শতবর্ষ প্রাচীন দেব পরিবারের দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা

0
107

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

Traditional dugra puja of dev family | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

নেই কামানের শব্দ। এখন হাতিশালায় হাতি আর ঘোড়াশালায় ঘোড়া নেই। উৎসব অনুষ্ঠানে কাছারিবাড়ির প্রাঙ্গণে আর বাজেনা নহবৎ। তবু দুর্গাপুজো এলে অতীতের সেই ঐতিহ্য ফিরে আসে ডাক কাঁসরঘণ্টা এবং শঙ্খধ্বনীতে। বেলদা থানার কুশমুড়ির দেব পরিবারে। শতবর্ষ প্রাচীন দেব পরিবারের দুর্গাপুজো এখন আর দেবী দশভূজার মূর্তি গড়া হয়না।

Traditional dugra puja of dev family | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

ঘট বসিয়েই দেবী দূর্গার আরাধনা হয়। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের সাথেসাথে কাছারিবাড়ির জৌলুস কমলেও ঐতিহ্য রক্ষায় দেবপরিবারের বর্তমান উত্তরসূরিরা আপ্রাণ প্রয়াসী।এই কাছারিবাড়ি এখন পোড় বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আগাছায় ছেয়ে গিয়েছে বাড়ির সমগ্র অংশ। কিছু আগাছায় নাম না জানা কিছু ফুল ফুটে উঠেছে ।

Traditional dugra puja of dev family | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

যেন সেই ঐতিহ্যের স্মারক ক্ষয়িষ্ণু বাড়িটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। দেব পরিবারে বাড়িতে ঢোকার মুখেই এখনো রয়েছে প্রায় ভঙ্গুর, তৎকালীন সেই প্রাচীন ঐতিহ্যশালী একটি তোরন। যার সামনে একসময় ঘোড়ায় ও হাতির পিঠে চড়ে তৎকালীন রাজারা ও ইংরেজরা আসতেন রাজবাড়িতে।

Traditional dugra puja of dev family | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

প্রায় দেড়শ বছর আগে বিহারের রাজপুতদের একজন গুরুপ্রসাদ দেব কুশমুড়ি এলাকায় সুদের ব্যবসা করতে আসেন। উদায়স্ত ঋণ ব্যবস্থা ছিল। সূর্যাস্তের পর ঋণ শোধ করতে নাপারলেই ঋণ গ্রহীতার জমি দখল করে নিতেন ঋণ দাতা। এভাবেই অধুনা বেলদা ১ গ্রামপঞ্চায়েতের কুশমুড়িতে দেব পরিবারের প্রতিষ্ঠা করেন। এই পরিবারের দুই সন্তান রাধামোহন দেব এবং গোলকমোহন দেব। এঁরাই তদানীন্তন রাজার কাছ থেকে চৌধুরী উপাধি লাভ করেন।

Traditional dugra puja of dev family | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

চৌধুরী রাধামোহন দেব এবং চৌধুরী গোলকমোহন দেব, পরিবারের কুলদেবতা ব্রজরাজ দেব মহাপ্রভুর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে দেবপরিবারের কুলদেবতার এই মন্দির তৈরি করতে প্রায় ১২ বছর সময় লেগেছিল। এখন বর্তমান উত্তরসুরিরা দূর্গাপূজার আয়োজন করেন। আর এই কুল দেবতার মন্দির এর কাছেই রয়েছে দুর্গা মন্দির। তবে তার অবস্থা এখন জরাজীর্ণ। বর্তমান যেসকল উত্তরসূরিরা রয়েছেন তারা সবাই মিলে অর্থ দিয়ে এবছর মন্দিরটিকে পুনরায় ঠিক করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। সামনে আর কটা দিন পরে পুজো তাই যার কাজও চলছে এখন বেশ জোরকদমে।

Traditional dugra puja of dev family | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

পরিমল দেব অমল দেব ত্রিপুরারি দেব দীপক দেব প্রবীর দেব ঊষারানী দেব কিরন দেব অরুন দেব দিব্যেন্দু দেব এবং সদারানী দেব এই দূর্গাপূজা পরিচালনা করেন। আগে ডাকের সাজের দেবী দশভূজা তৈরির জন্য খরচ হত লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু একদিকে জমিদারির পতন, আর অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পূজার খরচকে সংকুচিত করেছে। তাই ১৯৭২ সাল থেকে কুশমুড়ির প্রাচীন কাছারিবাড়ির অঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঘটপূজা। অথচ একসময় কুশমুড়ির দেবপরিবারের দূর্গাপুজা ছিল জেলার সেরা পূজা। এখানকার জমিদারই কেশিয়াড়ির সর্ব্বমঙ্গলা মন্দিরের জন্য প্রায় ৫০ বিঘা জমি দান করেছিলেন। দেব পরিবারের দুর্গাপুজা শুরুর আগে সর্ব্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজা দেওয়া হত। এই প্রথা এখনও আছে। দেব পরিবারের পূজা আগে সর্ব্বমঙ্গলা মায়ের কাছে দেওয়ার পর শুরু হয় দুর্গাপুজো। আবার দেব পরিবারের দুর্গাপুজো শুরুর আগে কামান দাগা হত। দেব পরিবারের দুর্গাপুজোর সূচনার শব্দ শোনার পর অন্যান্য জায়গার পূজা শুরু হত।
এখনও কুলদেবতার মন্দিরে নিত্যপুজা হয়। সেইপুজার খরচ ও সব শরিক মিলে দেন। অতীতে দূর্গাপূজার প্রায় একমাস আগে থাকে সাধুসন্তরা এখানে আসতেন। দেবীর মূর্তি গড়তেন মেদিনীপুর ও ঘাটালের শিল্পীরা। জমিদার পরিবারের লোকজন পালকি ছাড়া বেরতেন না। এখন আর সেসব নেই।

Barun Dev | newsfront.co
বরুন দেব, দেব পরিবারের সদস্য।নিজস্ব চিত্র

পূজার আচার মেনে এখানে ঘটপুজা শুরু হয় সপ্তমী থেকে। অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। পূজার দিনগুলিতে নিষ্ঠার সঙ্গে আচার মানা হয়। দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসতেন দেবপরিবারের দূর্গাপূজা দেখতে। আগে দূর্গাপূজার দিন গুলিতে যাত্রা পালা হত। এখন আর এসব হয়না। তবুও ঘটপূজার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। একদিকে পূজা, হোম, যজ্ঞ হত। আর অন্যদিকে দানধ্যান করা হত। সাধু সন্তদের শুধু থাকা খাওয়া নয় তাঁদের বিভিন্ন সামগ্রী দান করা হত।

আরও পড়ুনঃ পুজোর আগে ব্যস্ততা তুঙ্গে ঢাকি পাড়ায়

এখন দান ধ্যানের বালাই নেই। তবু অনেকে আসেন দেব পরিবারের ঘট পূজা দেখতে। সপ্তমীতে পাত পেড়ে খাওয়ানো ও হয় অতিথিদের। পরিবারের অন্যান্য জায়গায় যারা রয়েছেন আত্মীয়স্বজনরাও হাজির হন ওই দিন। একসঙ্গে দূর্গাপূজার এই কটা দিন বেশ আনন্দের সঙ্গে কাটান বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here