স্পাইওয়্যার এর নজরবন্দী ভারতীয় সাংবাদিক-সমাজকর্মীরা, জানাল হোয়াটসঅ্যাপ

0
47

নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ

সোশাল মিডিয়ার সাবস্ক্রাইবারদের ব্যক্তিগত নথি, তথ্য যে সম্পূর্ণরূপে গোপন নয়, সে নিয়ে বরাবরই নেটিজেনদের মধ্যে বিতর্ক হয়ে এসেছে। জানা গিয়েছে, একটি ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারতীয় সাংবাদিক ও মানবতাধিকারকর্মীদের উপর নজর রাখত।

whatsapp Surveillance to indian journalist and social worker | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

সর্বভারতীয় একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সানফ্রানসিসকোর একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কোর্টে হোয়াটসঅ্যাপ সংস্থা একটি ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার সংস্থার উপর মামলা দায়ের করেছে, যেখানে বলা হয়েছে ইজরায়েলি এনএসও গ্রুপ প্রায় ১৪০০ জন হোয়াটসঅ্যাপ উপভোক্তাকে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরবন্দী করে।

পেগাসাস স্পাইওয়্যার এক ধরনের স্পাইওয়্যার যা কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির ডিভাইস থেকে অন্য কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার ডিভাইসে তথ্য, নথি উক্ত ব্যক্তির অগোচরে পাঠিয়ে থাকে।

এর জন্য কোনও টার্গেটকে নিরীক্ষণ করে একজন পেগাসাস নিয়ন্ত্রককে আগে গ্রাহকের দ্বারা তার এক্সপ্লয়েট লিঙ্ক এ ক্লিক করতে হয়। এর ফলে গ্রাহক নিজের অজান্তেই নিজের ডিভাইসে পেগেসাস ইনস্টল করতে বাধ্য হয়।

পেগাসাস ইনস্টল করা মাত্রই গ্রাহক পেগাসাস নিয়ন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী নিজের ডিভাইস থেকে ব্যক্তিগত নথি, পাসওয়ার্ড, কন্টাক্ট লিস্ট, ক্যালেন্ডার ইভেন্ট, মেসেজ, লাইভ ভয়েস কল সরবরাহ করতে থাকে সেই পেগাসাস নিয়ন্ত্রকের কাছে। এই পুরো বিষয়টি সম্পন্ন হয় বহুল ব্যবহৃত মেসেজিং অ্যাপগুলির মাধ্যমে।

এমনকি পেগাসাস নিয়ন্ত্রক সেই গ্রাহকের ফোন ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়ে যায়। পেগাসাস ইন্সটল হয়ে গেলেই ডিভাইস (পড়ুন ফোন) এবং গ্রাহকের গতিবিধি এবং তার আশপাশের ঘটনার বিষয়েও অবগত হতে পারে সেই পেগাসাস নিয়ন্ত্রক।

সর্বভারতীয় সেই গণমাধ্যম থেকে আরও জানা যায়, গত মঙ্গলবার সানফ্রানসিসকোর যুক্তরাষ্ট্রীয় কোর্টে দায়ের করা মামলাটির বিষয়বস্তু ছিল– গ্রাহকের ফোন থেকে এক্সপ্লয়েট লিঙ্কটি ক্লিক করারও প্রয়োজন হয়নি, শুধুমাত্র একটি মিসড্‌ ভিডিও কল থেকেই টার্গেট এর প্রতিক্রয়া ছাড়াই তার ফোনে পেগাসাস সক্রিয় হয়ে যায়।

হোয়াটস্যাপ সংস্থা নজরবন্দী ভারতীয়দের পরিচয় এবং সঠিক যোগাযোগ নম্বর প্রকাশ করতে অস্বীকার করায় তাদের মুখপাত্র জানান যে, হোয়াটসঅ্যাপ এই সকল মানুষদের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং তাঁদের প্রত্যেকের সাথেই যোগাযোগ করা হয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপ মুখপাত্র জানান, ভারতীয় সাংবাদিক এবং মানবতাধিকারকর্মী, যাঁরা নজরবন্দী হয়েছেন তাঁদের সঠিক পরিচয় এবং নম্বর দিতে তারা অপারগ। তবে এটুকু বলা যায় যে এই পরিচয়পত্র ও ফোন নম্বরগুলি কোনও সাধারণ ব্যক্তিত্বের নয়।

তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, ভারতের অন্তত চব্বিশ জন শিক্ষাবিদ, আইনজীবি, দলিত মানবতাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিককে হোয়াটসঅ্যাপ মাধ্যমের দ্বারা যোগাযোগ করে সতর্ক করা হয় যে তাঁদের ফোন দুই সপ্তাহের জন্য মে ২০১৯ পর্যন্ত স্টেট অফ আর্ট এর নজরদারিতে ছিল।

এনএসও এবং কিউ সাইবার টেকনোলজি এর বিরুদ্ধে মামলায় হোয়াটসঅ্যাপ অভিযোগ দায়ের করে যে, সংস্থাগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যালিফোর্নিয়ার আইন ও হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবার শর্তাদি লঙ্ঘন করেছে।

হোয়াটসঅ্যাপ এর এই ধরণের অপব্যবহার নিষিদ্ধ বলে দাবি করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। তাদের দাবি, শুধুমাত্র মিসড কলের মাধ্যমেই এই স্মার্টফোনগুলি পেগাসাসের নজরবন্দী হয়েছে।

এই মামলায় আরও জানানো হয়, “আমাদের বিশ্বাস এই আক্রমণটি আরও একশো জন নাগরিকের ক্ষেত্রে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই এগিয়ে আসলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”

অন্যদিকে এনএসও গ্রুপ একটি বিবৃতিতে জানায়, যথাযথ যুক্তির ভিত্তিতে তারা এই সকল অভিযোগকে অস্বীকার করছে এবং এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তারা লড়াই চালাবে।

তারা আরও জানায় যে, তাদের প্রযুক্তি মানবতাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিকদের নজরবন্দীর জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয়। মে মাসে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে সন্দেহ উত্থাপিত হওয়ার পর এনএসও গ্রুপ জানিয়েছিল যে ১৯ সেপ্টেম্বর তারা একটি মানবাধিকার নীতি স্থাপন করে যা তাদের ব্যবসায় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় মানবাধিকার সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা করে।

এনএসও গ্রুপ দাবি করেছে পেগাসাস কেবলমাত্র সরকারি এজেন্সিগুলিতেই বিক্রি করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র পরীক্ষিত এবং বৈধ সরকারি এজেন্সিগুলিকেই তারা তাদের পণ্য ব্যবহারের লাইসেন্স দিয়ে থাকে।

এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব এ.কে.ভাল্লা-র করা ই-মেল এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ. পি. সভানি-র কাছে চাওয়া মন্তব্য এখনও উত্তরহীন। ২০১৮ র সেপ্টেম্বরে কানাডার সাইবার সিকিওরিটি গ্রুপ ‘সিটিজেন ল্যাব’ জানিয়েছিল, “আমরা ভারতসহ ৪৫ টি দেশে চিহ্নিত ৩৬ টি পেগাসাস নিয়ন্ত্রকের মধ্যে ৩৩ টি তেই এনএসও পেগাসাস সংক্রমণ পেয়েছি।”

তারা জানায় যে, আরও পাঁচটি নিয়ন্ত্রককে তারা চিহ্নিত করেছে যারা এশিয়ার দিকে টার্গেট করেছে। তাদের মধ্যে একজন নিয়ন্ত্রক ‘গঙ্গা’ নামের একটি পলিটিকাল থম বেসড ডোমেন ব্যবহার করছে। সিটিজেন ল্যাব আরবের মানবাধিকারকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে সন্দেহভাজনদের উপর নজর রেখেছে।

ঘটনাচক্রে, সাংবাদিক জামাল খাস্তগী-র হত্যা এবং ইস্তাম্বুলে দেশের দূতাবাসে তার মৃত্যুর পিছনে স্পাইওয়্যারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার সূত্র পেয়ে এনএসও গ্রুপ সৌদি আরবের সাথে তাদের চুক্তি বাতিল করে।

হোয়াটসঅ্যাপ এর সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে, তাদের প্ল্যাটফর্মের মেসেজগুলি অবিচ্ছিন্ন ও সুরক্ষিত হওয়ার পদ্ধতি চলাকালীন সমস্যাটি শুরু হতে পারে, যদি সেই মুহূর্তে কোনও ম্যালওয়্যারের জন্য ডিভাইসটিতে কোনও সমস্যা দেখা দেয়, সেই মুহূর্তেই প্রোগ্রামটি গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তা গ্রাহকের স্বাধীনতা এবং কখনও কখনও জীবনকেও বিপন্ন করে তোলে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here