গালিগালাজ থেকেই জিয়াগঞ্জের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড

0
1411

রিচা দত্ত, মুর্শিদাবাদঃ

অবশেষে খুনের কিনারা ঘটল ঘটনার ছয় দিনের মাথায়।মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের তৎপরতায় জিয়াগঞ্জে শিক্ষকের পরিবার হত্যার সেই বন্ধু প্রকাশ পাল(৩৫), বিউটি পাল(৩০) এবং তাদের ছেলে আর্য পাল(৬) তাদের খুনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিয়াগঞ্জ -আজিমগঞ্জ পুরসভার ১৬ নং ওয়ার্ডের কানাইগঞ্জ লেবুবাগানে তাদের বাড়ি।

নিজস্ব চিত্র

ঘটনার পর থেকে শুরু হয়েছিল জেরা এবং একে একে বহুজনকে জেরা করা হয় এবং পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিল অনেকেই।

জেরা করা হয়েছিল বন্ধু প্রকাশ পালের ব্যবসায়িক সহযোগী সৌভিক বণিক, আলিয়াশ, দুধওয়ালা, বাড়ির কাজের মহিলা। অবশেষে এই নৃশংস হত্যার পেছনে রয়েছে উৎপল বেহারা, বাড়ি সাগরদিঘী থানার অন্তর্গত সাহাপুর গ্রামে।

নিজস্ব চিত্র

পুলিশ জানিয়েছে, বন্ধু প্রকাশ পাল সাগরদিঘী থানার অন্তর্গত বারালা সাহাপুর প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষক ছিলেন পাশাপাশি নানান রকম পলিসি করতেন। এস বি আই লাইফ, পিএনবি মেট লাইফ, কিছুদিন আগে শেয়ার মার্কেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডে উনি যুক্ত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুনঃ জিয়াগঞ্জের ভয়াবহ হত্যাকান্ডের কিনারা, ধৃত ১

ঘটনার দিন উদ্ধার হওয়া বন্ধুপ্রকাশের দেহ। ফাইল চিত্র

পলিসি করার দরুন বহু মানুষের টাকা যারা নিযুক্ত করেছিলেন ঠিকঠাকভাবে সেই পলিসির কাগজপত্র পেতেন না এই নিয়ে নানান জনের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।

উৎপল বেহেরা এগরাতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ওনার বাবা মাধব বেহেরা সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্কুলে গিয়ে বারংবার বন্ধু প্রকাশকে তাদের জমা টাকার রসিদ চাইতেন। কিন্তু বারবারই খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং গালিগালাজ করা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার। নিজস্ব চিত্র

সেই ক্ষোভের থেকে মাধবের ছেলে উৎপল বেহেরা গত ৩ অক্টোবর বাড়ি ফেরেন। জিয়াগঞ্জের সদরঘাটে নিজের বোনের বাড়ি যান ৫ অক্টোবর। ৭ অক্টোবর বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি কোন জায়গায় সেটাও দেখে যান এবং সেদিন নবমী ছিল।

পুজো চলাকালীন দশমীর দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ফোন করেন এবং উনার বাড়ি এবং নিজের পরিচয় দিয়ে নানান রকম কথা বলেন। কিন্তু সেখানেও কিছু রাগারাগি হয় গালিগালাজ চলে।

পুলিশি জেরার দরুন এটাও জানা গেছে ১২ঃ০৩ নাগাদ কোন একজনকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করেন বিউটি তারপর ১২ঃ০৬ নাগাদ ভিডিও কল করেন। এবং তারপর সামনে আসছে যে ১২ঃ০৬ থেকে ১২ঃ ১১’ র মধ্যে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

মৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বেশকিছু পলিশির কাগজপত্র, বিউটির লেখা চিঠি পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে উৎপলেরও পলিশির কাগজ ছিল।

প্রথমে বাড়ির দরজা খুলতেই সামনে প্রকাশকে পায় এবং তাকে অস্ত্র দিয়ে প্রথমে আঘাত করে। তারপর ঘরের ভিতরে ঢুকে তার ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে এবং তারপর তার ছোট্ট সন্তান আর্য পালকে নৃশংসভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে জামা কাপড় পাল্টে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন এবং সদরঘাট পেরিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।

১২ঃ৩০ নাগাদ দুধওয়ালা এসে প্রথমে দরজা ধাক্কায় তারপর ফোন করে কোন আওয়াজ না পেয়ে জানালা দিয়ে দেখেন তিনজনই আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আশেপাশে সকলকে খবর দিলে তারা সকলে এসে দেখেন, ততক্ষণ তারা সকলেই মারা গেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত একটা সামান্য গালিগালাজ থেকে শুরু হয় তারপর এতো বড় আকার নেয়। গালিগালাজ থেকে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং ঘটনা এইরূপ নেয়। উৎপল বেহেরার বয়স ২০ বছর।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here