শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
অবশেষে ফুলবাগান কাণ্ডে খুনি অমিত আগরওয়ালের অস্ত্র জোগাড়ের রহস্যের পর্দাফাঁস করতে সক্ষম হল পুলিশ। জানা গিয়েছে, নয়াবাদে অমিত আগরওয়ালের শ্বশুরের কেনা একটি ফ্ল্যাট ছিল। যেটির চাবি থাকত অমিতের কাছেই। বহুদিন আগে থেকে সেই ফ্ল্যাটেই অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিল অভিযুক্ত, এমনটাই মনে করছে পুলিশ। একই সঙ্গে অমিতের হিটলিস্টে স্ত্রী শিল্পীর ভাই অর্থাৎ শ্যালকও ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
সোমবার কাঁকুরগাছির রামকৃষ্ণ সমাধি রোড অক্ষরা আবাসনে নিজের শাশুড়িকে গুলি করে খুন করে অমিত আগরওয়াল। এদিনই সে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় এসেছিল ছেলেকে নিয়ে। আসার আগে স্ত্রী শিল্পী আগরওয়ালকেও খুন করে।
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ছেলেকে হুগলির উত্তরপাড়ায় দাদার বাড়িতে রেখে সোজা শ্বশুরবাড়িতে এসেছিল অমিত। তদন্তকারীরা জানতে পারছেন, বিমানে করে সে অস্ত্র আনেনি। তাহলে কি পিস্তল কী ভাবে পেয়েছিল, এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুনঃ অনাস্থায় ধৈর্য্যচুতি! বাসে উঠলেই ১০ টাকার হিসাবে ১২টি রুটের বাস মালিকদের ভাড়াবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত
পুলিস সূত্রে খবর, বছর সাতেক আগে নয়াবাদে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন অমিতের শ্বশুর। সেটি তিনি দিয়েছিলেন মেয়ে-জামাইকে। সেই ফ্ল্যাটের চাবি অমিতের কাছেই থাকত। মাঝেমধ্যেই সে ওই ফ্ল্যাটে আসত। সেখানেই সে লকডাউনের আগে মার্চ মাসে পিস্তল লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল, এমনটাই মনে করছে পুলিশ। কাঁকুরগাছিতে শ্বশুরবাড়িতে আসার আগে নয়াবাদ থেকে ওই পিস্তলটি সে নিয়ে যায়। তবে অস্ত্র জোগাড়ের বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকে। জানা গিয়েছে, লকডাউনের আগে অমিত বিহার, ঝাড়খণ্ডেও গিয়েছিল। সেখান থেকেই তিনি এই ‘মুঙ্গেরি অস্ত্র’টি জোগাড় করেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, অমিতের হিট লিস্টে ছিল শ্বশুরবাড়ির গোটা পরিবার। সোমবার হত্যালীলা চালানোর আগে সে স্ত্রী শিল্পীর ভাই বিনীত ঢনঢনিয়াকে কলকাতায় আসার জন্য বহুবার ফোন করে। কিন্তু বিনীত কর্মসূত্রে থাকেন গুরুগ্রামে। সে কথা অমিত প্রথমে জানত না। অমিত তাকে কলকাতায় আসতে বলে। তার পরিকল্পনা ছিল, শ্বশুরের ফ্ল্যাটেই শ্যালক সহ শ্বশুর শাশুড়ি সকলকে শেষ করে দেওয়া।
আরও পড়ুনঃ দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপোরে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২ জঙ্গি নিকেশ
অমিতের ফোন আনলক করার পর পুলিশ জানতে পেরেছে, সোমবার বিকেল ৫.৫০-৬টার মধ্যে শাশুড়িকে গুলির করার পর তিন বন্ধুকে ফোন থেকে মেইল পাঠায় অমিত। সেখানে নিজেকে ‘দোষী’ বলে উল্লেখ করে সে। কিন্তু খুন বা আত্মহত্যা করতে চলেছি, এমন কিছুর উল্লেখ ছিল না। পুরোনো দিনের কথা লিখেছিল, কোথাও রাগ, অভিমান আর হতাশার কথাও ছিল। পুলিশের ধারণা, ওই সব লেখা খুন করার পর দাঁড়িয়ে কারোর পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। আগে থেকেই লেখা আগেই ড্রাফট-এ ছিল। শাশুড়িকে খুনের পর শুধু মেল সেন্ট করে ৫.৫০ মিনিটে। তারপরই সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বিমানবন্দরের সিসিটিভির ফুটেজ অনুযায়ী গত সোমবার বেঙ্গালুরু থেকে ফেরার পর অমিত তাঁর ছেলেকে বন্ধুর সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। বিকেল ৫টা ০৪ মিনিটে লাক্সারি ট্যাক্সি ধরে এসে মানিকতলায় বেঙ্গল কেমিক্যালের সামনে নামেন। প্রথমে লুকিয়ে যান শ্বশুরের কেনা ফ্ল্যাটে। সেখানেই ব্যাগের মধ্যে রাখা ছিল পিস্তলটি। সেটি নিয়ে সম্ভবত হেঁটেই ফুলবাগানে শ্বশুরবাড়িতে যান।
পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলায় অভিযুক্ত অমিত আগরওয়ালের মৃত্যু হলেও তার বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দেবে। কিন্তু অভিযুক্তের মৃত্যু হওয়ায় মামলার কোনও শুনানি হবে না। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরুর শিবরামপুর থানায় অমিতের স্ত্রী শিল্পী আগরওয়ালকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। বুধবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ফুলবাগানের ফ্ল্যাটের দরজার ভিতর আটকে যাওয়া বুলেট উদ্ধার করেছেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584