নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ
মুম্বই হাইকোর্ট গত শুক্রবার রায় দিয়েছে সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া সার্চ করলে তা গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হিসাবে দেখা হবে। আদালত আরও জানিয়েছে, এরকম ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটলে, অর্থাৎ সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া সার্চ করলে অভিযুক্ত কর্মীকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।
ডিভিশন বেঞ্চের জাস্টিস টিভি নালাওয়াডে এবং ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চের জাস্টিস এসএম গভহানে, ড্রাইভার জ্ঞানীশ্বর তোডমালের দায়ের করা একটি ফৌজদারি মামলার শুনানি করছিলেন।
প্রসঙ্গত, আহমেদনগরের নেওয়াসা পুলিশ স্টেশন থেকে ২০১৮ সালের ৫ ও ৬ মে, রাত ২ টা নাগাদ জ্ঞানীশ্বর তোডমালের বাড়ি সার্চ করা হয়েছিল কোনও সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই। আবেদনকারী জ্ঞানীশ্বরের মতে, পুলিশ রাত দুপুরে বাড়িতে এসে সার্চ করতে থাকে কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়াই।
এমনকি ভিত্তল গাইকোয়াড নামের এক পুলিশ কনস্টেবল একটি দেশি পিস্তল তার বাড়িতে রেখে, সেটার ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার লক্ষ্যে ছিল। কিন্তু আবেদনকারী যথেষ্ট সচেতন থাকায় সেই পিস্তলটি ওই কনস্টেবল জুতসই জায়গায় রাখতে পারেনি।
আবেদনকারী আরও জানিয়েছে, তার বাড়ি ছাড়ার সময় পুলিশ কর্মীরা তাকে মিথ্যে কেসে ফাঁসানোর হুমকি দেয়, যা ভারতের সংবিধানের ২১ নং ধারা অনুযায়ী ভিত্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করা।
আরও পড়ুনঃ প্রয়াত কিংবদন্তি ইংরেজ ক্রিকেটার বব উইলিস
২০১৮ সালের ৭ মে তে আবেদনকারী ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের একটি কপি জেলা পুলিশ সুপার এবং মানবতাধিকার কমিশনের কাছেও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, আবেদনকারী দাবি করেছেন।
আবেদনকারী ২০১৮ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। তবুও এই কার্যক্রম চলাকালীন জেলা পুলিশ সুপারের একটি চিঠি আহমেদনগর আদালতে দেখানো হয়েছিল এবং তদন্তের জন্য উপ-বিভাগীয় পুলিশ অফিসারকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু, উচ্চতর পুলিশ কর্মকর্তাদের গৃহীত পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে, আবেদনটি খারিজ করা হয়েছিল।
আহমেদনগরের পুলিশ সুপার, পূর্বোক্ত আবেদনের উত্তরে একটি হলফনামা দাখিল করেছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে ২০১৪ সাল থেকে ওই অঞ্চলের অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। এরকম ১৬ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে শুধুমাত্র ওই অঞ্চলেই।
আরও পড়ুনঃ শিশু মৃত্যু ঘিরে উত্তাল দাসপুর, ক্ষোভে পথ অবরোধ
এই কথার সূত্র ধরে পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন যে বিভিন্ন অসামাজিক ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকার জন্য অনেক অভিযুক্তই তাদের বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র গচ্ছিত রাখত। পুলিশকর্মীরা সেই সন্দেহেই আবেদনকারীর বাড়িতে সার্চ অভিযান চালায়। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটি একটি সিক্রেট মিশন ছিল তাই পুলিশকর্মীদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট ছিল না।
