মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কোচবিহার জেলা সভাপতি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কাজ কর্মের বিরোধিতা করে দলীয় সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। পরে দেখা যায় নিজের কার্যালয় থেকে দলনেত্রীর ছবি এবং তৃণমূলের পতাকা সরিয়ে ছিলেন মাস দেড়েক আগেই।
এবার দলনেত্রীর প্রতিই অনাস্থা প্রকাশ করলেন তিনি। ২ অক্টোবর জেলায় ব্লক কমিটি ঘোষণা নিয়ে অসন্তোষের শুরু। পরে পিকের কাজ নিয়ে কটাক্ষও করেন মিহির গোস্বামী।মিহির বাবু নিজের ফেসবুক ওয়ালে ২৪৮ শব্দ দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, এবারের দীপাবলি নিস্প্রভ হওয়ায় তিনি যেমন বিষণ্ণ। তেমনি যে দলের অভিধানে সম্মান শব্দটি অনুপস্থিত সেই দলে ২২ বছর কাটিয়ে দিয়ে আজ তিনি বিস্মিত।
তার কথায়, তিনি অন্য অনেকের মত দিদির জন্যই তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন। কিন্তু এখন তার বোধগম্য হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস এখন আর তার দিদির দল নয়। দিদি ঐ দলে এখন নিঃস্পৃহ। তাই দিদির লোকরাও ঐ দলে এখন অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন। মিহির বাবুর কথায়, “অন্যায্য সব কিছু মেনে জো হুজুর করে টিকে থাকতে পারলে থাকো, নতুবা তফাৎ যাও।” তার আরও অভিযোগ, সংগঠনের সমস্ত পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ৪২ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকের ফোন পেয়েছেন। অনেকেই তাকে দলবদলের জন্য অফার দিয়েছেন।
কিন্তু দিদির কোন ফোন বা বরখাস্তনামা কিছুই আসেনি। তাই এই দল যে আর নেত্রীর হাতে নেই, সেটা এবারের শ্যামা মায়ের পুজােয় আরও নিশ্চিত হয়েছেন মিহির বাবু। লিখেছেন, “আমার দল আর আমার নেত্রীর হাতে নেই, অর্থাৎ এই দল আর আমার নয়, হতে পারে না। শ্যামা মায়ের আরাধনালগ্নে আমার এই অনুমান আরও দৃঢ় হয়েছে। তাই এই দলের সঙ্গে সমস্ত রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করাটাই কি স্বাভাবিক নয়?”বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে বিদ্রোহ ততই বাড়ছে। ইতিমধ্যেই পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ইঙ্গিত পূর্ণ বক্তব্য, তৃণমূলের পতাকা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ ছাড়াই বিভিন্ন সভা করা।
আরও পড়ুনঃ ফের সম্পত্তির হিসেব চেয়ে সস্ত্রীক মুকুল রায়কে নোটিশ ইডির
রাজ্য জুড়ে দাদার অনুগামীদের পোস্টার নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে কার্যত ঝড় উঠেছে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন বিধায়কের পিকের টিম নিয়ে আপত্তি তুলতে দেখা গিয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের অন্দরে ওঠা ঐ ঝড়ে দলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা হয় অথবা আদৌ হয় কিনা, এখন সেটাই দেখার।
বিধায়ক মিহির গোস্বামীর ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে দেওয়া হল……
