কিন্তু যাদের পুঁজিকে সম্বল করে সরকারি দলের ভোটের জয় তাদের স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবেই৷

প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রয়াত মনোহর পারিক্কর ২০১৬ সালে বললেন, সরকারি প্রতিরক্ষা কারখানাগুলিকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গেলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার কাজের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে হবে৷ শ্রমিক সংগঠনগুলো সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করল৷ ২০১৭-১৮তেই ১৭হাজার ৫০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো সম্ভব হল৷

তবে বেশ কিছু আইটেমকে পর্যায়ক্রমে নন কোর ঘোষণা করে সেইগুলির বরাত বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হলো৷ শ্রমিক সংগঠনগুলো বুঝতে পারলো খারাপ দিন আসন্ন৷ বামপন্থী সংগঠন এআইডিইএফ -এর আহ্বানে ২০১৭ এর জুলাই মাসে দিল্লীতে জন্তরমন্তরে ৩৭ দিনের অনশনের কর্মসূচি পালিত হল৷ সংসদে সরকার বিবৃতি দিল অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীগুলির চিন্তার কোন কারণ নেই, এদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত৷ কিন্তু ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাপক কমিয়ে দেওয়া হল৷ শ্রমিকের পে প্যাকেট ক্ষতিগ্রস্থ হল৷ ও টি প্রায় বন্ধ হয়ে গেল৷

আরও পড়ুনঃ লকডাউন ৪: কর্মক্ষেত্রে থার্মাল স্ক্রীনিং বাধ্যতামূলক, আরোগ্য সেতু নিয়ে সুর নরম

একেকজন শ্রমিকের মাসিক ১০০০০- ২০০০০ টাকা অবধি আয় কমে গেল৷ এর পরের সিদ্ধান্ত আরও ভয়ংকর, সিদ্ধান্ত নিল ৪১ টি সরকারি প্রতিরক্ষা কারখানাকে কর্পোরেশনে পরিনত করা হবে৷
সরকারি চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশের ৪১ টি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীর শ্রমিক কর্মচারীরা দলমত নির্বিশেষে ৩০ দিনের ধর্মঘটে সামিল হয়েছিল৷

এই ধর্মঘটে বামপন্থী সংগঠন এআইডিইএফ, আইএনটিইউসি এর আইএনডিডবলুএফ, বিএমএস এর বিপিএমএস সকলেই যোগ দিয়েছিল৷ ধর্মঘটের পঞ্চম দিনে যখন সকল শ্রমিক জান কবুল লড়াইয়ে অনড়, তখন সরকারপক্ষের টনক নড়ে ,প্রতিরক্ষা উৎপাদণ সংক্রান্ত আমলাদের মাধ্যমে সরকার প্রস্তাব দেয় এ বিষয়ে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি এবং সরকার পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷

আরও পড়ুনঃ ১৯৩০-র মহামন্দার ধাক্কা সামলানো ১১৮ বছরের পুরানো কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার মুখে

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে সরকার করোনা মহামারীর মতন দুর্যোগের সময়ে আত্মনির্ভরতার নামে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরী বোর্ডকে কর্পরেটাইজশনের কথা ঘোষণা করে দিলেন৷ ঘোষণায় এও বলা হল যে, এবার থেকে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরী বোর্ডকে শেয়ার বাজারের অন্তর্ভূক্ত করা হবে এবং দেশের যে কোন সাধারণ নাগরিক এই শেয়ার কিনতে পারবেন ৷

আরও বলা হল যে, বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে না, শুধু কর্পোরেটাইজেশন করা হচ্ছে ৷ যদি বেসরকারিকরণের উদ্দেশ্য সরকারের নাই থাকে তবে শেয়ার বাজারের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে কেন? আসলে এটা বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ নয়তো! উঠছে হাজারো প্রশ্ন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here