নিজস্ব সংবাদদাতা,উত্তর ২৪ পরগনাঃ
আমপানে বাড়ি ভাঙার টাকা অন্যায় ভাবে নিয়েছিলেন তৃণমূলের কিছু জনপ্রতিনিধি সহ তাদের ঘনিষ্ঠরা। রাজ্য সরকারের কার্যত হুঁশিয়ারির পর এবার সে টাকা ফেরতের ঢল নেমেছে। এদিন বারাসত ১ নম্বর, বারাসত ২ নম্বর, আমডাঙা, দেগঙ্গা ব্লকে ভিড় জমিয়েছিলেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ সহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও। কেউ টাকা ফেরত দিতে কিংবা কেউ টাকা ফেরতের আবেদন পত্র জমা দিতে।
বারাসত ২ নম্বর ব্লকের কেনিয়া খামারপাড়া গ্রামের মদনপুর এলাকার সদস্য ঝন্টু আলি সোমবার টাকা ফেরত দিতে বারাসত দুই নম্বর ব্লক অফিসে আসেন। ২০০০০ টাকার চেক ফেরত দেওয়ার পর ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “অন্যায় ভাবে টাকা নিয়েছিলাম, ভুল বুঝতে পেরে টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছি।” কিন্তু নিয়েছিলেন কেন ? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি ফোন কেটে দেন।
শুধু ঝন্টু নয়, দেগঙ্গা হাদিপুর ঝিকরার তৃণমূল ঘনিষ্ঠ জাহাঙ্গীর আলি, পেশায় ব্যবসায়ী। স্থানীয় জন প্রতিনিধির ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বাড়ি ভাঙার টাকা পেয়েছিলেন। সোমবার তিনি দেগঙ্গা ব্লক অফিসে বাড়ি ভাঙার ২০০০০ টাকা ফেরত দিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ অমিল বেসরকারি বাস, দুর্ভোগ অব্যাহত, অনুমতি বাতিলের হুঁশিয়ারি জেলা প্রশাসনের
আমপানে বাড়ি ভাঙার টাকা নিয়ে বারবার শাসকদল তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। সম্প্রতি এই অভিযোগেই স্থানীয়দের বিক্ষোভে দেগঙ্গা ব্লক অফিসের সামনে রণক্ষেত্রের আকার নেয়। তারপরেই রাজ্য সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দের নিয়ে বৈঠক করেন বিভিন্ন এলাকার বিডিওরা। প্রশাসন সূত্রে খবর, বৈঠকে বিডিওরা সাফ জানিয়ে দেন যারা অন্যায় ভাবে টাকা নিয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।
সেই কথামতো বারাসত ২ নম্বর ব্লকের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আসের আলি বাড়ি ভাঙার টাকা ফেরত দিয়ে এসেছেন। আসেরের আত্মীয়রা বাড়ি সারাইয়ের টাকা পেয়েছেন এমন অভিযোগে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন এলাকাবাসীরা। এ দিন তিনি বলেন, “আগেই বলেছিলাম টাকা ফেরত দেব, আমি নিজে এবং পরিবারের দুজন টাকা ফেরত দিয়ে এসেছি।”
আরও পড়ুনঃ দুর্নীতির অভিযোগে পঞ্চায়েত ঘেরাও করে বিক্ষোভ স্থানীয়দের
মঙ্গলবার টাকা ফেরতের আবেদন পত্র হাতে বারাসত ১ নম্বর ব্লক অফিসে দেখা গেল কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজার তারিকুল ইসলামকে। তার সঙ্গে রয়েছেন তারই ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। পাশাপাশি আমডাঙা ব্লক অফিসে ২০০০০ টাকার চেক হাতে দেখা গেল মরিচা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য আজিজুলের ভাই মফিজুলকে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অনেকেই টাকা ফেরত দিতে চাইছেন, এবং অনেকেই টাকা ফেরত দিয়েছেন, কিন্তু তারা সামনে আসতে চাইছেন না। সে কারণে টাকার চেক কিংবা টাকা ফেরতের আবেদন পত্র ঘনিষ্ঠ কারোর হাতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে আরও খবর যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় কয়েকটি ব্লক বাদ দিলে, মঙ্গলবার অবধি বাদবাকি ব্লক থেকে গড়ে ৫০ জন বাড়ি ভাঙার টাকা ফেরত দিয়েছেন। এমনকি অনেকেই আবেদন করেছেন। সবাই টাকা ফেরত দিলে সেই সংখ্যাটা গড়ে ২০০ জন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
আরও পড়ুনঃ কালিয়াগঞ্জে বিদ্যুৎ দফতরে ডেপুটেশন সিপিএমের
ফলে একটা বড় অঙ্কের টাকা সরকারি কোষাগারে ফিরতে চলেছে এই বিষয়ে নিশ্চিত করেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শাসক চৈতালি চক্রবর্তী। এ দিন তিনি বলেন , ” দুই প্রকারের আবেদন পত্রের আয়োজন করা হয়েছে। যারা টাকা ফেরত দিতে চান এবং যারা টাকা পাননি। অনেকেই টাকা ফেরত দিয়েছেন। যারা বাড়ি ভাঙার টাকা পাননি তাদের আবেদনের ক্ষেত্রে সঠিক তদন্ত করে তাদেরকে টাকা দেওয়ার কাজ চলছে।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584