শিবশঙ্কর চ্যাটার্জ্জী, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকা সেতুর কাজ পুনরায় শুরু করার দাবিতে বালুরঘাট বিডিও অফিসের ভিতর ধর্ণায় বসল বোয়ালদার অঞ্চলের চকডাঙা গ্রামের ক্ষুদ্ধ আদিবাসী বাসিন্দারা। ফলত ক্ষুদ্ধ আদিবাসীদের ধর্ণা বিক্ষোভের জেরে অচল হয়ে পড়ে একই বিল্ডিং এ থাকা বালুরঘাট বিডিও অফিস ও বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির অফিস।
এর ফলে এই দুই অফিসে আসা অনেকেই নিজেদের কাজ না সেরে খালি হাতে ফিরেছেন। পাশাপাশি তির-ধনুক নিয়ে ক্ষুদ্ধ আদিবাসীরা যুবক-সহ এলাকার পুরুষ ও মহিলাদের ঘেরাও করলে অফিসের কাজ লাটে ওঠে। যতক্ষণ না বিডিও অফিস এই কাজ শুরুর ব্যাপারে সম্মতি জানাচ্ছে ততক্ষণ এদের ধর্ণা জারি থাকবে বলে বিক্ষোভকারিরা জানিয়েছে।
যদিও বিডিও যথারীতি তার দফতরে না থাকার দরুণ এই সমস্যা মেটার আজ কোনও লক্ষণ ছিল না। দুরবস্থা এর মধ্যে না মিটলে জেলার জাতীয় সড়ক অবরোধের পাশাপাশি জেলা জুড়ে ব্যাপক আন্দোলনে নামার হুমকি দেয় বিক্ষোভকারিরা। এই নিয়ে প্রশাসনিক মহলে যথেষ্ট চঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ প্রশাসকের বদলে পরিচালন কমিটি চেয়ে ছাত্র বিক্ষোভ সামশেরগঞ্জ ডি.বি.এস. হাই মাদ্রাসায়
জানা গেছে, বালুরঘাট থানার বোয়ালদার অঞ্চলের বড়কাশিপুর এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত চকডাঙা গ্রামে যাওয়ার মাঝে একটি খাড়ি রয়েছে, যেটি এলাকায় কাশিয়াখাড়ি নামে পরিচিত।
ফলে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ-সহ অনান্য কাজে যাওয়া আসার জন্য একমাত্র ভরসা ছিল নড়বড়ে একটি কাঠের সেতু।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি ছিল যেহেতু এই এলাকায় প্রচুর আদিবাসীর বাস, রয়েছে অংগনাড়ী সেন্টার তাই ওই কাথের সেতুর পাশাপাশি একতি পাকা সেতু করে দেওয়া। কারণ অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে নানান সমস্যায় পড়তে হয়।
কিন্তু সে দাবি উঠলেও কেউ সেদিকে নজর দেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পরে বন্যায় সেই নড়বড়ে কাঠের সেতু ভেঙে যায়। বাধ্য হয়ে এলাকার মানুষ ওই খাড়ি পারাপারের জন্য একটি বাঁশের উপর দিয়ে যাতায়াত করত। এমনকি বর্ষায় তাদের দুর্দশার অন্ত থাকেনা বলেও অভিযোগ জানিয়েছে তাঁরা।
২০১৩ তে রাজ্যে পঞ্চায়েতে পরিবর্তন এলে স্থানীয়দের দাবি মেনে এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুব্যবস্থার জন্য বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতি সেখানে নতুন পাকা সেতু নির্মাণে হাত লাগায়। কিন্তু তারপর টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু হলে তা কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘ কয়েক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর গ্রামবাসীদের দাবিতে বিডিও হস্তক্ষেপে মাঝে একবার সেতুর নির্মাণ শুরু করা হলেও সেই বিডিও বদলি হতেই ফের তা বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে আজ অবধি কাজ বন্ধই রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অথচ তাদের ছেলে মেয়েদের ওই নড়বড়ে বাঁশে প্রাণ হাতে নিয়ে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে হচ্ছে এখনও।
আজ বালুরঘাট বিডিও অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভরত ওই গ্রামের আদিবাসী নেতা রঘু রায় সরব হয়ে জানান, পশ্চিমবঙ্গ বা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাইরে তাদেরকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মধ্যে জীবনযাপন করতে হচ্ছে স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও। এই অবস্থার উন্নতি না হলে, প্রশাসনের টনক না নড়লে পরবর্তীকালে তাঁরা বাধ্য হবেন পথ অবরোধের মাধ্যমে জেলা জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584