রকমারি চায়না আলোয় ব্রাত্য চিরাচরিত ‘স্বর্গবাতি’

0
268

নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

রকমারি চায়না আলোয় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার চিরাচরিত স্বর্গবাতি দেওয়ার প্রথা । তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না এই স্বর্গবাতি দেওয়ার রেওয়াজ।

lighting | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

গ্রামবাংলায় গোটা কার্তিক মাস জুড়ে এই স্বর্গবাতি দেওয়ার রীতি চলে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি থেকে কার্তিক মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত একমাস ধরে প্রতি সন্ধ্যায় এই স্বর্গবাতি দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে।বাড়িতে সন্ধ্যাবাতি দেওয়ার সময় তুলসী তলায় একটি লম্বা বাঁশের আগায় একটি প্রদীপ জ্বালিয়েও বাঁশের ডগায় ঝুলিয়ে দেন কুলবধূরা। অনেকটা ঠিক পতাকা তোলার মতো করে ঐ দীপদানকে বাঁশের আগায় উঠানো এবং নামানো যায়।

stand pradip | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

বাড়ির কুলবধূরা সন্ধ্যাবাতি দেওয়ার সময় মাথায় ঘোমটা দিয়ে ওই স্বর্গবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে বলেন “দামোদরায় নভসি তুলায়াবে লোলয়া সহ প্রদীপন্তে / প্রযচ্ছামি নম অনন্তায় বেধসে”। অর্থাৎ কার্তিকমাসে লক্ষ্মীর সঙ্গে নারায়ণকে আমি আকাশে প্রদীপ দিয়ে বিধিকর্তাকে নমস্কার জানাই। এখানে ‘দামোদর’ হলেন নারায়ণ এবং ‘লোলয়া’ হলেন লক্ষ্মী। অর্থাৎ লক্ষ্মীনারায়ণের উদ্দেশ্যেই এই রীতি ।

pradip light | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

তবে অনেকেই এই উপচারের পেছনে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন। কারো মতে, কার্তিক মাস থেকেই দক্ষিনায়ণ শুরু হয়। ফলে এ সময় দিন ছোট আর রাত বড় হয়।তখনকারদিনে আলোর অভাব মেটাতেই গৃহস্থরা এই বাতি দেওয়ার প্রথা চালু করেন৷ আবার অনেকে বলেন এই কার্তিক মাসেই বাড়িতে সোনার বরণ ধান কেটে নিয়ে আসার সময়৷ গ্রাম বাংলার চাষীরা ধানকে লক্ষ্মী বলে মনে করেন। তাই গ্রাম বাংলার কৃষিজীবী মানুষেরা তাদের আরাধ্য দেবতা লক্ষ্মীনারায়ণের উদ্দেশ্যে এই দীপ জ্বেলে ঘরটিকে আলোকিত করেন। যাতে স্বর্গ থেকে লক্ষ্মীনারায়ণ তাঁদের বাড়িটিকে চিনে আসতে পারেন। তারা মনে করেন এই দীপদানের ফলে লক্ষ্মীনারায়ণের কৃপায় সুখ স্বাচ্ছ্যন্দ এবং মহাসম্পদে পরিপূর্ণ হয়ে তাদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে অচিরেই।

আরও পড়ুনঃ রণগ্রাম সেতুর পরিদর্শনে মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক

বাংলা প্রবাদে রয়েছে, ‘নাতি স্বর্গে দেবে বাতি’। অর্থাৎ দাদু, ঠাকুমার মৃত্যুর পরে তাঁদের অবিনশ্বর আত্মার উদ্দেশ্যে আলো দেখাবে তাদের নাতি- নাতনিরা। অর্থাৎ পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় বাড়ির ভিটে থেকে একটু উঁচু করে কোনো স্থানে বাতি দেখানোর রীতিই হোলো স্বর্গবাতি৷ আকাশকে স্বর্গ ভেবে স্বর্গারোহনের পথে বাঁশের ডগায় জ্বালানো হয় স্বর্গবাতি। এছাড়াও এই কার্তিকমাসে ফসল নির্বিঘ্নে বাড়িতে তোলার জন্য গৃহস্থের লোকজন স্মরণাপন্ন হন দেবসেনাপতি কার্তিকের। তাই কার্তিকের মনোরঞ্জনের জন্য ঘরের চালে, উঠোনে এবং আকাশের পানে দীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। সেই আলোতে দেবসেনাপতি ফসল পাহারা দেন গৃহকর্তার।

আরও পড়ুনঃ পটাশপুরে মহিলা হকি প্রতিযোগিতা

তবে যে কারণেই থাক না কেন প্রাচীন কাল থেকেই এই রীতি গ্রাম বাঙলার প্রতিটি গৃহস্থের বাড়িতে লক্ষ্য করা যেত।বর্তমানে গ্রাম বাংলাতেও আর সেভাবে চোখে পড়ে না এই স্বর্গবাতি দেওয়ার রীতি। গৃহস্থরা এখন বাজার থেকে রকমারি চায়না আলো কিনে এনে তা জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। ফলে এই চায়না আলোর দাপটে লুপ্ত হতে হতে আজ প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে গ্রামবাংলার চিরাচরিত প্রথা স্বর্গবাতী দেওয়ার রীতি । তবে এখনও পুর্বপুরুষের শুরু করা স্বর্গবাতি দেওয়ার প্রথা টিম টিম করে বাঁচিয়ে রেখেছেন গ্রাম বাংলার কতিপয় মানুষ।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড়ের প্রত্যন্ত শাখাভাঙ্গা গ্রামের ধীরেন খাঁ, আদিত্য খাঁ এদের বাড়ি গেলে এখনও চোখে পড়বে এই স্বর্গবাতি দেওয়ার প্রথা। তাদের বিশ্বাস, এই আকাশবাতি অমঙ্গল এবং অতিপ্রাকৃত দুষ্ট শক্তিকে প্রতিহত করে সংসারের মঙ্গল করে। তাই পুর্বপুরুষদের শুরু করা প্রথা এখনও টিকিয়ে রেখেছি।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here