বহুকাল পরে এবার এক নিস্প্রভ দীপাবলী দেখে মন বিষণ্ণ হয়েছিল। তেমনই ভেবে বিস্মিত হয়ে যাই, যে দলের অভিধানে ‘সম্মান’ বলে শব্দটিই অনুপস্থিত সেই দলে বাইশটা বছর কাটিয়ে দিলাম! কী করে সম্ভব হল, কেন তা সম্ভব হল এসব প্রশ্ন উঠে আসে নিজের মনেই! উত্তর একটাই খুঁজে পাই, দিদি! দলের ভেতর অজস্র অপমান অবমাননা ক্রমাগত সহ্য করে গিয়েছি অকারণে, চুপ করে থাকার জন্য শুভানুধ্যায়ীরাও বিরক্ত হয়েছেন বারবার। কিন্তু আমার উত্তর একটাই ছিল, দিদি! যার উপর বিশ্বাস-আস্থাতেই এতদিন টিকে ছিলাম।
কিন্তু ঊনিশশো ঊননব্বই সাল থেকে তাঁর নেতৃত্ব মেনে দীর্ঘ তিরিশ বছর অতিক্রম করার পর হঠাৎ বোধগম্য হয়েছে, এ দল এখন আর আমার দিদি-র দল নয়, দিদি এখানে নিস্পৃহ। তাই ‘দিদির লোক’ এখানে অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন। অন্যায্য সবকিছু মেনে নিয়ে ‘যো হুজুর’ করে টিকে থাকতে পারলে থাকো, নয়ত তফাৎ যাও।সংগঠন থেকে আমার অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা করার পর ছয় সপ্তাহ কেটে গেছে। এই বিয়াল্লিশ দিনে আমি সব দলের কাছ থেকে এক বা একাধিক ফোন কল পেয়েছি, কথা বলেছি। বহু পুরনো রাজনৈতিক বন্ধুর ফোন পেয়েছি রাজ্যের বাইরে থেকেও।
আরও পড়ুনঃ ফের বঙ্গে শক্তি বৃদ্ধি বিজেপির, গেরুয়া শিবিরে যোগ বাম নেত্রীর
কেউ অফার দিয়েছেন, কেউ পরামর্শ দিয়েছেন, কেউ শুধু ভালবাসা দিয়েছেন। সতীর্থ অনেক সহকর্মী নেতার ফোন এসেছে বাংলার নানা প্রান্ত থেকে, কলকাতা থেকে, সবার ফোন ধরা হয়ত সম্ভব হয়নি। কিন্তু গত ছয় সপ্তাহে খোদ নেত্রীর কাছ থেকে কোনও ফোন আসেনি। কোনও বরখাস্তনামা কিংবা বহিস্কারের নির্দেশও আসেনি তাঁর কাছ থেকে।আমার দল আর আমার নেত্রীর হাতে নেই, অর্থাৎ এই দল আর আমার নয়, হতে পারে না। শ্যামা মায়ের আরাধনালগ্নে আমার এই অনুমান আরও দৃঢ় হয়েছে। তাই এই দলের সঙ্গে সমস্ত রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করাটাই কি স্বাভাবিক নয়?
আরও পড়ুনঃ বাংলাজুড়ে শীতের আমেজ
যদিও তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন, যদি তৃণমূল বিধায়ক বিজেপিতে আসতে চান, আমাদের দরজা খোলা আছে। অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগেও বহুবার তৃণমূল নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন মিহির গোস্বামী।
একাধিকবার বিস্ফোরক মন্তব্য করে উস্কে দিয়েছেন দল ছাড়ার জল্পনাও।উল্লেখ্য, ২ অক্টোবর কোচবিহার জেলা তৃণমূলের ব্লক কমিটি ঘোষণা হলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক।
এর পরই তিনি দলের যাবতীয় সাংগঠনিক পদ ছেড়ে দেন। এমনকী, প্রকাশ্যে তৃণমূলের ভোট–কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে কটাক্ষও করেন তিনি। ২৯ অক্টোবর বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক তার সঙ্গে দেখা করলে জল্পনা বাড়ে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ তাকে বিধায়ক পদ ছাড়তে বলেন।
যদিও এ ব্যাপারে মিহির গোস্বামীর জবাব, দলনেত্রী বললে এখনই বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে তিনি প্রস্তুত। কিন্তু তার ইস্তফা দেওয়ার পর একের পর এক ফেসবুকে মন্তব্য লেখায় খানিকটা হলেও অস্বস্তিতে পরেছে শাসক দল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584