জমিদান করে নিম্নমানের বাঁধ,নির্মান বন্ধ করল ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী

0
76

সিমা পুরকাইত,দক্ষিন ২৪ পরগনাঃ

স্বাধীনতার পর আজও সেখানেই আছে দক্ষিন সুন্দরবনের বুধাখালি গ্রামের কংক্রিটের নদীবাঁধ।প্রত্যাশা প্রতিশ্রুতিতে একসূত্রে গাঁথা হাত হাতুড়ি কাস্তে।তেভাগা আন্দোলনের রক্তের দাগ আজ হয়ত বিলীনের পথে,কিন্তু মুড়িগঙ্গা নদীর নোনা জলের আতঙ্ক আজও পিছু ছাড়েনি।

নিজস্ব চিত্র

বাঁধের কাজ দেখে স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে নামখানা ব্লকের কাকদ্বীপ থানার বুধাখালি গ্রামে।নিম্ন মানের ইমারতি দ্রব্য দিয়ে বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু করায় কাজ আটকে বিক্ষোভ দেখায় কয়েকশো গ্রামবাসী। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না হওয়ায় আজ সকাল থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাঁধের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।দক্ষিন সুন্দরবনের নামখানা ব্লকের কাকদ্বীপ থানার বুধাখালি গ্রামের ঘটনা। বুধাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯ টি বুথের মধ্যে পাঁচটি বুথে উত্তর থেকে দক্ষিন বরাবর বিস্তৃত মুড়িগঙ্গা নদী।নদীর নোনা জলে দিন গুনতে হয় প্রতিনিয়ত।বিশেষ করে বর্ষা মুরশুমে।

চন্দন দাস,মহকুমা শাসক নিযুক্ত পরিদর্শক। নিজস্ব চিত্র

পরিবর্তনের পর ২০১১ সালে ঠিক হয় কংক্রিটের বাঁধ নির্মানের।সেই মতো বুধাখালির ২৩০ ও ২৩১ নং বুথের প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে করে শুরু হয় ছশো মিটার বাঁধ।দক্ষিনে গবিন্দ ভান্ডারীর বাড়ি থেকে উত্তরে বিনন্দন মাইতি বাড়ি প্রর্যন্ত শুরু হয় কংক্রিটের বাঁধ।দীর্ঘ নদী বাঁধে সেচ দফতরের দায়িত্বে থাকা সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের আর্থিক সহযোগে শুরু বাঁধের কাজ।সাত আট মাস ধরে কাজ শুরু হলেও এখনও সম্পূর্ন হয় নি কংক্রিটের বাঁধটি।ফলে আগের মতো আবারও আতঙ্কে দিন গুনছেন চারহাজার বাসিন্দা।নদী বাঁধের জন্য সরকারি সিড্যুল অনুযায়ী ঠিক হয় সিলিন্ডার সশেস,অর্থাৎ যে বাঁধ থাকবে জলে। নোনা জলের ঢেউয়ে যাতে না ভাঙে বাঁধের উপরের অংশ।তা সম্পূর্ন হওয়ার পর সেখান থেকে ড্রাই পিচিং বা ব্লক পিচিং বাঁধ দেওয়া হবে।যা জল রোধ করবে গ্রামকে।সিলিন্ডার সশেস নির্মান হবে তার দিয়ে।তার ভিতরে থাকে ইঁট।নদীর জলের স্রোত রোধ করবে।এরপর বালি সিমেন্ট ইঁট দিয়ে তৈরী হবে ড্রাই পিচিং বা ব্লক পিচিং বাঁধ।এই কাজগুলি সিড্যুল অনুযায়ী করা হবে এক নম্বর ইমারতি দ্রব্য দিয়ে।যা নিয়ে ঘটে বিপত্তি।নির্মীয়মান বাঁধের দৈর্ঘ্য ছশো মিটার।চওড়া ছয় মিটার লম্বা দশ মিটার। একদিকে নিম্ন মানের ইমারতি দ্রব্য দিয়ে কাজ।অন্যদিকে পাশে থাকা জলাজমির মাটি খুঁড়ে নির্মিত বাঁধের নির্মীয়মান কাজ করা। যার স্থায়ীত্ব নিয়ে সন্দিহান বুধাখালির গ্রামবাসী।বাসিন্দাদের অভিযোগ যে ভাবে কাজ হয়েছে তা নদীর টেউয়ে সম্পূর্ন ভাবে ভেঙে যাবে।কারন দেশী বিদেশী ছোট বড় জাহাজ ট্রলার চলে এই বাঁধের কূল ধরে।ফলে প্রতিবছরের মতো আবার বর্ষায় প্লাবনের আশঙ্কায় দিন গুনছেন তার।

সুনীত জানা,স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য।নিজস্ব চিত্র

এই বাঁধ নির্মানে এলাকার মানুষ জমি দান করেছে।প্লাবনের ভ্রূকুটি থেকে বাঁচতে বাঁধ নির্মানে তাদের দান,বাসিন্দাদের একটাই দাবি ভালো কাজ করে কংক্রিটের ইমারতি বাঁধ নির্মাণ করুক সরকার।নিম্নমানের ইমারতি কথা স্বীকার করেছেন,বাঁধ নির্মানের দায়িত্বে থাকা শ্রীমা কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার।নিউজফ্রন্ট প্রতিনিধির কাছ থেকেই গ্রামবাসীদের অভিযোগ শুনে,খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ পাত্র।

ধীরেন্দ্রনাথ পাত্র,সহকারী সভাপতি,নামখানা পঞ্চায়েত সমিতি।নিজস্ব চিত্র

তিনি জানান সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা একাধিক জায়গাতে বাঁধের কাজ করছেন।যে ঠিকাদার কাজ করছে তাকে ডেকে সিড্যুল অনুযায়ী কাজ করতে হবে। অন্যথায় কাজ করা যাবে না।একটি জুনিয়ার হাইস্কুল,দুটি প্রাইমারি তিনটি এসএসকে স্কুল রয়েছে গ্রামে।

শ্রীখন্ড দাস,ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।নিজস্ব চিত্র

ধানচাষের পাশাপাশি অর্থকরি ফসল পান চাষে এগিয়ে।ফলে বাঁধ সম্পূর্ণ না হলে,যে আবারও ক্ষতির মুখে পরবে এলাকাবাসী তা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুনঃ দাঁইহাট পৌর এলাকায় পানীয় জল সমস্যার সুরাহা করতে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here