নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
সরকারি চাকরির দিন শেষ ত্রিপুরায়। আধিকারিক থেকে করনিক পর্যায়ের নিয়োগের জন্য বেসরকারি সংস্থার থেকে ‘আউটসোর্সিং’ করবে বিপ্লব দেবের সরকার।
“ত্রিপুরা সরকারের কর্মসংস্থান ও জনশক্তি পরিকল্পনা অধিদপ্তর রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগগুলিতে নির্দিষ্ট রেট ভিত্তিতে জনবল সরবরাহের জন্য এজেন্সিগুলিকে দায়িত্ব দিয়েছে।” বিজেপি নেতৃত্বাধীন ত্রিপুরা সরকার ত্রিপুরার যুব সমাজের জন্য সরকারী চাকরি পাওয়ার আশা একেবারেই শেষ করে দিলো। বিজ্ঞপ্তি অনুসযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার বিভিন্ন সরকারী দফতরে কর্মী সরবরাহের জন্য পাঁচটি বেসরকারি সংস্থার সাথে চুক্তি করেছে।
গ্রুপ ডি থেকে সরকারী আধিকারিক সবস্তরের কর্মী এই পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা সরবরাহ করতে চলেছে। এমনকি ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (টিপিএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে যে সমস্ত পদে নিয়োগ হওয়ার কথা সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও পরিচালনা করবে এই পাঁচটি বেসরকারী সংস্থা। ডিইএসএমপির পরিচালক নরেশ বাবু স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে এজেন্সিগুলি রাজ্য সরকারকে যে পরিমাণ কর্মচারী সরবরাহ করবে, তার ভিত্তিতে মাসিক কমিশন পাবে।
রাজ্য সরকারের পে-মেট্রিক্সের লেভেল ১, লেভেল ৫, লেভেল ১১-র এক হাজার পদের জন্য স্নাতকোত্তর পর্যন্ত যােগ্যতার লােক নির্বাচন করবে বেসরকারি এজেন্সিগুলি, কিন্তু তাঁদের বেতন সমপর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় অনেক কম! যেমন, রাজ্যে সর্বনিম্ন সরকারি কর্মীর বেতন ১৬ হাজার টাকা। একজন লােয়ার ডিভিশন ক্লার্ক এখন চাকরির শুরুতেই ৩৪,৪০০ থেকে ৫৬,৯০০টাকা পান।
আরও পড়ুনঃ গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে বাংলাদেশ নেপালের চেয়েও খারাপ অবস্থা ভারতের, সমীক্ষা রিপোর্ট
কিন্তু পাশের টেবিলে সমকাজে আউটসাের্সিংয়ে নিযুক্ত ব্যক্তি পাবেন মাত্র ৮,৯৮৩ টাকা ৫৯ পয়সা! লেভেল ১১-তে বেতন ১৭,০৬৮ টাকা ৮২ পয়সা। অথচ সমযােগ্যতা এবং সমকাজে সরকারি কর্মীর মূল বেতনই ন্যূনতম ৩৭,৬০০ থেকে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ টাকা। ত্রিপুরা কর্মচারী সমন্বয় কমিটি এইচবি রােড-এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন বল বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের “সমকাজে সমবেতন’-এর নির্দেশেরও পরিপন্থী। ১৫ বছর পরে রাজ্যে কোনও সরকারি কর্মচারী খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
আরও পড়ুনঃ বাংলার জেলায় জেলায় বোমা তৈরির কারখানা! অমিত মন্তব্যের জবাব এড়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
জানুয়ারি মাসের শুরুতে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ ঘোষণা করেন যে তাঁদের সরকার মোট ৬,৯৩৯ টি চাকরি দিয়েছে, যার মধ্যে ২,৭৩৩ টি স্থায়ী চাকরী এবং ২,২৫০ টি চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান ছিল। আরও, ১,৯৫৬ সরকারি চাকরি আউটসোর্স করা হয়েছে। অথচ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব দাবি করেছিলেন যে, তাঁদের সরকার ৩২ মাসে ২৩,০০০ চাকরি দিয়েছে। অর্থাৎ রতন লাল নাথ এবং মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব দুজনের কথা পরস্পর বিরোধী।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনা করা হয় সেসময়। ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য সম্পাদক নবরুন দেব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে একমাস আগে মুখ্যমন্ত্রী এই রাজ্যে ১৮ হাজারেরও বেশি সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি করেছিলেন। বিরোধীরাও রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেছিল যে মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রীরা নিজেরা ঠিক জানেন না যে রাজ্যে তাদের শাসনকালে ঠিক কত সরকারি পদে নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় সরকারি চাকরি ব্যবস্থাটিরই পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটতে চলেছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584