শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
আচমকাই বাড়িতে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ইছাপুরের নেতাজিপল্লীর বাসিন্দা উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী ছাত্র শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তারপর ১০ জুলাই ভোর পাঁচটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে ১৭ বছরের ওই কিশোরকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান তার বাবা-মা।
কামারহাটি ইএসআই হাসপাতাল, মিডল্যান্ড নার্সিং হোম, সাগর দত্ত হাসপাতাল এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, কোনও হাসপাতালই ভর্তি নিতে রাজি হয়নি ওই কিশোরকে। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে কিশোরের মা আত্মহত্যার হুমকি দিলে বিকেলে ভর্তি নেয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ।
কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় ওই কিশোর। পরিবারের আফসোস, একটু আগে চিকিৎসা পেলে হয়তো বেঁচে যেত শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাদের দাবি ছিল, কোনও পরীক্ষা না করে মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের একটি চিরকুট শেষ করে দিয়েছে তাদের সন্তানকে। ওই চিরকুটে করোনা পজিটিভ লেখা থাকার কারণে তাদের সন্তানকে কোনও হাসপাতাল ভর্তি নিতে চায়নি। অবশেষে ৬১ দিন পর যেন সুবিচারের মুখ দেখলেন শুভ্রজিতের বাবা মা।
এই মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল স্বাস্থ্য কমিশনে। বৃহস্পতিবার ছিল সেই মামলার শুনানি। এদিন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি শুনানিতে অংশ নেন মৃত শুভ্রজিতের বাবা ও মা। শুভ্রজিতের পরিবারের পক্ষে আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টপাধ্যায় আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। মিডল্যান্ড নার্সিং হোমের পক্ষেও একজন আইনজীবী শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্য কমিশনে বেসরকারি হাসপাতালের বিল মুকুবের বেআইনি আবদার রোগীর পরিবারের
শুনানিতে বিচারক অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হন। তিনি ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কমিশনে এক সপ্তাহের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা জমা ও এই মামলার অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি জমা করতে বলেন।
এদিন প্রথমে শুভ্রজিতের মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায়কে বক্তব্য রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি নিজের চোখের সামনে দেখা ছেলের মৃত্যুর ঘটনা বিচারকের সামনে তুলে ধরেন। ধৈর্য্য সহকারে বিচারক এদিন শুভ্রজিতের সঙ্গে যে ব্যবহার বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই সময় করেছিল, সেই ঘটনা শুভ্রজিতের মায়ের কাছ থেকে শোনেন।
আরও পড়ুনঃ করোনা-আক্রান্ত কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা, মৃত্যু এএসআইয়ের
শুভ্রজিতের মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের হাতে লেখা একটি চিরকুট আমার ছেলেকে শেষ করে দিল। আমার ছেলের শরীরে জ্বর ছিল না। কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে থার্মাল স্ক্রিনিং হয়েছিল, তাতে আমার ছেলের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ধরা পড়েনি। কিন্তু ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ মিনিটে কি পরীক্ষা করল বুঝিনি, করোনা বলে রিপোর্ট দিয়েছিল। তারপর তো মরেই গেল আমার একমাত্র সন্তান।’
তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা আর কিছু না জানি, তবে এটুকু জানি যে ৫ মিনিটে করোনা পরীক্ষা হয় না। ওই বেসরকারি হাসপাতালে জন্য আমার ছেলেকে কোথাও ভর্তি করতে পারিনি। এখন সারা ঘর ওর স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছি।’
কলকাতা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরাও স্বীকার করেন, আরও আগে চিকিৎসা শুরু করা গেলে প্রাণে বেঁচে যেতে পারত ওই কিশোর। খাতায় কলমে এখনও কোভিড পজিটিভ হিসাবে ওই কিশোরের নাম ছিল না স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। শুধুমাত্র সমন্বয়ের অভাবে এবং হাসপাতালে গাফিলতির জেরে প্রাণ হারাতে হয় কিশোরকে। তবে এদিনের রায়ে কিছুটা হলেও খুশি শুভ্রজিতের বাবা মা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584