ভাড়া বাড়াতে অনড় রাজ্য, চালু হয়েও বন্ধ ৪০ রুটের বাস পরিষেবা

0
52

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

লকডাউনের পর থেকেই বেসরকারি বাস সংগঠনের মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানালেও বহুদিন ধরেই তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে রাজ্য। ভাঙা টালা ব্রিজ, যাত্রী কম এবং পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি বলে বেসরকারি বাস সংগঠনের মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধির দাবি তুললেও পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি, কিছুদিনের মধ্যে লোকাল ট্রেন চালু হলেই সমস্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

তাই বারবার লোকসানের খতিয়ান দেখিয়েও কোন সদর্থক বার্তা না পাওয়ায় শনিবার সকাল থেকে শহরে বন্ধ হয়ে গেল প্রায় ৪০ টি রুটের বেসরকারি বাস-মিনিবাস। এগুলোর বেশিরভাগই উত্তর শহরতলির সঙ্গে উত্তর কলকাতার যোগাযোগ রক্ষা করে।

Bus Dipo | newsfront.co
প্রতীকী চিত্র

তবে সরকারি বাস রাস্তায় ছিল প্রচুর। যা দেখে অনেক যাত্রী এটাও দাবি করছেন, এ শহরের বাস পরিষেবা ধীরে ধীরে সরকারি হাতে নেওয়ার পথে হাঁটছে রাজ্য। প্রসঙ্গত অন্যান্য রাজ্যে বা মহানগরীতে বেশি সংখ্যা সরকারি বাস চললেও কলকাতায় বেশি চলে বেসরকারি বাসই। কিন্তু রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং সরকারি বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়া অন্য সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে দাবি অনেকের।

আরও পড়ুনঃ বেসরকারি হাসপাতালের বিল নিয়ে কড়া অবস্থান, নজরদারিতে কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ রাজ্যের

বাস মালিকদের সঙ্গে পরিবহণ দফতর নিয়োজিত রেগুলেটরি কমিটি বৈঠক করলেও সেখানে বাসভাড়া বৃদ্ধির আলোচনার বদলে অন্য উপায়ে কীভাবে আয় বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে কমিটির সদস্যরা জোর দিচ্ছেন বলে অভিযোগ বাস মালিক সংগঠন কর্তাদের। কমিটির সদস্যরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, সুদীর্ঘ লকডাউনে মানুষের আয় কমেছে, অনেকে জীবিকা রুজি-রোজগার হারিয়েছেন।

এই অবস্থায় গণপরিবহনে অতিরিক্ত চাপ দিলে মানুষের পরিস্থিতি আরো শোচনীয় হবে। কিন্তু অন্যদিকে বাস মালিক সংগঠনের কর্তাদের দাবি, তাদের গাড়ি এবং আনুষঙ্গিক খরচ সহ আরও বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই অবস্থায় তাদের পক্ষে বাস চালানো সম্ভব হবে না। তার জবাবে কমিটির সদস্যদের দাবি, লোকাল ট্রেন চালু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ লকডাউনে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবার বিক্ষোভ অশোক হল গার্লস স্কুলের অভিভাবকদের

বাস মালিকদের দাবি, ট্রেন চালু হলে কীভাবে যাত্রীচাপ সামাল দিতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ঠিক হয়েছে দুটি বাসের সময়ের ব্যবধান কমিয়ে ঘনঘন বাস চালাতে হবে। যাতে যাত্রীদের বেশিক্ষণ বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে না হয়। পাশাপাশি এক বাসে ভিড় না হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাসের ট্রিপ বাড়ানোর দাওয়াই দিয়েছে পরিবহণ দফতরের কর্তারা। তাদের দাবি, ট্রিপ বাড়লে বাস মালিকদের আয় বাড়বে। তাই
বাস ভাড়া না বাড়িয়ে অন্য উপায়ে এরকম ভাবে আর কি কি ভাবে আয় বৃদ্ধি করা যায় সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে প্রস্তাব জমা দিন।

বাস মালিক সংগঠনের দাবি, বাস ভাড়া বাড়ছে না শুনেই ২৩০, ২১৪, ২১৪এ, ৩০এ, ৩০এ/১, ২০২, ৭৮, ৭৮/১, ৩২এ, ২৩৪, ৩সি/১-সহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রুটের বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লকডাউন শেষে অফিস কাছারি খোলার পর বাস কমে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। তবু এই কয়েকদিন কিছু বাস চলছিল। এদিন থেকে তাও বন্ধ হওয়ায় সোমবার অফিস খোলার দিন সমস্যা আরও বাড়বে।

ওয়েস্টবেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বসু বলেন, “সরকারের উপর আমাদের আস্থা আছে। দেখা যাক কি হয়! তবে ভাড়া না বাড়ালে মালিকদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে।” বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভাড়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি। ট্রেন চালু হলে ঘনঘন বাস চালানোর কথা বলেছে সরকার। সেক্ষেত্রে ট্রিপের সংখ্যা বাড়বে।’ এখন রাজ্য পরিবহন দফতর এবং বাস মালিক সংগঠনের দড়ি টানাটানিতে আদতে কার জয় হয়, সেটা দেখার অপেক্ষায় তামাম শহরবাসী।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here