এই পুরো বিষয়টি নিয়ে ভালমতো ভাবনা-চিন্তা করে কোর্ট জানায়, সিআরপিসি-র ১৬৬ নং ধারার বিধান অনুযায়ী কোনও এলাকা সার্চ করতে যাওয়ার আগে, সেই এলাকার স্থানীয় পুলিশ স্টেশন ইন-চার্জের অনুমতিপত্র প্রয়োজন হয়। এরকম বিষয়ে সিআরপিসি-র ১৬৫ নং এবং ১৬৬ নং ধারার বিধান প্রয়োজন। উক্ত কেসটিও এই ধারার মধ্যেই পড়ে।
এরপরে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের ভিত্তিতে – ‘স্টেট ভি রেহমান’ (এআইআর ১৯৬০ এসসি ২১০) শীর্ষক মামলায় অ্যাপেক্স কোর্ট দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে যে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াগুলি যাতে নির্বিচারে সম্পন্ন না হয়, সেক্ষেত্রে শক্তির ব্যবহারের উপর কঠোর বিধিবদ্ধ শর্ত আরোপ করা হবে। তবে জরুরী অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুসন্ধান সার্চ প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করা হবে যখন সমস্যাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এমতাবস্থায় পুলিশকে অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়ে সিআরপিসির ১৬৫ ধারা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আড়াই মাস ধরে বন্ধ মিড-ডে মিল
অ্যাপেক্স কোর্ট পূর্বোক্ত মামলায় উল্লেখ করেছিল যে সিআরপিসির ১৬৫ (১) নং ধারার ক্ষেত্রে এই বিষয়ে নজর রাখা বাধ্যতামূলক, তাই এই নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত। সুতরাং, কোনও বাড়িতে প্রবেশের আগে, তদন্তকারী অফিসারকে সেই জিনিসগুলি লিখিতভাবে নির্দিষ্ট করতে হবে যার জন্য অনুসন্ধান করা হবে এবং তার জন্য আগে থেকেই নিশ্চিত থাকতে যে জিনিসগুলি সেই বাড়িতেই পাওয়া যাবে।
আদালত সেইদিনই রাত ২ টায় পুলিশকে কিছু গোপন তথ্য জানিয়েছিল, যার ভিত্তিতে সকাল ১১ টায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল। তবে আদালত এও উল্লেখ করে- এই তথ্য থেকে তথ্যদাতার নাম প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই এবং প্রাপ্ত তথ্যের রেকর্ড তৈরি করা পুলিশের দায়িত্ব। এই জাতীয় আদালত গ্রাহ্য অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য থানার ডায়েরিতে নথিভুক্ত করা প্রয়োজন।
পুলিশ অফিসাররা যখন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চলে যায়, তাদের স্টেশন ডায়েরিতে তাদের চলাফেরা সম্পর্কে একটি এন্ট্রি করা প্রয়োজন। বর্তমান ক্ষেত্রে আবেদনকারীর রেকর্ডটি থেকে জানা যায় যে উত্তরদাতাদের বেশিরভাগই ওই রাতে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিল।
আরও পড়ুনঃ দুঃস্থ চা-শ্রমিক পরিবারকে কম্বল বিতরণ আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের
গোটা ঘটনাটিকে পর্যালোচনা করে আদালত এই পুলিশি পদক্ষেপকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে এবং সেই সাথে জানায়, এই জাতীয় অবৈধ পদক্ষেপের জন্য রাজ্য আবেদনকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে দায়বদ্ধ। পুলিশের এই পদক্ষেপ কেবল গোপনীয়তারই লঙ্ঘন ছিল না, তার সাথে এই পদক্ষেপটি পুরো পরিবারের কাছে অপমানজনকও ছিল।
বেঞ্চ আরও উল্লেখ করে যে, প্রশাসনিক যুক্তি, আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ন্যায়সঙ্গত উপায়ের বিষয়ে তদারকি করে না। বেঞ্চের মতানুযায়ী, দুর্ঘটনার জন্য চালকের বিরুদ্ধে আনা মামলায়, প্রমাণ ছাড়া এমন দাবি করা যায় না যে পূর্বে এই পেশায় থাকাকালীন তার অপরাধমূলক পটভূমি ছিল। অনেক সময়ই অনেক চালক এ জাতীয় মামলা মোকদ্দমার মুখোমুখি হন।
তাই, আদালত আবেদনকারীকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২৫,০০০ টাকা জমা দেওয়ার জন্য সরকারি নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও, পুলিশ আধিকারিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584