নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ
প্রতিটি দেশের ইতিহাসেই এমন কিছু মুহূর্ত রয়েছে যা সেই দেশের মানুষকে বারবার ভাবতে শেখায় সেই রাষ্ট্রের জনগণ হিসাবে তাদের সামগ্রিক ক্ষমতা ঠিক কতটা। পৃথিবী আগের থেকে অনেক বদলে গেছে, কারণ পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনারও পরিবর্তন ঘটেছে।
সব যুদ্ধ গায়ের জোরে বা সশস্ত্র সেনার উপস্থিতিতে জেতা যায় না। কিন্তু ভোটাধিকার এমন একটি প্রক্রিয়া যা একটি রাষ্ট্রকে একই সাথে গড়া এবং ভাঙার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ, রাষ্ট্র গড়ে ওঠা বা ধসে পড়ার পিছনে একটি রাজনৈতিক অভিমত কাজ করে, যা নির্ধারণ করে দেশের জনতা।
তবে ভোটাধিকার ক্ষমতা দেশের কুশল-মঙ্গল, সমাজে ঘটে চলা অন্যায়ের প্রতিবাদকে কতটা ন্যায়বিচার করে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। ২০১২ সালে রাজধানী দিল্লিতে ২৩ বছর বয়সী যুবতির বেসরকারি বাসে ধর্ষণের ঘটনা দেশের জনতার বিবেককে নাড়া দিয়েছিল, যা ফলপ্রসূ হয়েছিল শহরের রাস্তায় মোমবাতি আর প্ল্যাকার্ড হাতে ন্যায় কামনার্থে গণ মিছিলে।
তবে দগ্ধ ঘটনার স্মৃতির ঘা না শুকোতেই একই রকম নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল হায়দ্রাবাদে। একজন পশু চিকিৎসককে গণ ধর্ষণ করে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হল। ঘটনার একদিন পর ২৮ নভেম্বর নির্যাতিতার নিখোঁজ লাশ উদ্ধার হয় শাদনগরের একটি কালভার্ট থেকে।
ঘটনায় উচ্চ সংসদীয় সভায় শোরগোল পড়েছে ঠিকই কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ভারতবর্ষের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নারীরা কতটা সুরক্ষিত। পাশাপাশি একজন নারীকে যখন যৌন হেনস্থা ও নিপীড়ণের সম্মুখীন হতে হয়—রাষ্ট্র তার প্রতি কতটা ন্যায় বিচার করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ চাঁদের মাটিতে বিক্রমের ধ্বংসাবশেষ পেল নাসা
হায়দ্রাবাদ ধর্ষণ-হত্যা মামলার সাংসদরা যখন দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, তখন রাজ্য সভার চেয়ারম্যান এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু অপরাধীদের ‘মার্সি অ্যাপিল’ করার ক্ষেত্রে আরও একবার ভাবতে বলেন। তিনি বলেন, দোষীদের শাস্তি মুকুব করার আগে, অথবা স্বল্পমেয়াদী শাস্তি দেওয়ার আগে একবার ভাবা উচিত যে শাস্তি দেওয়ার পরেও নারীদের সামাজিক সুরক্ষার প্রতি কোনও বদল এসেছে কিনা, নাকি বছরের পর বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এই ঘৃণ্য কাজগুলি যারা করে তাদের প্রতি কেউ কিভাবে দয়া দেখাতে পারে—অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন নাইডু।
নাইডু আরও বলেছিলেন, অনেক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে, নারীদের প্রতি বিদ্বেষ বা যৌন নিপীড়ণ একটি ‘সামাজিক অসুস্থতা’। দেশের যে কোনও আইনি বা পুলিশি ব্যবস্থাতায় মহিলাদেরই লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত হয়ে আসতে হয়েছে।
আমাদের আগে দেখা উচিত কিভাবে দেশের বিচারব্যবস্থা নারীর মর্যাদা হ্রাস করে, অপরাধীদের উৎসাহ দিয়ে যুগের পর যুগ চলে আসছে। এতে নারীদের মনোবল যেমন ভাঙছেই, অন্যদিকে অপরাধীরা অপরাধ করার আরও প্রশ্রয় পাচ্ছে।
উদাহরণ স্বরূপ ধর্ষক বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের কথা বলা যায়, যাঁকে প্রচুর জনরোষের পর বিজেপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের দিন একটি হিন্দী দৈনিকে তাঁকে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পাশে দাঁড়িয়ে একটি বিজ্ঞাপনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ ট্রেনের পেন্টোগ্রাফ ভেঙ্গে বিপত্তি, দুর্ভোগ যাত্রীদের
উন্নাওতে উগু এলাকার পঞ্চায়েত চেয়ারম্যানের অর্থায়নে প্রাপ্ত বিজ্ঞাপনে ওই বিজেপি বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন। ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস এবং রক্ষাবন্ধন দিবসে বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা জানাতে ইচ্ছুক, বিজ্ঞাপনগুলিতে সেঙ্গারের স্ত্রীর ছবিও ছিল। বেঁচে থাকা বাবাকে মৃত দেখানোর মামলায় তাঁর নামও জড়িত হয়।
গত মাসে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০১৭ সালে উন্নাওতে বিধায়কের বাসভবনে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এই সমস্ত নিদর্শন থেকে এটাই বোঝা যায় যে ভারতবর্ষে জনরোষের তীব্রতা যতই হোক না কেন, আসামী রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হলে ঠিকই বেঁচে যান।
২০১৪ সালে লোকসভা সদস্যের ১৮৫ জনের নামে ফৌজদারি অভিযোগ ছিল এবং ১১২ জন সাংসদ সদস্যের নামে গুরুতর ফৌজদারি মামলা ছিল। ২০০৯ সালে ৫৪৩ জন সাংসদ সদস্যের মধ্যে ১৬২ জনের নামে জরুরী মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কাজেই বোঝা যাচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মহিলাদের সুরক্ষা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584