শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
করোনা জেনে আতংক ছড়িয়েছে এ রাজ্যের বন্দিদের মধ্যেও। রাজ্যে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার আগেই দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দিদের তাণ্ডবের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগার থেকে মোট ৩০৭৮ জনকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত, রাজ্যের বিশেষ কমিটি।
গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে কারা দফতর সূত্রের খবর। করোনায় জেল মুক্তির আন্দোলনে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। যার ফলে কয়েকজন বন্দির মৃত্যু হয়েছিল। এমনকি কারাগারে অগ্নি সংযোগের মত ঘটনাও ঘটে।
আরও পড়ুনঃ সংকটের দিনে শহরবাসীর পাশে দাঁড়ালেন, মিউনিসিপ্যালিটি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ” প্রেরণা “
তবে কারা দফতরের কর্তারা মনে করছেন, অনেক জেলবন্দিকেই প্যারোলে কিছুদিনের জন্য মুক্তি দিতে হয়। আবার অনেকের আত্মীয় বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। বাইরের দুনিয়ায় গিয়ে, ফের সংশোধনাগারে ফিরলে অথবা বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে আসলে করোনার মত ভয়াবহ রোগের সংক্রমণের আশংকা থেকেই যায়। সেই কারণেই সমস্ত বন্ধুদের ছেড়ে না দেওয়া হলেও, প্রশাসনিক স্তরে রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলে বন্দিদের চাপ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিভিন্ন কম গুরুত্বপূর্ণ অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ১০১৮ জন বন্দিকে তিন মাসের জন্য প্যারোলে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন অপরাধের খাতায় নাম লেখানো ২০৬০ জন বিচারাধীন বন্দিকেও তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তী জামিনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যদিও কারা দফতর সূত্রের খবর, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ৮৯ জন বিচারাধীন বন্দিকে ছাড়া হবে। এছাড়া প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ১৬৮, হাওড়া সংশোধনাগারে ৭৯, জলপাইগুড়ি ১৪৮, বর্ধমান ৫৯, মালদা ১৪০ এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের ১৪ বিচারাধীন বন্দিকে করোনার জেরে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে এই মুহূর্তে সাড়ে ২৬ হাজার বন্দি রয়েছে। প্রসঙ্গত, গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্ট তাই, দেশের সংশোধনাগারগুলির ভিড় কমাতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য গুলোকে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয়।
শীর্ষ আদালতের এমন পর্যবেক্ষণের পর ১৯ মার্চ রাজ্যের এ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেন। সেই মোতাবেক হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বিশেষ কমিটি করে দেন।
তবে এই বিশেষ কমিটিতে রয়েছেন রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি চেয়ারম্যান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত, রাজ্যের কারা বিভাগের অধিকর্তা এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান সচিব। ২৭ মার্চ বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নেয় বিশেষ কমিটি। করোনা সংক্রমণ আটকাতে সংশোধনাগারগুলির ভিড় কমাতেই এই সিদ্ধান্ত।
আগামী ৬ এপ্রিল ফের বৈঠকে বসবে এই বিশেষ কমিটি। তাতে রাজ্যের সংশোধনাগারগুলির ভিড়ের চাপ কমানোর জন্য আরও এক দফা সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584