পিয়া গুপ্তা,উত্তর দিনাজপুরঃ
চলতি মরশুমে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষী নিবাসে এখনও পর্যন্ত পরিযায়ী পাখি না আসায় চিন্তায় পড়েছে বন দফতর।একই সঙ্গে রায়গঞ্জের পরিবেশ প্রেমী মানুষেরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।এদিকে মন খারাপ শহরবাসীরও।
প্রতি বছরই মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষের মধ্যে এখানে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে।এই পরিযায়ী পাখি তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা কুলিক বনাঞ্চলই রায়গঞ্জের আকর্ষণ।কিন্তু এবছরও শহরের অতিথির দেখা নেই।বন দফতরের দাবি, রাজ্যে এখনও বর্ষা ঢোকেনি।
সেই কারণেই পরিযায়ী পাখিদেরও আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।তবে দিন পনেরোর মধ্যেই তারা এসে পড়বে বলে বনদফতরের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।এদিকে, শুধু মাত্র বর্ষা আসার দেরিই নয়,এই এলাকায় অবৈধভাবে জলাভূমি ভরাট করা,আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ প্রেমীরা।
আরও পড়ুনঃ পর্যটক আকর্ষণে কুলিক পক্ষী নিবাসের রেকর্ড
বনদফতরের রায়গঞ্জ ডিভিশনের ডিএফও দ্বিপর্ণ দত্ত বলেন, ‘সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষের দিকেই এরা আসে।এবার রাজ্যে এখনও বর্ষা ঢোকেনি। মনে হয় সেই কারণেই পরিযায়ীদের আসতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি আর ১৫ দিনের মধ্যেই তারা চলে আসবে। আমরা কুলিক পক্ষী নিবাসে সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছি।’
রায়গঞ্জের এক পরিবেশপ্রেমী বলেন,এখনও কুলিকে পরিযায়ী পাখি না আসায় আমরা চিন্তিত।আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্যেই মনে হয় এদের আসতে দেরি হচ্ছে। গরম বেড়েছে। দূষণের প্রভাবও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।এছাড়াও এই এলাকার জলাশয়গুলি থেকে পরিযায়ী পাখিরা খাদ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু এলাকার বহু জলাশয় অবৈধভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিযায়ীদের উপযুক্ত পরিবেশটাই হারিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি রীতিমতো উদ্বেগের।
রায়গঞ্জ শহর লাগোয়া কুলিক নদীর পাশে কুলিক পক্ষী নিবাস রয়েছে।এখানে প্রতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রচুর পরিমাণে ওপেন বিল স্টর্ক, নাইট হেরন, ইগ্রেট, কর্মোরেন্ট প্রভৃতি পরিযায়ী পাখিরা আসে।এদের মধ্যে সব থেকে বেশি ওপেন বিল স্টর্ক।এশিয়ার মধ্যে সব থেকে বেশি ওপেন বিল স্টর্ক পাখি এই সময়ে এখানে আসে।গত বছরও কুলিক পক্ষী নিবাসে সব থেকে বেশি ওপেন বিল স্টর্ক আসার রেকর্ড করেছিল। গত কয়েক বছর ধরেই কুলিক পক্ষী নিবাসে এদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এরা এখানে আসে।তারপর এখানকার গাছে বাসা বেঁধে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে ছানাদের বড় করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ এরা আবার চলে যায়।এই দীর্ঘ কয়েক মাস তারা কুলিক ও তা পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মাছ, গুগলি,শামুক প্রভৃতি খাদ্য সংগ্রহ করে।
বন দফতরের সূত্রে জানা গিয়েছে,ভিয়েতনাম, মায়ানমার,দক্ষিণ ভারত সহ আরও বেশ কিছু জায়গা থেকে এরা আসে।এই সব পরিযায়ী পাখিদের দেখতে কুলিক পক্ষী নিবাসে প্রতি বছরই প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়।সম্প্রতি কুলিক পক্ষী নিবাসটি নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। তার ফলে এখানে পর্যটকের সংখ্যাও সম্প্রতি বেড়েছে।
এনিয়ে শহরবাসীর গর্বের অন্ত নেই। বস্তুত রায়গঞ্জ মানেই কুলিক, আর কুলিক মানেই পরিযায়ী পাখি, কথাগুলি সমার্থক হয়ে গিয়েছে।কিন্তু চলতি মরশুমে পরিযায়ী পাখির দেখা এখনও না মেলায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বনদফতর ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কপালে। শহরবাসীরও মন ভার।যদিও সকলেই আশাবাদী কিছু দিনের মধ্যেই পরিযায়ীরা এখানে চলে আসবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584