শিবশঙ্কর চ্যাটার্জ্জী, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন প্রাক্তন আরএলআই কর্মী মদন মোহন(৭০) বাবু। কোনও এক অজ্ঞাত কারণবশত তার চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এবং সেই সময় থেকেই চরম দারিদ্রতার মধ্যে জীবন কাটছে তাঁর।

২০১৭ সালের বিধ্বংসী বন্যায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকা জলে ডুবে যায়। সেই সঙ্গে গঙ্গারামপুর পুরসভার কাদিঘাট এলাকাও জলে তলিয়ে গিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষজন তখন আশ্রয় নিয়েছিল বিভিন্ন ত্রাণশিবির-সহ বাড়ির ছাদ, অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা বা জাতীয় সড়কে।
মদন মোহন বাবুর বাড়িও বন্যার জলে তলিয়ে যায় এক সময়। বাঁশের মাচা দিয়ে টঙ বানিয়ে সেই টঙের উপর আশ্রয় নিয়েছিলেন মদন বাবু।
আরও পড়ুনঃ জামিয়া-আলিগড়ের পরে সিএএ-র বিরোধিতায় একজোট লখনউ নাদওয়া কলেজ
বন্যার কয়েক দিনের মাথায় জল নেমে গেলেও, বানভাসি মানুষজন বাড়ি ফিরে গেলেও বাঁশের টঙ থেকে নেমে আসেননি তিনি। বন্যার আড়াই বছর কেটে গেলেও মদন বাবু মাচার উপরেই ঘর বেঁধে থাকেন। সংসারে রোজগারের কেউ নেই। বিধবা বোন ভিক্ষে করে যতটুকু পায় সেটা দাদা-সহ নিজে খেয়ে বেঁচে আছেন।

মদন বাবুর বিধবা বোনের কথা অনুযায়ী, তাঁর দাদা চাকরি করতেন। গত বেশ কয়েক বছর ধরে ভবঘুরে হয়ে যান তিনি । গত ২০১৭ সালের বর্ষায় সেই যে মাচায় ওঠেন, তারপর থেকে মাচাতেই খাওয়া, সেখানেই ঘুমানো।
মদন মোহনের কথায়, আমি ভিক্ষে করি। বাঁশের মাচাটি ভাঙতে বসেছে। সরকারি সাহায্য বলতে মাসে কয়েক কিলো চাল পাই। সরকারি ঘর পেলে ভাল হত।
আরও পড়ুনঃ জয়গাঁতে ট্রাকের ধাক্কায় স্কুটি চালকের মৃত্যু
স্থানীয়রা জানান, মদনবাবু আগে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতেন। এখন তিনি বাঁশের মাচার উপরেই থাকেন। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় মাচাতে জীবন কাটানোটা এখনও অবধি একটা অভ্যাস হয়েই থেকে গেছে। এমনকি মাচাতেই খাওয়া-থাকার পাশাপশি তিনি মাচাতেই মলমূত্র ত্যাগ করেন।
সরকারি কোনও সহায়তা এখনও পর্যন্ত এই পরিবার পায়নি। অনেকে মদন মোহন বাবুকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেই মনে করেন। সূত্রের খবর, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহরের কালিতলা এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিঘাট এলাকায়।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা আরও জানান, দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর আগে এই ভদ্রলোককে তাঁরা দেখতেন আরএলআই দফতরের কর্মী হিসেবে পোশাক পরে ডিউটি করতে। কিন্তু কোনও এক কারণে তাঁর চাকরি হঠাৎ করে চলে যাওয়ার পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। যদিও পুরোপুরি মানসিক বিকারগ্রস্ত তিনি নন, কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন ভাব রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক সেঙ্গার
বর্তমানে তাঁর এক বিধবা বোন গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করায় যে সামান্য অন্নটুকু জোটে তাতেই কাজ চালাতে হয়। পাশাপাশি অন্য বাড়ি রান্নাও করেন এই প্রাক্তন সরকারি কর্মী এবং তার অপর এক মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ভাই।
সরকারি সহায়তা বলতে একখানা শাড়ি জুটেছিল ; আর একখানা ত্রিপল। তার কপালে জোটেনি কোনও সরকারি আবাস বা বার্ধক্য ভাতা।
এমনকি তার বৃদ্ধা বোনটিরও বিধবা ভাতা মেলেনি বলে জানান তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ বিধবা দিদি আমাদের সংবাদমাধ্যমকে জানান, হাজার কষ্ট হলেও তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন তিনি ভিক্ষা করে ভাইদেরকে বাঁচিয়ে রাখবেন। কিন্তু তিনি সবসময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কারণ তার কিছু একটা হয়ে গেলে তার এই দুই ভাই এর করুণ পরিণতি কি হবে তা ভেবে।
গঙ্গারামপুর শহরের মতন জনবহুল জায়গায় এইভাবে তিনজন মানুষ এক টুকরো রুটির জন্য, একটুকু আশ্রয়ের জন্য লড়াই করছেন জীবনী সংগ্রাম বেঁচে থাকার এবং তাদের এই জীবন সংগ্রামে সহায়তা করার জন্য আসেনি গঙ্গারামপুর পৌরসভা, আসেনি গঙ্গারামপুর ব্লক বা আসেনি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। এখন দেখার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনের টনক নড়ে কিনা!
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584