মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
মাওবাদী কায়দায় পোষ্টার দিয়ে তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে বোমা রেখে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার দিনহাটা কৃষি মেলা মাঠ এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের ১ নম্বর ব্লক সভাপতি নূর আলম হোসেনের বাড়ির সামন থেকে ওই পোষ্টার ও বোমা উদ্ধার হয়। পোস্টারে ব্লক সভাপতির নাম ধরে উল্লেখ করা হয়েছে, “এখনও সময় আছে মাদার ত্যাগ করে যুবতে চলে আয়। এটা নমুনা মাত্র না হলে পরিবারের অসুবিধা হবে। পরে তোর কোন নেতা বা পুলিশ বাবাও বাঁচাতে পারবে না। দাদা মনে করলে পুলিশ শালাদের ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে পারে। ভালো করে ভেবে দেখ ৫ দিনের মধ্যেই মতামত জানাবি। আর হ্যাঁ পুলিশকে বল আমাদের লোক গুলোকে যেন তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়। এতে তোর মঙ্গল হবে। এটা নিয়ে হই হট্টোগোল করার চেষ্টা করিস না। সাবধান…।”
এমন ঘটনার প্রকাশ্যে আসতেই দিনহাটার পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দিনহাটার এসডিপিও উমেশ জি খান্ডোয়াল বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখান থেকে ওই পোস্টার ও দুটি বোমা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এসডিপিও বলেন, “ ঘটনার খবর পেয়ে ওই ব্লক নেতার বাড়ির সামন থেকে দুটি বোমা ও পোষ্টার উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” তৃণমূল কংগ্রেসের দিনহাটা ১ নম্বর ব্লক সভাপতি নূর আলম হোসেন বলেন, “আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছে। কিন্তু আমি তৃণমূল কংগ্রেস করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। এসবে আমি ভয় পাই না। তবে পরিবারের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। পুলিশ নিশ্চয়ই অপরাধীদের খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।” দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে কে বা কারা ওই পোস্টার রেখে গেছে তা তদন্ত করুক পুলিশ। ওই ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের চিহ্নিত করে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করুক।” সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক জগদীশ রায় বসুনিয়া বলেন, “ পোস্টারে যুব’র নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে তো ওরা জঙ্গল রাজ শুরু করতে চাইছে। যদিও পুলিশ ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে। আশা করি অপরাধীরা খুব বেশী দিন এসব করে পার পেয়ে যাবে না।” এদিকে যে যুব’র নাম করে ওই পোস্টার ও বোমা রেখে যাওয়া হয়েছে, সেই তৃনমূল যুব কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সাধারন সম্পাদক নিশীথ প্রামানিক বলেন, “ কিছু লোক যারা মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা হারিয়েছে। সমাজে যাদের কোন মূল্য নেই, তারা আজ কিছু সাজানো ঘটনাকে সামনে রেখে যুব তৃনমূল কংগ্রেসকে কুলশিত ও দুর্বল করার চক্রান্ত করছে। তবে তৃনমূল কংগ্রেস ও তার যুব সংগঠন এক, এর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে দিনহাটা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠী মাদার ও যুব’র লড়াই মারাত্মক আকার নেই। ইতিমধ্যেই দুই পক্ষের মধ্যে বহুবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক খুনের ঘটনাও হয়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধায় প্রশাসনিক সভা করতে এসে দিনহাটার আইন শৃঙ্খলা কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই পুলিশ বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু এভাবে মাওবাদী কায়দায় পোস্টার রেখে তার উপড়ে বোমা দেওয়ার ঘটনা কোচবিহারের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে। যা নিয়ে পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ এখনও সময় আছে। প্রশাসন অস্ত্র উদ্ধার ও সমাজ বিরোধীদের গ্রেপ্তারে না নামলে কোচবিহার জঙ্গল মহলের আকার ধারন করবে।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584