দলমার টানে প্রকৃতির কোলে

0
835

রেশমি গুপ্তা

‘দলমা’এই নাম কেমন একটা শুনতে লাগছে? তাই না! পশ্চিম বাংলার মধ্যে এই নামের কোন জায়গা আদৌ আছে কি না, তা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে না না প্রশ্ন। হ্যাঁ, এই সুন্দর নামের জায়গাটা আমাদের এই বাংলাতেই রয়েছে।

hill Dalma | newsfront.co
দলমা পাহাড়। ছবিঃ প্রতিবেদক

যারা নির্জনতা পছন্দ করেন, সেই সব পর্যটকদের জন্য একটা অনবদ্য জায়গা করে নিয়েছে এটি। পাহাড়ে ঘেরা, সবুজ গাছে ঢাকা একটা ছোট্ট গ্রাম। যেটি আজ সবার কাছে “দলমা” নামেই পরিচিত।

Dalma hill | newsfront.co
দলমা পাহাড় ঘেঁসে বয়ে যাওয়া নদী। ছবিঃ প্রতিবেদক

কোথায় যাবেন?

শীতের সকালে হাল্কা ঠাণ্ডা বাতাসকে সাথে নিয়ে হাওড়া থেকে উঠে পড়ুন হাওড়া- বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে। সেটাতে করে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে নেমে যাবেন টাটানগর স্টেশনে। তারপরই স্টেশনের বাইরে ছোট বড়ো নানা ধরনের গাড়ি। গাড়িগুলোতে উঠলে আপনাকে কোন না কোন রিসর্টে ঠিকই পৌঁছে দেবে।

Dalma resort | newsfront.co
দলমার রিসর্ট। ছবিঃ প্রতিবেদক

গাড়িতে উঠলেই আপনি দেখতে পাবেন, শহুরে রাস্তা আস্তে আস্তে মিশে গেছে কাঁচা মেঠো মাটিতে। একটা মজার বিষয় এখানে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আপনি আচমকাই অবচেতন হয়ে যেতে পারেন।
কারন, দু্ধারে পাহাড়ের গায়ে সবুজ ঘন বন। আর সেই বনের গা ঘেঁসে বয়ে চলা উন্মাদ নদী, যেন প্রকৃতির প্রেমে আত্মহারা হয়ে বয়ে চলেছে অজানা পথের উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে লাভার সৌন্দর্য

কোথায় যাবেন?

Ghatsila Resort | newsfront.co
ঘাটশিলার রিসর্ট। ছবিঃ প্রতিবেদক

এখানে লাল মাটির রাস্তা এঁকে বেঁকে নিজের মত গিয়ে মিশেছে গ্রামের রাস্তায়। গ্রামের মেঠো পথের দু’ধারে শুধু কাঁচা পাকা ধানের ক্ষেত, ছোট বড় প্রচুর মাটির বাড়ি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাচ্চাদের স্কুল ইত্যাদি। মাটির এই রাস্তা শেষ হতেই দেখতে পাবেন ছোট বড় নানা ধরনের রিসর্ট।

তবে, একটা কথা বলে রাখা ভালো। এখানের রিসর্টগুলো কিন্তু কাঁচা মাটি দিয়ে তৈরি। কিছুটা দূরে দূরে রয়েছে এক ও দু’কামরার ঘর, আর তার মাঝেই রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটা পুকুর। সেই পুকুরগুলোর মাঝখানে ফুটে আছে নানা ধরনের শ্যাপলা ও পদ্ম।

শুধু যে পদ্ম আর শ্যাপলার সমাহার, তা কিন্তু না। পুকুরের জলে ভেসে থাকতে দেখা যায় প্রচুর মাছকেও। পাঁচ একর জমির উপর তৈরি রিসর্টটিতে আসলে দলমা পাহাড়ে ঘেরা অপরূপা বিশ্বকে আপনি মুহূর্তের মধ্যে দেখতে পাবেন।

এই দলমা এলাকা থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে সাঁওতালদের অঞ্চল। সেই অঞ্চলে একাধিক জনবসতি না থাকলেও, কয়েকটা ছোট ঘর নিয়ে গড়ে উঠেছে একটা ছোট সাঁওতালদের গ্রাম ‘কাসিডি’।

সেখানে গেলে আপনি ওদের জনজীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। একবার যদি ওদের সাথে কথা বলতে শুরু করেন, মুহুর্তের মধ্যে কাছের হয়ে যায় মানুষগুলো। এই পৌষ সংক্রান্তিতে বাঙালিদের যেমন অতি প্রিয় উৎসব ‘নবান্ন’, ঠিক তেমনই এখানে ‘টুসু’ খুব জনপ্রিয় একটি উৎসব। আর ফাল্গুন মাসে হয় ‘বাহা’।

লোক মুখে শোনা গেল এই দু’টি উৎসবই নাকি সাঁওতালদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। এবার কাসিডি থেকে বেড়িয়েই কিছুটা দূরে আছে পাথরভাঙা গ্রাম। নড়োয়া পাহাড় লাগোয়া গ্রামটি পুরো সবুজে ঘেরা। পাহাড়ের নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গড়া নদী। এই নদীটি গালুড়ির কাছে এসে সুবর্ণরেখা এসে মিশেছে। জানা গেছে, এই পাহাড়ে নাকি রয়েছে ইউরেনিয়ামের খনি। তারপর কিছুটা গেলেই আরও একটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। যেটি ঘাটশিলা নামে পরিচিত।

আরও পড়ুন: মুজনাই নদী তীরে, প্রকৃতির মাঝে শিশুর খেলা

কোথায় থাকবেন / কি খাবেন ?

দলমার রিসর্টে আপনি ছোট বড় সবধরনের রুম পাবেন। এক কামরা বিশিষ্ট ঘরের ভাড়া আনুমানিক হাজারের মধ্যেই পেতে পারেন। এসি নিলে বেশি পড়বে আর সাধারন নিলে কমের মধ্যে হয়ে যাবে। দ্বি-শয্যা বিশিষ্ট ঘরের ভাড়া আনুমানিক ২০০০ টাকা প্রতি দিন।

সকালের টিফিন থেকে শুরু করে রাতের নৈশভোজ, সবই পাবেন এক ছাদের তলায়। তবে আগে থেকে বলে রাখা ভাল এখানে আসতে গেলে কিন্তু আগে থেকে রিসর্ট বুকিং করে রাখতে হয়। তবে কথা দিচ্ছি যে সকল পর্যটকরা একটু কাল্পনিক, তাদের জন্য এখানকারের রিসর্ট একেবারে অন্যতম।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here